হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোহাম্মদ আবদুল গফুর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় প্রবেশ করবে বলে যারা আশা প্রকাশ করেছিলেন, তাদের শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়েছে। দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শীর্ষ বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও বাংলাদেশের জনগণ বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের কাছে যেসব বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সমঝোতার আশা করেছিল সেসব বিষয়ে বাংলাদেশকে হতাশই হতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত।
অথচ প্রধানমন্ত্রীর এ দিল্লি সফর নিয়ে যেসব খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে বোঝা যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে খুশি করতে ভারতীয় নেতৃত্বের চেষ্টার অন্ত ছিল না। এসব অতিরেক চেষ্টার মধ্যে ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল ভেঙে অভ্যর্থনা জানাতে ছুটে যাওয়া, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি অবস্থানকালে থাকার জন্য ভারতের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভবন রাষ্ট্রপতি ভবন নির্ধারণ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মরহুম পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”র হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচনের ব্যবস্থা, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের আন্তরিকতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির প্রশংসা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গণতান্ত্রিক’ শাসনব্যবস্থার তারিফ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের জনগণের ভারতের কাছে যে প্রধান প্রত্যাশা ছিল তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন সে সম্পর্কে বাংলাদেশ বাস্তবে কিছুই পায়নি। প্রধানমন্ত্রীর বহুল প্রচারিত চার দিনব্যাপী দিল্লি সফরে শুধু এ ব্যাপারে কিছু পায়নি বললে কম বলা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দিল্লি নেয়ার ব্যবস্থা হয় তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে সহযোগিতার আশায়। দিল্লিতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি পষ্টাপষ্টি বলে ফেলেন যে, তিস্তা নদীতে জল নেই, তাই বাংলাদেশকে তিস্তার জল দেয়া সম্ভব নয়। মমতা ব্যানার্জির মুখ থেকে এ ধরনের চাঁছাছোলা বক্তব্য শোনার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর কোনও বিচারে সফল হয়েছে বলার অবকাশ আছে কি? নেই।
তাই বলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছুই ঘটেনি? দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো তার কি কোনোই মূল্য নেই? অবশ্যই রয়েছে। বিশেষত দুই দেশের মধ্যে যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তার গুরুত্ব অপরিসীম। এই স্মারক স্বাক্ষরের অবশ্যই একটা পটভ‚মি রয়েছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় আনলে দেখা যায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের অতি সামান্য অংশ ছাড়া তিন দিক দিয়েই বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের অবস্থান। এ অবস্থানের কারণে এই বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী উচ্চাকাক্সক্ষা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রসত্তাকে নিরাপদ করতে বাংলাদেশের উন্নত ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য।
এই নিরাপত্তা চিন্তা থেকেই বাংলাদেশের দলমত নির্বিশেষে সকল সরকারই এ ব্যাপারে অন্যতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষপাতী। এ ধরনের চিন্তার প্রেক্ষাপটেই নিকট অতীতে চীন বাংলাদেশকে দুটি সাবমেরিন দেয়। এর পরই ভারত নতুন করে বাংলাদেশকে ভারতের প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কে আবদ্ধ করার জন্য ব্যগ্র হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের সুযোগে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশকে ভারতের প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কে আবদ্ধ করা হয়।
এই সমঝোতা স্মারক মোতাবেক ভারত বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেয়। প্রতিরক্ষা খাতে ৫০ কোটিসহ বাংলাদেশকে ৫০০ কোটি নয়া ঋণ দেবে ভারত। বহু বছর ধরেই চীন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কেনাকাটার প্রধান উৎস। ভারতের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কে ভারতীয় প্রভাব জোরদার করে তুলতে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরকালে দুই দেশের মধ্যে যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক স্মারক স্বাক্ষরিত হয় তার মাধ্যমে ভারতের বহুদিনের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সর্বত্র এই প্রতিরক্ষা স্মারক স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এবং দলমত নির্বিশেষে সকল পর্যায়ের জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ উত্থিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণœকারী প্রতিরক্ষা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও বাংলাদেশের জনগণের সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা মোতাবেক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দিল্লিতে নেয়া হলেও মমতা তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির সম্ভাবনাকে এই যুক্তিতে অস্বীকার করে বসেন যে, তিস্তা নদীতে পানি নেই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে এ অদ্ভুত বক্তব্য দেওয়ানোর পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তা হলে তিস্তা নদীর পানি গেল কোথায়? এ নদীর পানি কি রাতারাতি হাওয়া হয়ে গেছে? না প্রাকৃতিক নিয়মে পানি প্রবাহ ভাটির দিকে প্রবাহিত না হয়ে উজানের দিকে ফিরে গেছে?
