দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুহাম্মদ আবদুর রহীম ইসলামাবাদী
৩৬০ আউলিয়া ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বৃহত্তর সিলেটে আগমন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজনের নাম হযরত শাহ সৈয়দ শামসুদ্দীন (রহ:)। হযরত শাহ জালাল মুজাররদ ইয়ামনী (রহ:) -এর অন্যতম সাথী শাহ সৈয়দ শামসুদ্দীন (রহ:) সৈয়দপুরে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর এক বংশধর হযরত মাওলানা সৈয়দ তখলিছ হোসাইন (রহ:)। তিনি শায়খুল ইসলাম কুতবে আলম মাওলানা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ:)-এর প্রথম খলিফা ছিলেন। সৈয়দ তখলিছ হোসাইন (রহ:) আপন পিতার প্রতিষ্ঠিত বৃহৎ মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর সামসিয়া আলীয়া ও ফুলবাড়িয়া আলীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন।
এ গ্রামে হযরত শায়খুল ইসলাম মাদানী (রহ:)-এর আরেকজন খলিফা ছিলেন, তাঁর নাম হযরত মাওলানা আবদুল খালেক (রহ:)। ফুলবাড়িয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করাকালে মাওলানা তখলিছ হোসাইন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ গ্রামে হযরত মাদানী (রহ:)-এর দু’জন খলিফা ছাড়া হযরত মাওলানা সহুল উসমানী (রহ:)-এর ৬ জন খলিফা ছিলেন। তারা হলেনÑ (১) মাওলানা কাজী সৈয়দ আবদুর রউফ (২) শেখ মাওলানা হাবীবুর রহমান (রহ:) (৩) মাওলানা শেখ জমিলুল হক (রহ:) (৪) মাওলানা শেখ আহমদ আলী (রহ:) (৫) মাওলানা শেখ আবুল হোসাইন (রহ:) (৬) মাওলানা শেখ আবদুল ওয়াহাব (রহ:)।
হযরত মাওলানা শেখ হাবীবুর রহমান (রহ:) ও মাওলানা শেখ আবুল হোসাইন হযরত মাদানীর (রহ:) শাগরিদ। মাওলানা তখলিছ হোসাইন সাহেব (রহ:)-কে খেলাফত প্রদানের পর একই রমজানে হযরত মাওলানা মাদানী (রহ:) আরো দু’জনকে খেলাফত প্রদান করেন, তারা হলেন ঝিংগাবাড়ির হযরত হাজী মৌলভী আবদুল বারী সাহেব (রহ:) ও তালবাড়ির হযরত আবরু মিয়া (রহ:)।
মাওলা সৈয়দ তখলিছ হোসাইন (রহ:) সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর সৈয়দপুর বড়বাড়িতে ১৮৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মওলানা সৈয়দ তাকাদ্দাস আলী সাহেব (রহ:)। তাঁর ইন্তেকাল হয় ১৯৪৮ সালে। বড়বাড়ি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তিনি ছিলেন তার পিতার চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয়। সৈয়দপুর সামসিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, সিলেট ফুলবাড়ি আলীয়া মাদ্রাসায় তিনি লেখা পড়া করেন। শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা মাদানী (রহ;)-এর হাতে বয়াত গ্রহণ করেন। অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে শরিক হন। সিলেটবাসীর বড় সৌভাগ্য যে, এখানে হযরত মাদানী (রহ:) বার বার আগমন করেন এবং কয়েক বছর সিলেটে হাদীস শিক্ষা দেন। রমজান মাসে এতেকাফ গ্রহণ করেন এবং হাজার হাজার মানুষকে আধ্যাত্মিক দীক্ষা দান করেন। ১৯২১ সালে এক কনফারেন্সে সর্ব প্রথম হযরত মাদানী (রহ:) সিলেটে আসেন। ১৯২৩ সাল থেকে সিলেটে অবস্থান করে হাদীস শিক্ষা দিতে থাকেন।
