Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রোড পরিবর্তনে পণ্যের ট্রলারে টেকনাফে আসছে মাদক

| প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দীপন বিশ্বাস, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে : বাংলাদেশ-মিয়ানমারের টেকনাফ সীমান্তের মাদক ব্যবসায়ীরা রোড পরিবর্তন করে মিয়ানমার থেকে এবার ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে আসছেন। নাফনদীর পরিবর্তে তারা বঙ্গোপসাগরে নতুন রোড আবিষ্কার করেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। মাছ আহরণ করা কিংবা আমদানিকৃত পণ্যের ট্রলারে বঙ্গোপসাগরে আবিষ্কৃত রোড দিয়ে হাত বদলের মাধ্যমে টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে ইয়াবার চালান খালাস করছেন তারা। আবার মাছ ধরার ট্রলারযোগে গভীর বঙ্গোপসাগর দিয়ে কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সমুদ্র এলাকায় কৌশলে ইয়াবার বড় বড় চালান পাচার করছেন। বঙ্গোপসাগর দিয়ে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে বড় বড় চালানসহ অনেক পাচারকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হাতেনাতে আটক হয়েছেন। সীমান্তে দায়িত্ব পালনকারী বিভিন্ন বাহিনী জল এবং স্থলে মাদকের বিরুদ্ধে যখন কঠোরতা অবলম্বন করছেন ঠিক তখনই পাল্টা প্রতিরোধে মাদক সংশ্লিষ্টরা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন। তারা পুলিশ এবং বিজিবির কর্তাদের নানাভাবে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন। বড় কর্তাদের বদলিতে মাদক ব্যবসায়ীরা এখন জোট বাঁধছেন বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়। কৌশলী মাদক ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মাদক প্রতিরোধে সক্রিয় লোকজনকে টার্গেট করেছেন। পাতানো ফাঁদে ফেলাতে মাদক ব্যবসায়ীরা রীতিমত ছক আঁকছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সনে মাদক এবং মানবপাচার বন্ধে প্রশাসন যখন হার্ডলাইনে থেকে কাজ শুরু করেন, তার পরবর্তী সময়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। সে সময়ে মানবপাচার অনেকটা বন্ধ হলেও বন্ধ হয়নি মাদক ব্যবসা। সেই থেকে ষড়যন্ত্রের বিস্তার ঘটিয়ে মাদক সংশ্লিষ্টরা আরো বেশি ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছেন। শিক্ষাঙ্গনে মাদকের বিস্তার ঘটাতে ছাত্রদের ব্যবহার করে কৌশলে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। টেকনাফের অনেকে পড়া-লেখার নাম ভাঙিয়ে এখন ভয়াবহ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। অভিভাবকরা এটিও রোড পরিবর্তনের একটি কারণ বলে মনে করছেন। তবে ইয়াবা অনুপ্রবেশ, মজুদ এবং পাচার শূন্যের কোঠায় আনতে হলে মাদকের গডফাদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে বলে সচেতন এলাকাবাসীর অভিমত। ধ্বংসের খাদে পড়া ছাত্র, যুবসমাজসহ সংশ্লিষ্টদের রক্ষায় প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে অনেকেই এমন মতামত পোষণ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল মাসে পুলিশ-বিজিবি-কোস্টগার্ড স্থল এবং সাগরে অভিযান চালিয়ে ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৪পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে। এসময় ১১৫ মাদক পাচারকারীকে হাতেনাতে আটক করেন। এছাড়া পুলিশ ১ লাখ ২০ হাজার ১৮১ পিস ইয়াবাসহ ৩৯ জন পাচারকারীকে আটক করেন। এর বিপরীতে মাদক মামলা হয়েছে ৩৫টি। বিজিবি ১৫ লাখ দুই হাজার ৭০৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেন। ৭০টি মাদক মামলায় তারা ৬৯ জনকে হাতেনাতে আটক করেন। এছাড়া কোস্টগার্ড ১ লাখ ৯২ হাজার ৬ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করেন। ১টি মাদক মামলায় কোস্টগার্ড ৭ জন মিয়ানমারের নাগরিককে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশ-বিজিব-কোস্টগার্ডের ইয়াবাবিরোধী অভিযানে গেল মাসে ইয়াবা আটকের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। প্রশাসনিক তৎপরতার কারণে টেকনাফের অনেক মাদক ব্যবসায়ী আবারো গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। উখিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের ও টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন খাঁন জানান, মাদককে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী অত্যন্ত আন্তরিকতা দিয়ে অবিরাম কাজ করছেন। প্রজন্ম বাঁচাতে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তারা আরো বলেন, মাদকের ব্যাপারে কারো সাথে কোনো কিছুতেই আপস করা হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