Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কৃষকের কোনো কাজে আসছে না বেতাগীর বীজাগারগুলো

সংস্কারের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী

প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ৫ এপ্রিল, ২০১৭

বেতাগী (বরগুনা) উপজেলা সংবাদদাতা : বেতাগীতে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পাকিস্তান আমলে নির্মিত ৭টি বীজাগারের মধ্যে ৬টি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ১টি। বেশকিছু বীজাগার ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত ও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে। বীজাগারের অভাবে নিম্নমানের বীজ ব্যবহার করে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষকরা। ফলনের পরিমাণও কম পাচ্ছে। যে বীজাগারগুলোর অস্তিত্ব টিকে আছে সেগুলোর নামেমাত্র সংস্কার কাজ করে লুটপাট করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা। জানা গেছে, ১৯৬৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৬৯ সালের মধ্যে তৎকালীন সরকারের নির্দেশে বীজাগারগুলো নির্মিত হয়। কোথাও ব্যক্তিমালিকনাধীন, কোথাও সরকারি জমিতে এসব বীজাগার ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে বেশিরভাগ বীজাগার নির্মাণ করা হয় ব্যক্তিমালিকাধীন জমিতে। এসময় জমির মূল্য কম থাকায় এবং বেশিরভাগ মানুষ বিত্তশালী হওয়ায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে বীজগার নির্মাণে বাধা দেয়নি। জনগণের স্ব-ইচ্ছায় বীজাগারগুলো নির্মিত হয়। কিন্ত বীজাগারগুলো এমন সব স্থানে নির্মাণ করা হয় যার অনেকটাই কৃষকের নাগালের বাইরে নির্জন স্থানে। একরকম জঙ্গল পরিষ্কার করে বীজাগার নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে সেখানে কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিএডিসির মাধ্যমে বীজ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে বীজাগারগুলো দূরবর্তী স্থানে নির্মিত হওয়ায় কৃষকদের বীজ সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট হতো ফলে সেখানে কেউ যেতনা। নব্বইয়ের দশকে বিএডিসির কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ায় আস্তে আস্তে আরো ভাটা পড়ে ফলে বীজাগারগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ৭টি বীজাগার থাকলেও বর্তমানে ৬টি বীজাগারের অস্তিত্ব কোনোমতে টিকে আছে। দেয়ালে লোনা ধরে দিন দিন শেষ অস্তিত্বটুকুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের বদনীখালী এলাকায় নির্মিত বীজাগারটি অনেক আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর বেতাগী সদর ইউনিয়নের একাংশ পৌর এলাকায় রূপান্তরিত হওয়ায় বীজাগারটি পৌর শহরের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় বেতাগী ইউনিয়ন বীজাগারবিহীন ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। পৌর শহরে অবস্থিত বীজাগারটিও ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মোকামিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল মৃধা অভিযোগ করেন, বীজাগারগুলোর নামেমাত্র সংস্কার কাজ করে লাখ লাখ টাকা ইতোপূর্বে ঠিকাদাররা হাতিয়ে নিয়েছেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট আসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে। বিবিচিনি ইউনিয়নের গড়িয়াবুনিয়া, হোসনাবাদের জলিশা, মোকমিয়ার মাছুয়াখালী, কাজিরাবাদের কুমড়াখালী ও সড়িষামুড়ি ইউপি ভবনসংলগ্ন বীজাগারগুলো ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে। হোসনাবাদ গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন জানান, বীজাগারেরর অভাবে কৃষকদের অনুক‚লে বরাদ্দকৃত অনেক কৃষি উপকরণ উপজেলা সদরে গিয়ে আনতে পরিবহন ব্যয়ের পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বুড়ামজুমদার গ্রামের কৃষক আব্দুর রব বলেন, ‘বীজাঘর না থাহায় মোগো কষ্টের শ্যাষ নাই।’ বেতাগী সদর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত মিস্ত্রী জানান, বীজাগারের অভাবে কৃষককুলকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কৃষকদের জন্য মালামাল রাখার জায়গা নেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, পাকিস্তান আমলে নির্মিত বীজাগারগুলো অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দ্রæত এগুলো সংস্কার প্রয়োজন। সদর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বীজাগার সংস্কার সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন। অব্যবহৃত ও সংস্কারের অভাবে ধসে যাওয়া ভবনগুলো সংস্কার করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কার্যালয় স্থাপন, থাকার স্থান এবং আইপিএম ক্লাব করা হলে কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকদের কাজে আসবে এমনই মতামত ব্যক্ত করেন শিক্ষিত তরুণ কৃষক মো. কামরুল হাসান বশির। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বেদখল হয়ে যাওয়া বীজাগারগুলো উদ্ধার ও ব্যবহার উপযোগী করতে আমরা অচিরেই উদ্যোগ নেব।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