পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের হাওর অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। পানিতে তলিয়ে ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে এ অঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন-আশা। বছরের একমাত্র ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। কান্নার রোল পড়েছে কৃষক পরিবারে। ফসল হানির পাশাপাশি বাজারে চালের চালের দাম কেজি ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা এ পরিস্থিতির জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন।
সুনামগঞ্জের কৃষকরা সর্বস্বান্ত : চান-ধানের মূল্য বৃদ্ধি
আজিজুল ইসলাম চৌধুরী : গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের কৃষকদের সব আশা-ভরসা ধ্যুলিসাত হয়ে গেছে। অবিরাম বৃষ্টিপাত এ জেলার কৃষকদের জন্য কাল হয়ে ওঠেছে। পানিবদ্ধতায় ও হাওর রক্ষাবাঁধ ভেঙে সব ফসল তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষককে হাওরে ক্ষেতের পাড়ে বসে কাঁদতে দেখা গেছে। আগামী দিনে কীভাবে বাঁচবেন সে ভাবনায় তারা কাঁদতে কাঁদতে অনেকটা নির্বাক হয়ে গেছেন। ফসল হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত। তাদের সামনে ঘোর অন্ধকার। ফসল হানির সাথে সাথে বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চাল-ধানের মূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল এ অঞ্চলের কৃষকরা কয়েকদিন আগেও ছিলেন বৈশাখ মাসের অপেক্ষায়। বুকে ছিল অনেক আশা। এ আশা বুকে ধারণ করে দিনক্ষণ গুনতে থাকেন। বৈশাখ মাসে তারা ধান কাটবেন। ধান গোলায় তুলবেন। এ ধান দিয়ে সংসারের সব ব্যয় নির্বাহ করবেন। কারণ এ ধানই কৃষকদের আয়ের মূল উৎস। কিন্তু চৈত্র মাসের শেষের দিকে শুরু হয় ভারি বৃষ্টিপাত। এ বৃষ্টিপাতই সব শেষ করে নিয়ে গেল। সাধারণত চৈত্রমাসে ভারি বৃষ্টিপাত এর আগে এ অঞ্চলে খুব একটা দেখা যায় না। সুনামগঞ্জ জেলা বারের প্রবীণ সদস্য মো: রইছ উদ্দিন আহমদ বলেন এ সময়ে এমন বৃষ্টিপাত এর আগে কখনও দেখি না। এ বৃষ্টিপাতই কৃষকদের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে । গত কয়েকদিনে সব ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে ।
এদিকে এ এলাকায় ফসল হানির সাথে সাথে বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চাল-ধানের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চাল প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্বি পয়েছে। তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, দোয়ারা বাজার, বিশ্বম্বরপুর, দিরাই, জগন্নাথপুর উপজেলার হাওর পাড়ের কৃষকরা জানিয়েছেন ধান-চালে দাম বাড়া শুরু হয়েছে। তারা বলছেন একদিকে ফসলহানি অন্যদিকে চালসহ নিত্র প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
৩০ হাজার হেক্টরের ফসল তলিয়ে গেছে
কিশোরগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের ৩৫টি হাওরের ৩০ হাজার হেক্টও বোরো জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। গত কয়েক দিনে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ইটনা উপজেলার মেন্ডারবাদ, বিজয় বেড়িবাঁধ, পাঙ্গাইয়া বাঁধ ও নিক্কার বাঁধ, মিঠামইন উপজেলার হাসানপুর বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার হেক্টরের বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে। গতকাল পানি বেড়ে যাওয়ায় ইটনা রায়টুটী ইউনিয়নের তলার হাওর, সদর ইউনিয়নের আলালের হাওর, জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের দক্ষিণের হাওরের ৫ হাজার হেক্টরের জমির ফসল তলিয়ে গেছে। কেবল বাঁধ ভেঙে নয়, হাওরের ভিতরে দিয়ে প্রবাহমান নদীগুলোর পার উপচে পড়া পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। পুরো হাওর এলাকার একই চিত্র। অনেক কৃষক জমিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছে। কিশোরগঞ্জ জেলার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, সরকারী হিসাব মতে এই পর্যন্ত জেলার হাওর অঞ্চলের ১৯ হাজার ৭ শত ৩০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে আর প্রতিদিনই পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ বাড়ছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, এ পর্যন্ত ৩০ হাজার হেক্টরের বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
হাকালুকি হাওর পাড়ে কৃষকের কান্না
মোঃ মানজুরুল হক
