মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
মিঞা মুজিবুর রহমান : ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালের কোনো কোনটিতে প্রায় সব শ্রেণীর রোগীর চিকিৎসা হবার কথা। এ হাসপাতালগুলোর জন্য সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ করা হয় প্রতি বছর। কিন্তু হাসপাতালগুলো থেকে সাধারণ রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পান না বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে।
সরকার তথা জনগণের দেয়া অর্থে এসব হাসপাতালের চিকিৎসাসরঞ্জাম, ওষুধ সবই কেনা হয়, যাতে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় কোন সমস্যা না হয়। চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মচারীদের বেতনভাতাও প্রদান করা হয় সরকারি কোষাগার তথা জনগণের প্রদত্ত ট্যাক্সের টাকা থেকে। উদ্দেশ্য একটাই জনগণ যেন প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সরকারি হাসপাতাল থেকে সাধারণ মানুষ আশানুরূপ চিকিৎসাসেবা পান না। তাই যাদের সামর্থ্য আছে তাদের বেশিরভাগই বেসরকারি হাসপাতালে অথবা বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। গরিব মানুষ সহায়-সম্বল বিক্রি করে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়ে যদি সুচিকিৎসা আর প্রয়োজনীয় সেবা পেতেন তাহলেও কোনো আফসোসের ব্যাপার ছিল না। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণীর কর্মচারী-কর্মকর্তার দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের খুব সাধারণ চিকিৎসাসেবাও সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মফস্বলের হাসপাতালগুলোতে সময়মতো ডাক্তার থাকেন না। নার্স পাওয়া যায় না। প্রয়োজনীয় ওষুধতো বাইরের ফার্মেসি ব্যতীত হাসপাতাল থেকে পাওয়া দুরাশাই ধরে নিতে হয় রোগী ও তাদের স্বজনদের।
সরকারি হাসপাতালে লাশ পড়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ছুটির দিনে ডাক্তার থাকেন না, বেশিরভাগ যন্ত্রপাতিই নষ্ট ইত্যাদি। এই হচ্ছে সরকারি হাসপাতালের মোটামুটি বাস্তবচিত্র। কোথাও জরুরি রোগী হাসপাতালের দোরগোড়ায় এসে পড়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ভর্তি করার ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার থাকেন তো, বেড নেই। ওষুধ নেই। যন্ত্রপাতি বিকল। জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ, রাসায়নিক নেই। এমনকি দু-একটা সাধারণ ওষুধ পাওয়া গেলেও সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল অথবা নিম্নমানের বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সম্প্রতি কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ পেয়েছে র্যাব। এমনকি নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ও উপকরণ দিয়ে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চালাবার জন্য কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জরিমানাও করা হয়েছে। কোনো কোনো হাসপাতালে সিট বাণিজ্যও চলে অবাধে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্ধারিত ভর্তি ফির অধিক অর্থ, সিট ভাড়া নেবার অভিযোগ তো প্রায় প্রত্যেকটি সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধেই শোনা যায়। শুধু কি তাই, অনেক হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা রোগীদের কাছে চাহিদামতো অর্থ না পেলে দুর্ব্যবহার করেন। অপ্রয়োজনে জরুরি বিভাগে নিয়ে কাক্সিক্ষত অর্থ আদায় হয়ে গেলে রোগীর প্রতি অবহেলার অভিযোগও রয়েছে। কোনো কোনো বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে নেবার অভিযোগ তো অনেক পুরনো।
যা হোক, চিকিৎসা নিয়ে এমন অব্যবস্থাপনা আর অনিয়ম চলতে দেয়া যায় না। চিকিৎসা একটি সেবাধর্মী কাজ। এ নিয়ে অবহেলা আর বাণিজ্যিক কর্মকা- গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মিডিয়া এন্ড ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।