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিমাত্রই জানেন, তিস্তা নদীর পানি রাতারাতি হঠাৎ করে হাওয়া হয়েও যায়নি বা প্রাকৃতিক নিয়মমাফিক নদীর পানি ভাটির পরিবর্তে উজানের দিকেও ফেরত যায়নি। বাংলাদেশের সামান্য উজানে গজলডোবায় তিস্তা নদীর উপরে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ আটকে দেয়ার মাধ্যমে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে তিস্তা নদীর প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ থেকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে কৃষি, যোগাযোগ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে।
অথচ কোনো নদী যদি একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, সে নদীর পানি প্রবাহের ওপর সংশ্লিষ্ট উজান-ভাটির সকল দেশেরই সমান অধিকার থাকে। এমন নয় যে, তিস্তাই সারা বিশ্বের একমাত্র নদী, যা দুই দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইউরোপ-এশিয়াসহ পৃথিবীর সকল মহাদেশেই এমন বহু নদী রয়েছে, যেগুলো একাধিক দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। এক্ষেত্রে ইউরোপের দানিউব নদীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এই উপমহাদেশেই সিন্ধু, গঙ্গা প্রভৃতি নদী একাধিক দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এসব নদীর পানি প্রবাহ নিয়ে প্রথম প্রথম সমস্যা সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের মধ্যে পানি বণ্টন নিয়ে আন্তর্জাতিক বিধানের আলোকে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশী দেশসমূহের উদ্যোগ।
মানুষ সামাজিক জীব। তারা সমাজবদ্ধ হিসেবে বাস করতে অভ্যস্ত। ব্যক্তি-মানুষ সমাজের অংশ হিসেবে যে প্রাথমিক পরিবেশে বাস করে তাকে আমরা পরিবার বলে থাকি। আমরা কেউই কোন্ পিতামাতার পরিবারে জন্মগ্রহণ করব, তা নিজেরা নির্ধারণ করার সুযোগ পাই না। একইভাবে আমরা প্রতিবেশী হিসেবে কোন্ দেশকে পাব তা নিজেরা নির্ধারণ করার সুযোগ পাই না। এসব বিষয় নির্ধারণ করে দেন বিধাতা।
যে পরিবারে আমরা জন্মগ্রহণ করি তার অন্য সদস্যদের প্রতি যেমন আমাদের সৌহার্দ্য রক্ষার দায়িত্ব থাকে, তেমনি যেসব দেশ আমাদের প্রতিবেশী তাদের সাথে শান্তি, সৌহার্দ্যরে সঙ্গে বাস করা আমাদের মানবিক দায়িত্বের অন্তর্গত। সেই নিরিখে যেসব নদী একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তার প্রাকৃতিক পানি প্রবাহে সংশ্লিষ্ট সকল দেশের মানুষের অধিকার থাকে। এই স্বাভাবিক সত্যকে স্মরণে রাখলে একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কোনো অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আমরা আগেই বলেছি, মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে অভ্যস্ত। এই বসবাস তখনই শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যখন সমাজের একে অপরের প্রতি তার দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকতে পারে। সমগ্র বিশ্বও এভাবেই বিভিন্ন দেশে বিভক্ত। বিভিন্ন দেশ যদি একে অপরের প্রতি তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থেকে প্রতিবেশী দেশের প্রতি তার প্রতিবেশি সুলভ আচরণে অভ্যস্ত থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি না হওয়াই স্বাভাবিক।
