Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইবিতে বন্ধ করে দেয়া হলো ‘কুরআন শিক্ষা’ প্রতিষ্ঠান

| প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইবি থেকে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে কুরআন শিক্ষা কোর্স চালু হচ্ছে সেখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ করে দেয়া হলো কুরআন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গোয়েন্দা তথ্যের অভিযোগ দিয়ে সুকৌশলে এ কুরআন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। এদিকে শিশু শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলে মেয়েদের কুরআন শিক্ষার জন্য ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় মসজিদ কমিটি ‘নূরানি মক্তব’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে অভিভাবকদের নিজস্ব অর্থায়নে এ মক্তবে শিক্ষা কার্যক্রম চলতে থাকে। পরবর্তীতে কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদেরকে বাংলা, ইংরেজি, অংক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো: খুরশিদ আলম ও ২০০৭ সালে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী বৃত্তিপাড়া গ্রামের আব্দুল আলীমকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নূরানি শিক্ষার সাথে সাথে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যপুস্তক অন্তুর্ভুক্ত করে শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঠদান চালু করা হয়।
মসজিদ কমিটি ও মক্তব শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মাহবুবর রহমান আকস্মিক সেখানে পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে গিয়ে মক্তব পরিচালানার অনুমতি আছে কি না তা জানতে চান। পরে তাকে কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম আ.শ.ম শোয়ায়েব আহমদ সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলামের অনুমতি সম্বলিত রেজ্যুলেশনের কপি প্রক্টরেকে দেন। এদিকে বেশ কিছুদিন আগে প্রক্টর কয়েক দফায় সেখানে আবারও পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় তিনি মক্তবে বাচ্চাদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। সেখানে বাচ্চাদেরকে ‘তোমাদের নেতা কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বলেন।
এদিকে মক্তবের বিষয় নিয়ে ভিসির কার্যালয়ে রুদ্ধদার মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মাহবুবর রহমান মক্তব সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য আছে জানিয়ে এখানে কি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য মিটিংয়ে উত্থাপন করেন। প্রাথমিক অবস্থায় প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাকে মসজিদ পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরে মক্তব বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় আইআইইআর এর অধীনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবঃ স্কুল এন্ড কলেজে স্থানান্তর করার সিন্ধান্ত নেয় প্রশাসন। আগামী শনিবার থেকে মক্তবের শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠদানের ব্যবস্থা করবে বলে নোটিস দেয়া হয়েছে। এদিকে বছরের মাঝামাঝি সময়ে শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়ায় বেকায়দায় শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশের যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর ড. মো. মামুনুর রহমান বলেন,‘আমাদের সন্তান ছোটকাল থেকে যেন ধর্মীয় শিক্ষা পায় সেজন্য মক্তবে ভর্তি করিয়েছিলাম। সাধারণ মুসলমান হিসেবে আমাদের এটা উদ্দেশ্য ছিল।’
শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও অভিভাবক প্রফেসর ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন,‘মক্তবে পড়ালেখার মান খুবই ভালো। এটা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে স্থানান্তর করলে কুরআন শিক্ষার যে ভাবগাম্ভীর্যতা ও পবিত্রতা তা স্কুলে রক্ষা হবে না। সুতরাং সেটার মান খারাপ ছাড়া ভাল হবে না। অভিভাবক হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি।’
কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘সন্তানরা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করুক সবাই চায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের মধ্যবর্তীস্থানে অবস্থিত হওয়ায় আশপাশে কোনো ভালো প্রতিষ্ঠান নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে অবস্থিত ‘নূরানি মক্তবে’ লেখাপড়ার মান অনেক উন্নত। শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় লেখাপড়ার মানে অভিভাবকরা সন্তুষ্ট। কিন্তু সেটি বন্ধ হওয়ায় আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. মো: হারুন-উর-রশিদ আসকারীকে বিতর্কিত করতে কিছু ব্যক্তি উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের প্ররোচনায় তিনি কুরআন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।’



 

Show all comments
  • Hilali ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ৭:৩৭ এএম says : 1
    একেবারে শিশুদের কুরআন শিক্ষাদানের এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার কোন কারণ দেখি না। সারা দেশেই তো মসজিদভিত্তিক মক্তব রয়েছে। এর পেছনে নাস্তিকদের কোন কারসাজি থাকতে পারে। কিছু নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী ছাড়া অধিকাংশ মুসলমানের সন্তানরা কুরআন শেখে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মাননীয় ভিসি মহোদয়কে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahtab Hasan ১৫ এপ্রিল, ২০১৭, ৩:০৬ এএম says : 0
    চিন্তার বিষয় ; দেশ কোন দিকে যাচ্ছে !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