পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ মিডিয়াকে জানিয়েছেন, ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দেবেন। আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে কওমী নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে স্বীকৃতি নেবেন। আমরা কওমী ঘরানার বিরাট অংশ এ স্বীকৃতি চাই না। কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষাব্যবস্থা ধর্মহীন কর্তৃপক্ষের আওতায় স্বীকৃতি আশা করে না। গতকাল এক বিবৃতিতে দেশের বর্ষীয়ান আলেম হেফাজতে ইসলামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল মালেক হালিম এ কথা বলেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শীর্ষ ২০ মাদরাসা প্রধান ও ইসলামী সংগঠনের নেতা এ যৌথ বিবৃতিতে বলেন, কওমী স্বীকৃতি এতদূর অগ্রসর হয়ে গেল অথচ কওমী অঙ্গনে এর প্রক্রিয়া ও ভালো-মন্দ স্পষ্ট নয়। কারা এ বিষয়ে সরকারের সাথে দহরম-মহরম করছেন সেটাও কওমী আলেম সমাজ জানে না। গত কিছুদিন ধরে খুব গোপনে কওমী স্বীকৃতির নানা ধাপ দ্রæত অগ্রসর হয়েছে, ১১ তারিখ স্বীকৃতি হয়ে যাচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে কিন্ত আমরা ২০ জন মুহতামিমসহ লাখো আলেম কিছুই জানি না। গোপন চুক্তির মতোই গোপন কওমী স্বীকৃতিও জাতিকে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেওবন্দের আট মূলনীতিতে স্বীকৃতি নেয়া নিষিদ্ধ। গত দেড়শ’ বছরেও দেওবন্দ কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেয়নি। ভারত-পাকিস্তান, আফ্রিকা-ইউরোপেও কওমী মাদরাসা সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, স্বাধীনভাবে চলছে। কেবল বাংলাদেশে কেন স্বীকৃতির নামে কওমী মাদরাসাকে নিয়ন্ত্রণের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। হাটহাজারীর মুরব্বীরা গত একশ’ বছর স্বীকৃতির বিরুদ্ধে ছিলেন। পটিয়ার মুফতি সাহেব (রহ.) ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সময়েও স্বীকৃতির বিরোধী ছিলেন। হযরত হাফেজী হুজুর (রহ.) সবসময়ই স্বীকৃতির বিরোধী ছিলেন। আল্লামা আহমদ শফীও আমাদের কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রাখার কথা বলেছেন। বর্তমানে কওমী আলেমদের বিচ্যুত ধারার নেতা, শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ফরিদ উদ্দিন মাসউদের তৎপরতায় শামিল হয়ে কওমী ধারার কিছু আলেম যে পথে অগ্রসর হচ্ছেন তা খালেস দীনি শিক্ষার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
বর্তমান ফিতনার যুগে বাতিলের প্রভাবমুক্ত ইসলামী শিক্ষা ও চেতনার জন্য কওমী মাদরাসা অপরিহার্য। সেক্যুলার পদ্ধতির স্বীকৃতি নিয়ে দীনের আলেমরা কী মর্যাদা বা ক্ষমতা লাভ করবেন তা এক বিরাট প্রশ্ন। আমরা আল্লামা শফীসহ দেশের সব বোর্ডকে আল্লাহর ওয়াস্তে বলতে চাই, খুব ভেবে-চিন্তে কাজ করুন। আমরা শতকরা ৮০ ভাগ কওমী আলেম (বোর্ডভুক্ত বা বর্হিভূত) ভয় পাচ্ছি, সরকারি যোগাযোগ ও সখ্য যেন কওমী মাদরাসা ধ্বংসের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। দেওবন্দ সরকারি স্বীকৃতি বা সাহায্য কোনোটাই নেয় না। মুহতামিম মাও. মারগুবুর রহমান ও সাইয়েদ আরশাদ মাদানী দা. বা.-এর বক্তব্য আপনারা পড়ে দেখুন। মাও. তাকি উসমানীর বক্তব্য পড়ে দেখুন। সরকারের নিযুক্ত দরবারি আলেমদের ফাঁকে পড়ে কওমী মাদরাসাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না। শত বছরের জাতির সাহায্য, দান, সদকা, জাকাত ও কোরবানির চামড়ায় পরিচালিত দীনি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বকীয়তা বিনাশের সূচনা যেন আপনাদের দ্বারা না হয়। এ উদ্যোগে কওমী শিক্ষার ক্ষতি হলে আপনারা খেয়ানতের দায় এড়াতে পারবেন না।
