বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার, দিরাই থেকে : ‘আমার জন্য নয়, কয়েকটা গরুর জন্যই এখন আমাকে ধান কাটতে হচ্ছে’ বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন উজানধল গ্রামের কৃষক শাবান মিয়া। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে প্রান্তিক কৃষকদের স্বপ্নের বোরো ধান। গতকাল (সোমবার) সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বিভিন্ন হাওরে সরেজমিন গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। এখন পর্যন্ত হাওরে আবাদকৃত বোরো ধান পরিপক্ক ছড়ায় পরিণত হয়নি, বর্তমানে ফুল ও দুধে অবস্থান করছে উপজেলার বিশাল হাওরগুলোর কাঁচা ধান।
দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে মোট ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। গত কয়েকদিনের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টির কারণে ইতিমধ্যেই উপজেলার বেশ কয়েকটি হাওরে পানি প্রবেশ করে ডুবে গেছে কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের সোনালী ফসল। সূত্র জানায়, বাঁধ ভেঙে ও জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৩শত হেক্টর বোরো ধান, এরমধ্যে শুধুমাত্র বাঁধ ভেঙে ৩ হাজার ৩শত হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে ৩ হাজার ৫শত হেক্টর। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র আরো জানায়, এ পর্যন্ত তুফানখালি, বৈশাখি ও পুটিজুড়ি বাঁধ ভেঙে ছোট-বড় ৯টি হাওর আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে তাড়ল, জগদল ও কুলঞ্জ ইউনিয়নে বেশি ক্ষয়ক্ষতি দেখা দিয়েছে। তাদের হিসেব মতে, হাওরে এখন পর্যন্ত বোরো ধানের চিত্র হলো দানাতে আছে ১৪ শতাংশ, ফুলে আছে ৬০ শতাংশ ও দুধে আছে ২৫ শতাংশ। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে জানা গেছে। এখনও বাঁধ ভেঙে ও সড়ক ডুবে নদী-হাওরে প্রতিদিনই পানি প্রবেশ করছে হু হু করে।
উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজানধল গ্রামের কৃষক শাবান মিয়া বলেন, নিজের জন্য ধান কাটছি না, বাড়িতে কয়েকটি বোবা গরু রয়েছে, তাদের আহারের জন্যই এই কাঁচা ধান কাটতে হচ্ছে বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। এ বছর তিনি ২০ বেদার বোরো জমি করেছিলেন বলেও জানান। এখন পর্যন্ত কোন ধানই পরিপক্ক হয়নি, ইতিমধ্যে হাওর ডুবতে বসেছে। তিনি আক্ষেপ বরে বলেন, প্রতি বছরই আমাদের কৃষি নিয়ে বাড়তি কষ্ট করতে হচ্ছে। নরোত্তমপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ আক্ষেপ করে বলেন, ধান পরিপুষ্ট হয়নি, তারপরও তা কাটতে হচ্ছে। কারণ, যদি এ ধান থেকে কিছুই পাবো না, শুধুমাত্র মনকে শান্তনা দিতেই এ কাজ করছি। কাদিরপুর গ্রামের কৃষক নিয়ামত আলী জানান, ধান এখনও পাকেনি, তারপরও কাঁচা ধান কাটছি। হাওরে প্রতিদিনই পানি বাড়তেছে, রাত পোহালে যে এই ক্ষেতে ধানের চিহ্ন পাবো, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে বলেই কাঁচা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছি। এ বছর তিনি ১ হাল জমিতে বোরো আবাদ করেছেন বলেও জানান।
এদিকে দিরাই উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খলিলুর রহমানের কাছে বেড়িবাঁধ নির্মাণে কত টাকা এসেছিল-জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখন হাওরে আছি, ২/৩ দিন পর ফোন দিলে জানতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ পর্যন্ত বেড়িবাঁধের কাজ ৭০-৮০ শতাংশ হয়েছে। ৩১শে মার্চের ভেতরে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করা কথা বলেই মোবাইলের লাইন কেটে দেন। এরপর কয়েকবার তাকে ফোন করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেন নি।
দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার জানান, দিরাইয়ে বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বাঁশ, গুড় ও চিড়া নিয়ে গেছি। মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কাজে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা না থাকায় আমরা যেমন জোর দিয়ে কথা বলতে পারিনা, তেমনি তাদের কোনো কাজ পরিদর্শনও করতে পারিনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।