পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যা চেয়েছিলো, ন্যূনতম আমার পানি বাঁচার জন্যে, আমার বেঁচে থাকার জন্যে, প্রায় তিনভাগের এক ভাগ মানুষ যে নদীর ওপর নির্ভর করে, কোটির বেশি মানুষে জীবন চলে, সেই নদীর পানির একটা হিৎসা হবে, চুক্তি হবে। দুঃখজনক। সেটা হয়নি। হয়নি শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার সফরের ফলাফল সম্পর্কে বলেছেন, ম্যায় পানি পাঙ্গা, মুচকো বিদু্যুৎ মিল গা। কুচ তো মিলা।
অর্থাৎ উনি নিজেই বলেছেন, মেলেনি, কোনোটাই মেলেনি, শুধু কুচ মিলেছে। সেটা বিদ্যুতের কথা বলেছেন তাও আবার পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। উনি নিজেই বলে দিয়েছেন, আমাদের আর কিছু বলার আছে বলে আমি মনে করি না।
গত ৭ এপ্রিল থেকে চার দিনের সফর শেষ করে গত সোমবার দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে তিনি নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দ্রাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরমধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘আমার দেশ’ পত্রিকাটি বন্ধের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ২০১২ সালের এদিনে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় সরকার।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উনারা (সরকার) চিৎকার করে বলছেন, দুই দেশের সম্পর্ক উচ্চতর পর্যায়ে। একবারে স্পিরিচ্যুয়াল লেভেলে চলে গেছে। তো ভালো কথা। আমরা তো মাটির মানুষ আমাদের মাটিতে ফসল ফলাতে হয়, আমাদের নদীতে মাছ তুলতে হয়, জীবন-জীবিকা চালাতে হয়। আমাদের সরকার নতজানু। নতজানু পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে চলছে, তারা আদায় করতে পারবে না।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে গঙ্গা ব্যারেজ নিয়ে পানি সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের মনে আছে- ফারাক্কা ব্যারেজ নিয়ে এই একই অবস্থা চলছিলো। জিয়াউর রহমান সাহেব সেটা জাতিসংঘে তুলেছিলেন, পরে বাধ্য হয়ে ভারত যেভাবে হোক একটা চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছিলো।
সরকার দেশকে একদলীয় শাসনে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে একথা বলে এসেছি- আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র-এই দুইটা একসঙ্গে চলে না। তাদের চরিত্র এতটুকু বদলায়নি। ’৭৫ সালে যে কাজটি করেছিলো, সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে চারটি পত্রিকা রেখেছে, সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসনের মতো ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলো, সেই জায়গা থেকে তারা (আওয়ামী লীগ) তো সরেনি, শুধু তার কৌশলটা পাল্টিয়েছে। তখন ছিলো সংসদে পাস করিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল করেছে। এখন পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। সুতরাং ভিন্ন কৌশলে, ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন পোশাক পরিয়ে সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থাই এখানে করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে চলেছে। তারই ফলশ্রæতিতে, একটা একটা করে পত্রিকা-চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যেগুলোই তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট সত্য কথা বলতে পেরেছে।
দলের নেতা-কর্মীদের গুম-মিথ্যা মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীরা নিজের এলাকায় থাকতে পারে না, অন্য এলাকায় থাকে। পুলিশ প্রতিদিন হয়রানি করছে, হয় টাকা নিচ্ছে নতুবা কারাগারে পাঠাচ্ছে। এখন নতুন অস্ত্র বের করেছে- জঙ্গি। এখন যার কাছ থেকে টাকা পাবে না, তাকে জঙ্গির কথা বলে গ্রেফতার করে আটকিয়ে রাখবে। বাংলাদেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যে নীল নকশা তৈরি হয়েছিলো ১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশকে একটা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র হিসেবে রেখে দেয়ার, সেই নীল নকশাই বাস্তবায়িত করতে তারা আজকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
মাহমুদুর রহমানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অন্যতম একজন ব্যক্তি যিনি সরকারের ষড়যন্ত্রের কাছে আপোষ করেননি। যিনি প্রতিবাদ করেছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েও নতি স্বীকার করেননি, মাফ চাননি আদালতের কাছে। এখানেই তিনি অনন্য।
গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুনেছি, দেশের সংবাদ-মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে ১৮টি কমিটি আছে। প্রতিদিন, প্রতিঘণ্টা, প্রতি সপ্তাহ তারা নিয়ন্ত্রণ করছে গণমাধ্যমকে। মিডিয়ার কর্মীদের সাথে আমাদের কথা হয়, তারা বলেন, বিশ্বাস করেন খসরু ভাই, আমরা আর সংবাদ কর্মী নাই, আমরা ম্যানেজার হয়ে গেছি। এখন আমাদের নিউজ ম্যানেজ করতে হয়।
অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, দেশের মধ্যে যারা আছেন, তারা অনেকে দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। অনেকে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চাকরির খুঁজে আছেন। কারণ, তারা ক্যারিয়ারের জন্য সাংবাদিকতা করতে এসেছেন, তারা বুঝতে পারছেন বাংলাদেশে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
সভাপতির বক্তব্যে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ৪৫ বছরে আমরা স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছি, বাংলাদেশ আর স্বাধীন দেশ নয়- এই বিষয়টি আজকে এখানে যারা উপস্থিত আছেন, সবাইকে বুঝবার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি শুধু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বপ্নই নয়, স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্নও দেখি। আমাদের যে লড়াই সেটি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, বর্তমান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই- এই দুই লড়াইকে আমাদের এক করতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে। যে হিন্দুত্ববাদের প্রেতাত্মা সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় আছে, তাদেরকে উৎখাত করার জন্য আমাদের জীবনমরণ পণ করতে হবে। বুঝতে হবে বাংলাদেশে হিন্দুবাদ ও শিবসেনারা ভারত শাসন করছে, সেই সরকারের প্রতিনিধিরা আজকে বাংলাদেশ শাসন করছে। এদের সরিয়ে দেশে একটি দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকলকে অংশ নেয়ার আমি আহŸান জানাচ্ছি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আব্দুুল হাই শিকদারের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কবি ফরহাদ মজহার, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আব্দুস শহীদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির সেলিমা রহমান, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আব্দুুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিন্নাতুন নেসা তাহমিদা বেগম, বিএনপির অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার আনহ আখতার হোসেন, অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন ডোনার, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, মীর সরফত আলী সপু, তকদির হোসেন জসিম, মোরতাজুল করীম বাদরু, সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ, বাকের হোসাইন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।