এ বছর ফলন ভালো হাওয়ায় কৃষকরা স্বপ্ন দেখছিলেন বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু ধান পাকার আগেই হঠাৎ করে টানা ৭ দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চোখের সামইে হাকালুকি হাওরের প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকদের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়েছে। চৈত্র মাসের অকাল বৃষ্টিতে শত শত কৃষকের স্বপ্ন বন্যার পানিতে মিশে গেছে। লাগাতার ঝড়, শীলাবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ মুক্ত জলাশয় হাকালুকি হাওরের বোরো ধানের। কয়েকদিন আগে যেখানে বোরো ধানের বিস্তৃত সবুজে সমারেহ ছিল সেখানে এখন শুধু পানি আর পানি। ঝড়বৃষ্টি ও শীলাতে হাওর তীরের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতিতে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বোরো ধান সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় হাওর তীরে এবার তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা অঞ্চল এবং সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা অঞ্চলের ছোট বড় ২৩৭টি বিলের পারে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরে এবার বোরো ধান আবাদ করা হয়। অনুকুল আবহাওয়ার কারণে ধানে তেমন রোগ বালাই দেখা না দেয়ায় ফলনও ভাল হয়। এ বছর ফলন ভাল হাওয়ায় কৃষকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু ধান পাকার পূর্বেই হঠাৎ করে আসা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চোখের সামইে কৃষকের সেই স্বপ্ন তলিয়ে যায়। ধানের শীষ বের হওয়ার পর গত বুধবার থেকে ভারি বর্ষণ ও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে হাওরে বন্যার পানি টুইটুম্বুর। আর বৃষ্টি না হলেও যে হারে হাওরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বোরো ধান কাটার আর কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানান কৃষকরা ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, হাকালুকি হাওরে যে হারে পানি বাড়ছে, তাতে আর বৃষ্টিপাত না হলেও বোরো ধান রক্ষা করা কষ্টকর হবে। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে রোদের দেখা মিললে কৃষকরা কিছুটা হলেও ধান তুলতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে অধিকাংশ ধান কাঁচা থাকার ফলে নষ্ট হয়ে যাবে।
সিলেট বিভাগকে দুর্গত ঘোষণার দাবি
আবুল কালাম আজাদ
সিলেট হাওর রক্ষা আন্দোলনের উদ্যেগে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল (বুধবার) বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন পালন করা হয়।
এ সময় সিলেট বিভাগকে দর্গত এলাকা ঘোষণাসহ ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। অন্যান্য দাবি হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল প্রদান, বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ প্রদান, পাঁচহাজার টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ও এনজিও ঋণ মওকুফ, সহজ শর্তে কৃষিঋণ প্রদান ও পানিউন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান।
সংগঠনের আহŸায়ক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান ফাতেমার সভাপতিত্বে ও কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল হোসেন এর পরিচালনায় মানববন্ধন চলাকালীন সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তারা হাওর অঞ্চল মন্ত্রণালয় গঠন, পূর্ণাঙ্গ হাওর বোর্ড সিলেটে স্থাপন ও কার্যক্রম চালু, ভরাট নদী-নালাগুলো খনন, হাওরাঞ্চলের জলাশয়গুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়ার জোর দাবি জানান। একই সাথে হাওর অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের গৃহিত হাওর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিলেট সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জৈন উদ্দিন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড সিকান্দর আলী, সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক এমএম রউফ পল্লব, সংগঠনের সদস্য ও বিশ্বম্ভরপুর সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক জামাল হোসেন, দেলওয়ার হোসেন তালুকদার, প্রভাষক দুলাল আহমদ, প্রভাষক ইন্তাজ আলি, প্রভাষক জহুরুল ইসলাম, প্রথম আলো বন্ধুসভার সিলেট এর উপদেষ্টা মোমেন মিয়া, ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন, জুনেদ আহমদ, জালাল মিয়া, শফিকুল ইসলাম, গুলজার হোসেন খোকন, বিশ্বম্ভরপুর সমিতির সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগ নেতা ইকবাল হোসেন, রুবেল আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত তানজিল আনোয়ার, খালেদ আহমদ, রানু বিশ^াস,কুতুব উদ্দিন, ছাত্রনেতা আহসান উদ্দিন প্রমুখ।
নবীগঞ্জে ১৫ হাজার হেক্টর জমির ধান পানির নিচে
ফখরুল আহসান চৌধুরী
