Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধাতব মুদ্রা নিয়ে বিপাকে সাটুরিয়ার ব্যবসায়ীরা

অলস পড়ে আছে কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ সোহেল রানা খান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) : মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ৩ হাজার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (দোকান) পরিচালনা করছে। আর এসব ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিদিন জমা হচ্ছে কাগজের টাকাসহ ধাতব মুদ্রা (কয়েন)। দোকানের মালিকরা কয়েনের বিনিময়ে পণ্য বিক্রি করলেও ওই কয়েন তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলো জমা না নেয়ায় বিপাকে পরেছেন ব্যবসায়ীরা। এ দিকে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের মূলধন (কয়েন) আটকা পড়ায় তাদের ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। দোকানে দোকানে বস্তায় বস্তায় অলস পড়ে আছে ধাতবের তৈরি কয়েন মুদ্রা। অথচ গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েন জমা নিতে তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুনিদিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাটুরিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপকেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনা পালন করছে না। তাদের দাবি ব্যাংকে ভোল্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা না থাকায় কয়েনগুলো জমা নেওয়া যাচ্ছে না। সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে কথা বলে জানা গেছে, সাটুরিয়া সদর বাজার হচ্ছে ইউনিয়ন ও গ্রামের ছোট ছোট ব্যাবসায়ীদের মোকাম (পাইকারী ক্রয়ের বাজার)। এ কারণে সাটুরিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়। আর এ লেনদেনের টাকা জমা দিয়ে থাকেন ব্যাংককে। বিশেষ করে উপজেলা ও এর আশপাশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সাটুরিয়া থেকেই তাদের চাহিদামতো পণ্য কিনে থাকেন। এসব ব্যবসায়ীরা পণ্য কেনার সময় কাগজের মুদ্রার পাশাপাশি (১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকার) কয়েনও দিয়ে থাকেন। আবার উপজেলার ২০টির মতো বেকারিগুলোতে পণ্য বিক্রির বিনিময়ে টাকার সাথে সাখে কয়েন জমা পড়ে বেশি। সাটুরিয়ার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের প্রতিজনের কাছে ১ লাখ থেকে ২ লক্ষাধিক টাকার ধাতব মুদ্রার কয়েন জমা পড়ে আছে। উপজেলার বালিয়াটি বাজারের ব্যবসায়ী পরি বাকালী জানায়, কয়েক মাসে তার দোকানে প্রায় লক্ষাধিক টাকার কয়েন জমা পড়েছে। ব্যাংক ও অন্য ব্যবসায়ীরা কয়েনগুলো না নেয়ায় বস্তায় ভরে দোকানেই ফেলে রাখা হয়েছে তা। সাটুরিয়া বাজারে ব্যবসায়ী গোপাল সাহা জানায়, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দুই লক্ষাধিক টাকার কয়েন সাটুরিয়ার প্রতিটি ব্যাংকে জমা দিতে গেলে ব্যবস্থাপক তা জমা নেয়নি। সে ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, ভল্টে জায়গা না থাকায় আপাতত কয়েন জমা নেওয়া যাচ্ছে না। কয়েন জমা নেয়ার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার কথা জানালেও ব্যবস্থাপকরা বলেন, আমাদের কিছুই করা নেই। সাটুরিয়ার কাউন্নারা বিসমিল্লাহ বেকারির ম্যানেজার দুলাল জানায়, সাটুরিয়ার সব জায়গায় তার মাল সাপ্লাই দেওয়া হয়। আরো তিন স্থানে রয়েছে বিক্রয় কেন্দ্র। আশপাশের প্রায় শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে পণ্য কিনে থাকে। এ সব ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ পণ্য কেনার সময় কয়েন দিয়ে থাকেন। এতে প্রায় প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার কয়েন জমা পড়ে। সাটুরিয়ার ব্যাংকগুলো কয়েন জমা না নেয়ায় ওই কয়েন ঢাকায় শতকারা ১০০ টাকার কয়েন বিক্রি করলে কাগজের ৬০/৭০ টাকা দেয়। একই কথা জানায় অন্য বেকারির মালিকরা। বালিয়াটি বাজারের মুর্দির দোকানদার বিশ্বনাথ রায় জানায়, তার কাছে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ধাতব মুদ্রা কয়েন রয়েছে। ব্যাংকে ওই কয়েন নিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভোল্টে জায়গা নেই বলে ওই টাকা জমা না নিয়ে ফেরত দেয়। এমন কি দুই টাকা, পাঁচ টাকা ও দশ টাকার কাগজের নোটও নেয় না। এ কারণে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক মূলধন কমে যাওয়ায় ব্যবসা চালানো অনেকটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সাটুরিয়া বাজারের ব্যবসায়ী নিখিল পাল জানায়, তার কাছে প্রায় ৮০ হাজার টাকার কয়েন জমা পরেছে। ওই কয়েন বস্তায় ভরে দোকানে ফেলে রাখা হয়েছে। কেউ ওই কয়েন নেয় না। একই কথা বললেন ব্যবসায়ী বুদ্দু সাহা ও মেছের আলী তাদের কাছে রয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকার কয়েন। বালিয়াটি বাজারে চায়ের দোকান মালিক আজিজুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম জানায়, সাধারণ মানুষ এক কাপ চা খেয়ে ৫ টাকার কয়েন দেয়। এভাবে তাদের কাছে কয়েক হাজার টাকার কয়েন জমা রয়েছে। চায়ের দোকানের মালিকরা ওই কয়েন কাউকে দিলে তা নিচ্ছে না বলে জানায়। অপরদিকে গ্রামগঞ্জের ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ীরা স্বল্প মূলধন নিয়ে ব্যবসা করছে। তাদের কাছে জমা পড়েছে হাজার হাজার টাকার কয়েন। সাটুরিয়ার বড় বড় ব্যবসায়ীরা ব্যাংকগুলো কয়েন জমা দিতে না পারায়, ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা মাল কিন্তে আসলে তারা কয়েন না নেয়ায় উপজেলার গ্রামগঞ্জের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তাদের মূলধন আটকা পড়ায় ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ ব্যাপারে সাটুরিয়ার সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংকসহ ৬টি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভোল্টে জায়গা না থাকায় কয়েনগুলো জমা নেওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন নিতে নির্দেশনা থাকলে এ প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, প্রতিদিন ৫ হাজার টাকার কয়েন জমা আমরা নিতে পারি। তারা আরো বলেন, প্রতিদিন খুচরা ব্যবসায়ীরা বস্তায় বস্তায় কয়েন নিয়ে আসে। ওই কয়েনের টাকা জমা নিলে আমাদের ভোল্ট একদিনেই ভরে যাবে। কাগজের নোট দুই টাকা, পাঁচ টাকা ও দশ টাকার নোট নেওয়া হয় না কেন জানতে চাইলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকরা বলেন, এত ছোট টাকার নোট গণনা করার লোক নেই। এছাড়া ছোট নোটগুলো ছেঁড়া ফাঁটা বেশি থাকে। এ কারণে ওইসব নোট নেওয়া হয় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