যে কোনো দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে এই স্বাভাবিক সত্যকে মনে রাখলে একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানি নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। নদ-নদীর পানি প্রবাহ বিশ্ব ¯্রষ্টার সর্বজনীন দান। এতে উজান-ভাটি নির্বিশেষে কোনো দেশেরই একচেটিয়া অধিকার নেই। এই নিরিখে একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে উজানের দেশ কর্তৃক বাঁধ নির্মাণ করে ভাটির দেশকে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ থেকে বঞ্চিত করে শুকিয়ে মারার অধিকার নেই। কোনো উজানের দেশ যদি এ ব্যাপারে অমানবিক পথ অবলম্বন করে বাঁধ নির্মাণ করে থাকে তার উচিত হবে যথাশীঘ্র ভাটির দেশের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে ভাটির দেশের প্রাকৃতিক পানি প্রাপ্তি বিষয়ে নিশ্চয়তা বিধান করা।
তিস্তা নদীর পানিতে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী মমতা মখোপাধ্যায় যে খোঁড়া যুক্তি দিয়েছেন তাতে তাঁর অমানবিক মনোভঙ্গিই প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। এরকম মনোভাব বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে মোটেই সহায়ক হতে পারে না। মমতা ব্যানার্জি শুধু ভারতের অন্যতম রাজনৈতিক নেত্রীই নন, তিনি ভাষাগত বিচারে একজন বাঙালি। একজন বাঙালি হয়ে তিস্তা নদীর একটি অঞ্চলে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ থেকে বঞ্চিত করার দুর্ভাগ্যজনক ভূমিকায় আমরা দুঃখিত ও বিস্মিত। বিশেষ করে ভারতের অবাঙালি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন তিস্তা নদীর পানি বণ্টণ সম্পর্কে বাংলাদেশের দাবির প্রতি অনেকটাই সহানুভূতিশীল বলে অনেকের ধারণা তখন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাংলাদেশের বাঙ্গালী জনগণের জীবন মরণ এ সমস্যার প্রতি নির্মম দৃষ্টিভঙ্গি চরম দুর্ভাগ্যজনক।
আমরা বাংলাদেশিরা আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে আন্তরিকভাবেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। তবে মনে হয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে বড় বাধা ভারতের নেতৃত্বের বিশেষ অংশের আধিপত্যবাদী মনোভাব। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের তুলনায় ক্ষুদ্র। কিন্তু ভারতের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। যেসব শহীদ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য অকাতরে বুকের রক্ত দিয়েছেন, তারা কখনও চাননি পিÐির বদলে দিল্লিকে নতুন প্রভু হিসেবে মেনে নেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনগণের এ মানসিকতা হৃদয়ঙ্গম করতে পারলে ভারতের কোনো নেতা-নেত্রীই বাংলাদেশের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রসত্তার মর্যাদা সামান্যতম ক্ষুণœ হতে পারে, এমন কোন আচরণে প্রবৃত্ত হবেন না বলে আমরা আশা করি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও আমাদের কিছু বক্তব্য রয়েছে। তাঁকে আমরা এ কারণে ধন্যবাদ জানাই যে, তাঁর নির্দেশে আওয়ামী লীগ তাঁর দিল্লি সফর থেকে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা বন্ধ করেছে। কারণ তাঁর দিল্লি সফর থেকে বাংলাদেশের প্রধান প্রত্যাশা তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হয়নি। অথচ ভারত ঠিকই বাংলাদেশকে ভারতের নিরাপত্তা নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিরক্ষা স্মারকে স্বাক্ষর আদায়ের মাধ্যমে। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর বাংলাদেশের জন্য খুব একটা সুফলদায়ক হয়েছে বলে দাবী করা যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।