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ১৫শ’ হাজার হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে আনুমানিক প্রায় কয়েকশত কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। গত ২৮ মার্চ থেকে উপজেলায় মাঝারি বৃষ্টিপাত চলছে। এতে নদ-নদী, খাল, বিলের পানি বেড়ে চলেছে। ধান পাকার আগেই কাঁচা ধানের তোড় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে শুধু পানি আর পানি। আগের মত দেখা যায় না গোছা গোছা ধানের শীষ। অসময়ের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে নদনদী ও খালবিলের পানি বেড়ে বিভিন্ন হাওর ভেসে যাচ্ছে। উপজেলার বরার হাওর, দীঘলবাকের সাতাশি বন, কসবার ফেরিসাইট, এরাবরাব নদীর চর, মখা হাওর, গুঙ্গিয়ারজুরি হাওর, সৌলাগর, লাউয়াইল বিল, আলমপুরের বরবিল, বেরিবিলসহ উপজেলার ২৫টি হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. আলমগীর চৌধুরী বলেন, অকাল বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন হাওরের ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ দুলাল উদ্দিন বলেন, হাওর এলাকার ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে হাওর উন্নয়ন ও আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন প্রকল্প জরুরী। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগী হয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধিনে নদী খনন কাজ শুরুতে করতে হবে।
দিরাইয়ে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম, প্রশাসন নীরব
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার
সিলেট ও চট্টগ্রামের বাজারে চাল নেই-এই অজুহাতে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের চাল ব্যবসায়িরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হাওরে পানি প্রবেশের সুযোগে এসব ব্যবসায়িরা সিÐিকেট করে চালের দাম গত এক সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ শত টাকা প্রতি বস্তায় বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। তবে এভাবে চালের দাম বাড়ার পরও স্থানীয় প্রশাসনের কোন ভূমিকা না থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দিরাই বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের অব্যাহত বৃষ্টির কারণে উপজেলার সবকটি হাওর ঝুঁকিতে থাকায় ও কয়েকটি হাওর পানিতে ডুবে যাওয়ায় চালের বাজারে দাম বেড়ে চলেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তাতে ২/৩ শত টাকা বেড়েছে বলে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হঠাৎ বাজার থেকে চাল উধাও হওয়ার কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরকে সংকটে পড়তে হচ্ছে। জানা যায়, চিকন সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকা, আর মোটা চাল ১ হাজার ৯ শত টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল চিকন ২ হাজার টাকা ও মোটা ১ হাজার ৭ শত টাকা। ব্যবসায়িরা আরো জানান, দিরাইয়ের বাজারসহ সিলেট এমনকি চট্টগ্রামের বাজারেও হঠাৎ চালের দাম বড়ে গেছে। তাছাড়া আটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ১ হাজার ১ শত থেকে ২ শত টাকা করে। এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য নিতে বার বার মোবাইলে কল দেয়ার পরও তিনি রিসিভ করেননি।
নেত্রকোনায় নতুন নতুন হাওর প্লাবিত
এ কে এম আব্দুল্লাহ : ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকায় নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন হাওর প্লাবিত হচ্ছে। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁধ ভেঙ্গে হাওরের ২৫ হাজার হেক্টর জমিসহ জেলার মোট ২৯ হাজার ৪ শত ৪০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহের অব্যাহত ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মোহনগঞ্জের চর-হাইজ্দা বাঁধ কীর্ত্তণখোলা বাঁধসহ ৮টি বাঁধ ভেঙ্গে বিভিন্ন হাওরে কাঁচা-পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়াও ভারিবর্ষণের কারণে মদন, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, বারহাট্টা, পূর্বধলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। হাওর রক্ষাবাঁধ ভেঙ্গে ও ভারিবর্ষণের কারণে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল। সেই সঙ্গে লীন হয়ে গেছে কৃষকের সব স্বপ্ন আশা। ফলে কৃষক পরিবারে চলছে আহাজারী।
হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার হাওর পরিদর্শনে আসেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মঈন উদ্দিন আব্দুল্লাহ। তিনি সরেজমিন ঘুরে জানান, সময় মতো সঠিকভাবে মেরামত না করায় বাঁধ ভাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। অকাল বন্যায় হাওরের যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে না কৃষকেরা। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করবে। এ সময় সাথে থাকা ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ্ উদ্দিন বলেন, আগামীতে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
