Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দুই বছর পরও শুরু হয়নি কালনা সেতুর কাজ

ফেরি পারাপারে সীমাহীন ভোগান্তি

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আব্দুস ছালাম খান, লোহাগড়া (নড়াইল) থেকে : প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দুই বছরেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। সেতু নির্মাণে নকশা প্রণয়ন, টেন্ডার প্রক্রিয়া, ঠিকাদার নিয়োগসহ দৃশ্যমান কোনো কাজই এখনও শুরু হয়নি। ফলে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ফলকটি এই দীর্ঘদিন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে আশার কথা সম্প্রতি এই সেতু নির্মাণে মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। জাপানের নির্মাণ সংস্থা জাইকার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘প্রো সয়েল কোং লিঃ’ নামক একটি কোম্পানি মাটির নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছে। মাটি পরীক্ষার পর সে অনুযায়ী নকশা প্রণয়ন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গেøাবাল লিঃ নামক প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগের পর কার্যাদেশ পেলেই শুরু হবে ঢাকা-বেনাপোল চারলেন বিশিষ্ট এশিয়ান হাইওয়ে-১ এর বহুল প্রত্যাশিত কালনা সেতুর কাজ। অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এই ফেরিঘাটে সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় যানবাহনসমূহকে ফেরি পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেতু নির্মাণে কোন কার্যক্রম না দেখে হতাশা প্রকাশ করছে এইপথে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ। এদিকে সম্প্রতি যশোর-মাগুরা সড়কের আড়পাড়া সেতু ভেঙে যাওয়ায় কালনা ঘাটে যানবাহনের চাপ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারলেন বিশিষ্ট ঢাকা-বেনাপোল হাইওয়ের কালনা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগে গত ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কালনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৮০ মিটার এবং প্রস্থ ১৮ দশমিক ২০ মিটার। এতে ১০টি পিসি গার্ডার ও তিনটি বক্স গার্ডার থাকবে। এছাড়া ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ এবং ১২ দশমিক ৬৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের কাজ রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন কালে ২০১৪ সালে কাজ শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুন মাসে কাজ সমাপ্ত হবে বলে উল্লেখ ছিল। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রায় ৬৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের কথা। এদিকে কালনা সেতু নির্মাণে বিলম্বের কারণ হিসেবে জানা গেছে, এ প্রকল্প গ্রহণের প্রথমদিকে এ সেতুর সাথে রেললাইন সংযোজনের কোন পরিকল্পনা ছিল না। পরে এই একই সেতুর উপর দিয়ে রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সে কারণে গত ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালনা সেতু এলাকা পরিদর্শনে এসে জানান, ‘কালনা সেতুর সাথে রেললাইন স্থাপনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে এবছরই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে’। কিন্তু বর্তমানে পৃথক রেল সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত শেষে পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী কালনা সেতুতে মোট ৬ লেন থাকবে। তারমধ্যে ৪টি লেন দূর পাল্লার বড় গাড়ির জন্য এবং অপর ২টি ছোট গাড়ির জন্য। এতে ব্রিজের প্রশস্ততা হবে ২৯ মিটার। এতে ব্যয় হবে ৬৭০ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে ঢাকাস্থ নড়াইল সমিতির সাধারণ সম্পাদক লেঃ কর্নেল (অবঃ) সৈয়দ হাসান ইকবাল প্রকল্প পরিচালকের বরাদ দিয়ে জানান, “এ বছরের শেষের দিকে কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে এবং ডিসেম্বর ২০১৯ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে।” উল্লেখ্য পদ্মা সেতু নির্মাণের পর বাংলাদেশের দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের নড়াইল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর জেলাবাসীর রাজধানীর সাথে যোগাযোগের প্রধান সেতুপথ এই কালনা সেতু। তাছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল হয়ে আমদানি-রফতানি পণ্যাদি পরিবহনেও এই সেতুপথ ব্যবহার করতে হবে। এশিয়ান হাইওয়ে-১ নামে পরিচিত এই সেতু নির্মাণের ফলে কলিকাতা থেকে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-লোহাগড়া-কালনাসেতু-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা-পদ্মাসেতু-মাওয়া-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের মাধ্যমে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবে। এক্ষেত্রে বেনাপোল থেকে কালনাসেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে ২০১ কিলোমিটার, যশোর থেকে ঢাকা ১৬১ কিলোমিটার এবং খুলনা থেকে বসুন্দিয়া ধলগা কালনাসেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার। অথচ দৌলদিযা পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে এসব এলাকা থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩০০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার। ফলে স্বল্প সময়ে রাজধানীর সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কালনাসেতু দ্রæত নির্মাণ অতি জরুরি। কালনাসেতু নির্মিত হলে যাত্রীদের ভোগান্তি যেমন কমবে তেমনি দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যাদি স্বল্প সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত সহজ হবে ও কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে। এদিকে কালনা ঘাটে সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় বর্তমানে ফেরি পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা যানবাহনগুলোকে মাত্র ৫শ মিটারের নদী পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যাত্রীবাহী যানগুলোর যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। মালবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানগুলোকে কোন কোন সময় ২/৩ দিনও সিরিয়ালে থাকতে হয়। বর্তমানে যশোর-বেনাপোল থেকে আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক কাভার্ডভ্যানগুলো সংক্ষিপ্ত পথের কারণে কালনা ঘাট ব্যবহার করছে। তাছাড়া যশোর-মাগুরা সড়কের আড়পাড়া সেতু ভেঙে যাওয়ায় অধিকাংশ পরিবহন এই ঘাট ব্যবহার করছে। সঙ্গত কারণেই কালনা ঘাটে যানবাহন পারাপারের চাপ অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। অপর দিকে বর্তমান শুকনো মৌসুমে নদীর পানি কমে পন্টুন নিচু হয়ে গাড়ি উঠার রাস্তা খাড়া হওয়ায় ভারী মালামালবাহী গাড়ি উঠতে পারছে না। ফলে ঘাটে প্রায়ই গাড়ি আটকে গিয়ে পারাপার বন্ধ হতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে ঘাট সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সূত্রে জানা গেছে, কালনা সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত সেতু এলাকার মাটির নমুনা পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