হযরত মাদানী (রহ:) ৩ বার সুনামগঞ্জ বড়বাড়িতে তশরিফ আনেন। প্রথমবার তিনি ১৯৩৩ সালে আসেন। বড়বাড়িতে ঈদের নামাজে ইমামতি করেন। জুমার নামাজও পড়ান। সপ্তাহকাল থাকেন। এর আগে এখানে জুমার নামাজ হতো না। ১৯৪০ সালে হযরত মাদানী (রহ:)-এর নির্দেশে সৈয়দপুর হাফেজিয়া হোসাইনীয়া আরাবিয়া দারুল হাদীস মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। মাওলানা তখলিছ হোসাইন (রহ:) ও মাওলানা আবদুল খালেক সাহেব (রহ:)-এর প্রচেষ্টায়। হযরত মাদানী (রহ:) এসে মাদ্রাসার শিক্ষার সূচনা করেন। ৩য় বার আসেন ১৯৪৬ সালে। বাড়ির সামনে কনফারেন্স ছিল। সেখানে এসেছিলেন। সকালে এসে সন্ধায় চলে যান। ৩ জন ছাত্রকে দিয়ে হেফজখানার সূচনা করেন। তারা হলেনÑ (১) মাওলানা সৈয়দ শায়খ মন্জুর আহমদ- খলিফায়ে হযরত শায়খে কোড়িয়া (রহ:) (২) হাফেজ মাওলানা সৈয়দ আবু সাঈদ (রহ:)- খলিফায়ে মাওলানা লুৎফর রহমান বর্ণভী (রহ:) (৩) হাফেজ আয়ুব আলী (রহ:)।
করাচির মোকাদ্দমার পর ২ বার সশ্রম করাবন্দি থাকেন হযরত মাদানী (রহ:)। অতঃপর মুক্তি লাভ করেন। জেল থেকে বের হয়ে ১৯২৩ সালে সিলেট আসেন এবং মরকাযীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩-২৪ সালে তিনি সিলেট নয়া সড়ক মসজিদে এতেকাফ শুরু করেন।
১৯২৫ সালের ১ রমজান মাওলানা তখলিছ হোসাইন (রহ:), হযরত মাদানী (রহ:)-এর হাতে বয়াত গ্রহণ করেন। ২৭ রমজান এশরাকের সময় খেলাফত লাভ করেন। খেলাফত দেয়ার আগে হযরত মাদানী (রহ:) বললেন, হালকা-পাতলা লোকটিতে ডাক। তাঁকে ডাকা হলে হযরত মাদানী (রহ:) বললেন, তোমার নাম কি? উত্তর দিলেন, তখলিছ হোসাইন। তুমি কি কাজ কর? বললেন, পিতার সাথে মাঠে কাজ করি। বিশেষ কি আমল কর? বললেন, খাছ কোনো আমল নেই। আবার বললেন, সত্য বল বিশেষ কি আমল কর। তিনি বললেন, সব সময় অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করি। অজু করার পর দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি।
২৭ রজমান এশরাকের নামাযের পর হযরত মাদানী (রহ:), মাওলানা তখলিছ হোসাইন (রহ:)কে খেলাফত প্রদান করেন। এটা ছিল হযরত মাদানী (রহ:)-এর প্রথম খেলাফত প্রদান।
বড়বাড়ি সফরকালে একবার হযরত মাদানী (রহ:) লক্ষ্য করলেন, বাড়ির কোনো কোনো লোক মাওলানা তখলিছ হোসাইন সাহেবকে নাম ধরে ডাকছে, এটা দেখে তিনি বললেন, আল্লাহপাক যাকে মহব্বত করেন, আপনারা তাঁকে বেয়াদবীর সাথে কেন ডাকছেন। সে একজন মাদারযাত ওলি। ইখলাছ, তাওয়াক্কুল তাঁর মধ্যে বেশি ছিল। তিনি হযরত মাদানী (রহ:)-এর ন্যায় খদ্দরের কাপড় পরিধান করতেন। স্বাধীনতা আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে অবদান রাখেন। তিনি আপন শায়খ হযরত মাদানী (রহ:)-কে খুব বেশি সম্মান করতেন। সামনে বসতেন না। বেশি আদব করতেন।
মাওলানা সৈয়দ তাখলিছ হোসাইন সাহেবের (রহ:)-এর ১ ছেলে ও ২ মেয়ে ছিলেন। ছেলেকে ছুফি নামে ডাকা হত। ১ মেয়ে সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। তার বিবাহ হয় সৈয়দপুরের আশেকে মাদানী (রহ:) সৈয়দ আবদুর জহুর প-িতের সাথে।
২য় মেয়ে সৈয়দা রাবেয়া খাতুন। তার স্বামী সৈয়দ সাহাদাত হোসেন বাবু মিয়া। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত দৈনিক আজাদ এর সাংবাদিক ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।