Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সবুজ পাতার ফাঁকে অসংখ্য সাদাটে পুষ্প মঞ্জুরি

| প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : গ্রীষ্মের ফল জাম। কিন্তু জামের মুকুল ধরে বসন্তের শেষভাগে। জাম গাছের ডালে ডালে ফুল বা মুকুল যখন ফোটে তখন প্রকৃতিতে এক অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে অসংখ্য সাদাটে পুষ্প মঞ্জুরি প্রকৃতিপ্রেমীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। এর উপর হাজার হাজার মধু মক্ষিকার গুঞ্জরণে মনে হয় প্রকৃতি যেন গুন গুন করে গান গাইছে। এর সাথে দক্ষিণা বাতাসের তানে মুকুল থেকে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মতাে পুষ্পরেণুুদের ঝরে পড়ার দৃশ্য প্রতিবেশে এক ভিন্ন আমেজের সৃষ্টি করে। জামের মুকুল ফোটার সময় প্রকৃতিতে যতটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়, অন্য কোনো ফলের ফুল ফোটার সময় এতটা আলোড়ন ঘটে না। জামের মুকুলে যত বেশিসংখ্যক মৌ-মাছিদের আনাগোনা ঘটে, বরই ফুল ছাড়া অন্য কোনো ফলের ফুলে এত বেশিসংখ্যক মৌ-মাছির আগমন ঘটে না। জামের ফুল থেকে মৌ-মাছি মধু নেয়ার সময় যতটা গুঞ্জরণ করে অন্য কোনো ফুল থেকে মধু নেয়ার সময় মৌ-মাছিদের এতটা গুঞ্জরণ শোনা যায় না। এখন বসন্তের শেষভাগ। প্রকৃতিতে এখন আর জাম গাছ ততটা দেখা যায় না। কাঠের জন্য আমাদের প্রকৃতি থেকে জাম গাছগুলোকে নিষ্ঠুরভাবে কেটে ফেলা হয়। এক সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়ি, বন বাদার, রাস্তার পাশে অসংখ্য জাম গাছ ছিল। কালো জাম, গুদি জাম, ক্ষুদি জাম ও তিতি জামের গাছে ভরা ছিল আমাদের প্রকৃতি। বিচি থেকে জাম গাছের বংশ বৃদ্ধি ঘটে বলে যেখানে সেখানেই জামের চারা গজিয়ে উঠত। এসব জাম গাছে জন্ম দিতো আমাদের প্রতিবেশের পাখ-পাখালীরা। জাম পাখিদের খুব প্রিয় খাবার। গাছে জাম পাকলে হাজারো পাক পাখালী এসে গাছগুলোতে ঝেকে বসতো। তারা জাম খেয়ে আবার তাদের ছানাদের জন্য ঠোঁটে করে নিয়ে যেত পাকা জাম। পাখির ঠোঁট থেকে জামের বিচি মাটিতে পড়ে যেখানে সেখানে জামের চারা গজাতো। এভাবেই আবহমান বাংলার যুগের পর যুগ ধরে জাম গাছের বংশ বৃদ্ধি ঘটে আসছে। ফলের চারা হিসেবে প্রকৃতিতে জামের চারা যেখানে সেখানে যেভাবে গজায়, অন্য কোনো ফলের চারা এভাবে গজাতে দেখা যায় না। অবজ্ঞা অবহেলা ও অযতেœ যেভাবে জামের চারা বেড়ে উঠে এভাবে অন্য কোনো ফলের চারা বেড়ে উঠে না। এসময় ছিল যখন জাম গাছের শত্রæ ছিল গরু, ছাগল আর ভেড়া। এসব গরু-ছাগলেরা ছোট ছোট জামের চারা খেয়ে ফেলতো। এরপরও জাম গাছের আধিক্য ছিল ব্যাপক। কিন্তু এখন মানুষই হচ্ছে জাম গাছের সবচেয়ে বড় শত্রæ। মানুষ আসবাবপত্র তৈরির জন্য অবাধে জাম গাছ নিধন করে ফেলেছে। প্রকৃতি থেকে জাম গাছ হারিয়ে যাওয়ার কারণে বাজারে জামের দামও বেড়ে গেছে বহুগুণ। এক সময় জাম বাজারে বিক্রি হতো না। গাছের নিচে পড়ে পড়ে পদদলিত হতো। পাকা জাম গাছের নিচে স্ত‚পাকারে পড়ে থাকতো। বৃষ্টি এলে এসব পাকা জাম পচে গন্ধ বেরোত। এখন মৌসুমের প্রারম্ভিক সময়ে এক কেজি জাম বিক্রি হয় ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। যা বাঙালি জাতির জন্য ক্রয় করে খাওয়া কষ্টকরই নয়, লজ্জাজনকও।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