আমরা বিস্মিত কওমী মাদরাসায় হস্তক্ষেপের বিষয় সামনে এলে আহমদ শফী সাহেব বলেছিলেন, কওমী মাদরাসায় হাত দিলে লাখ লাখ লাশ পড়বে। বলেছিলেন, মাদরাসা শিক্ষা হুমকির সম্মুখীন হলে দেশে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে। এখন হঠাৎ করে কী এমন হয়ে গেল যে, আল্লামা শফী সাহেব শাহবাগপন্থীদের সাথে এক হয়ে কওমী মাদরাসার ইতিহাস বদলে দিতে চাইছেন। দেশের অসংখ্য আলেমকে অন্ধকারে রেখে গোপন বৈঠকে এত কিছু হয়ে যাচ্ছে দেখে তওহীদী জনতা চরম উদ্বেগে রয়েছে। বিশেষত দেবীমূর্তি, খুতবা নিয়ন্ত্রণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি অধিগ্রহণ, মুসলমানদের জন্য মোঙ্গল শোভাযাত্রা বাধ্যতামূলককরণ ইত্যাদি বিষয়ে এসব নেতার অদ্ভুত নীরবতাও তওহীদি জনতার উদ্বেগের কারণ।
এ অবস্থায় স্বীকৃতির বেলায় তারা কতটা প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবেন তা জনমনে জিজ্ঞাসা হয়ে আছে। সুতরাং এখনো সময় আছে, দীনি শিক্ষার এ প্রাচীন ব্যবস্থাটিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচান। ঢাকার মিরপুর, কামরাঙ্গিরচর, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর টঙ্গি ও গাজীপুরের বিভিন্ন মাদরাসায় গণসংযোগের মধ্য দিয়ে মাওলানা আবদুল মালেক হালিম ও তার সঙ্গীয় আলেমদল স্বীকৃতির নামে সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং কওমী স্বকীয়তা বিনষ্টের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কর্মসূচি শুরু করেছেন বলেও বিবৃতিতে জানান।
মূল ধারা বিসর্জন দিয়ে কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি সুফল বয়ে আনবে না।
কওমী মাদরাসা শিক্ষক ফেডারেশন, তাওহিদী জনতার চোখের পানি, আর্থিক বিনিয়োগ, আত্মত্যাগ, সারা জীবনের স্বপ্নমাখা সাধনার ফল দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা দীনের মিনার নির্ভেজাল কুরআন-হাদীস চর্চার এই কওমী মাদরাসাগুলো জাতির আমানত।
এই আমানত সংরক্ষণের দায়িত্ব ও পাহারাদারি করার কর্তব্যও মুসলিম উম্মাহর। ওলামায়ে কেরাম এবং শিক্ষার্থী তালিবে ইলমগণ দীনি দায়িত্ব মনে করেই এবং ইলমে ওহীর চর্চা অব্যাহত রাখার ঈমানি কর্তব্য সম্পাদনেই কওমী মাদরাসা নিয়ে জীবন ক্ষয় করে থাকেন। এখানে পার্থিব কোনো স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় কাজ করে না। সে দৃষ্টিকোণ থেকেই কওমী মাদরাসার অগ্রযাত্রা আবহমানকাল থেকেই অব্যাহত। সুতরাং সেই কওমী মাদরাসার মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে তাতে কোনো অবস্থাতেই তাওহীদি জনতার সমর্থন বহাল থাকবে না এবং তা মেনেও নিতে পারবে না।
তাই কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি এ ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করেই স্বীকৃতি নেয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকরী হওয়া উচিত বলে মনে করে কওমী মাদরাসা শিক্ষাক ফেডারেশন। স্বীকৃতি নিতে গিয়ে যদি কওমী মাদরাসা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করবে না। এ ব্যাপারে এখনই চূড়ান্ত পর্যালোচনা করার দাবি জানান শিক্ষক ফেডারেশন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন কওমী মাদরাসা শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী, সহ-সভাপতি মাও. হেদায়েত কবির, মহাসচিব মুফতী কামরুল ইসলাম ভুইয়া, অর্থ-সচিব মাও. মুমিনুল ইসলাম, প্রচার সেল প্রধান পীরজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ আহসান, যুগ্মসচিব মাও. জোবাইর হাবীব ও মাওলানা আতিকুল্লাহ মাসরুর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।