খালিয়াজুরীতে ১২ বাড়িতে হামলা
এদিনে আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করতে না যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১২টি বাড়ীতে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার রাতে নেত্রকোনা খালিয়াজুরী উপজেলার চাকুয়া ইউনিয়নের হারারকান্দি দাসপাড়া গ্রামে।
মৌলভীবাজারের ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা
এস এম উমেদ আলী : ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের উঠতি ফসল বোরো ধান তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক দিন ধরে ঢলের পানিতে তলিয়ে থাকায় ধান গাছ পচে নষ্ট হচ্ছে। পুূরো বছরের খাবার ও জীবিকা নির্ভর করে হাওরের ফসল সুষ্টু ভাবে ঘরে তোলার উপর। স্থানীয় চাষীরা এ বছর বোরো ধান ঘরে তুলতে না পেরে পড়েছেন হতাশায়। তার পরও অনেক কৃষক পানির নীচে তলিয়ে থাকা কাঁচা ধান কেটে ঘরে তুলছেন।
কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বিস্তৃত অংশ নিয়ে হাকালুকি হাওর। এ সব এলাকার কৃষকরা যখন বাম্পার ফলনের আশায় পাকা ধান কাটার চিন্তা করছেন ঠিক সেই সময় পাহাড়ী ঢলে বোরো ফসল ৮ থেকে ১০ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে জুড়ী, ফানাই, কন্টিনালা ও সোনাই নদী দিয়ে হাকালুকি হাওরে হঠাৎ ঢলের পানি ঢুকেছে।
টানা তিন দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজার জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় বিভিন্ন হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। হেক্টরের পর হেক্টর পাকা ও আধা পাকা বোরোধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হাওর পাড়ের কৃষক।
কৃষকরা একমাত্র ফসল বোরোধান চোখের সামনে হারিয়ে যাওয়ায় নি:স্ব হয়ে পড়েছেন তারা। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা দুবেলা দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তায় এখন তারা উদ্বেগ উৎকন্ঠায়।
বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মো. শাহজানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রতিটি হাওরে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা সরজমিনে মাঠ পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করার চেষ্ঠা করছি। প্রাথমিক ভাবে যার আর্থিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা হতে পারে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংঙ্কর চক্রবর্তী জানান জেলার মনু,ধলাই,ফানাই,বিলাস ও জুড়ী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনও বিপদ সীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি হয়ে আগাম বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
তিস্তায় পানি বৃদ্ধি : দশটি গ্রাম প্লাবিত
ময়নুল হক, ডোমার(নীলফামারী) থেকে : কয়েকদিন আগেও যেখানে ধুধু চর ছিল সেখানে হঠাৎ প্লাবনে বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক রবিশষ্য তলিয়ে গেছে।
নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডিমলা উপজেলার ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও বহু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘চারদিন আগে পানির অভাবে তিস্তা নদীর বুক ধুধু বালুচর ছিল। সোমবার রাত থেকে বুধবার সকাল পযন্ত উজান থেকে পানি আসায় চরখড়িবাড়ি ও পূর্বখড়িবাড়ি মৌজার আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।’
‘ওইসব গ্রামের ভ‚ট্রা, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন ও তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তাদের অনেক মেহনতের ফসল নষ্ট হওযায় পরিবার-পরিজনের কথা চিন্তা করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড় সিঙ্গেরসড় ও পূর্বঝাড় সিঙ্গেরসর গ্রাম প্লাবিত হয়ে কালোজিরা, মরিচসহ বেশকিছু ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে বলে জানান ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের নিবাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশীদ জানান,ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রোববার রাত থেকে তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে থাকে। বুধবার সকালে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদী বিপদসীমার ৫০ দশমিক ৭০ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।