পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলায় দৌলতপুর ইউনিয়নে ‘হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ চল্লিশ দিনের কর্মসূচি (ইজিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজ না করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকা। এমনকি জেলে থাকা ব্যক্তিদের স্বাক্ষর জাল ও তার উপস্থিতি দেখিয়ে সরকারি এই অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। অনেক রাস্তায় দেখা গেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তথ্য সম্বলিত কোনো সাইনবোর্ড নেই। হরিণাকুন্ডু পিআইও অফিস সূত্রে জানাগেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে হরিনাকুন্ডু উপজেলার দৌলতপুর ইউয়িনে ৩টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্প ৩টির মধ্যে ছিল পার-দখলপুর বাবুলের বাড়ির নিকট থেকে ভেড়াখালী ঈদগাহ পর্যন্ত রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ। ভেড়াখালী সোলেমানের বাড়ির নিকট হতে ভেড়াখালী ঈদগাহ পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা মেরামত ও হিঙ্গেরপাড়া পাকা রাস্তা হইতে অর্জুন খাল পর্যন্ত রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ। প্রকল্প ৩টি বাস্তবায়নের জন্য ১শ’ ৫৪ জন উপকারভোগী শ্রমিকের তালিকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। উপকারভোগী প্রত্যেক শ্রমিকের প্রতিদিনের মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ২শ’ টাকা। ইউনিয়নটিতে ৪০ কর্মদিবসে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ বরাদ্ধ দেয়া হয় ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা। মূল বরাদ্ধের প্রায় ১০ পার্সেন্ট ননওয়েজ বাবদ ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা ছিল। সর্বমোট বরাদ্ধ প্রায় ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সর্দার ভাতা প্রতিটা প্রকল্পের জন্য ২ হাজার টাকা। ননওয়েজের টাকা দিয়ে নির্ধারিত প্রকল্পে প্যালাসাইট, আরসিসি পাইপ, ঝুড়ি-কোদালসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করার কথা ছিল। সরেজমিনে প্রকল্প ৩টি ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তথ্য সম্বলিত কোনো সাইনবোর্ড নেই। হিংগার পাড়া পাকা রাস্তা হইতে অর্জুন খাল পর্যন্ত রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ কাজে মোট শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৫১ জন। অথচ সেখানে ৩২ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। প্রকল্পের সর্দার জামাত আলী জানান, তারা প্রতি সপ্তায় ৩২ জন শ্রমিক ৫ দিন করে রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করছে। এ প্রকল্পে কতজন শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা তাদের জানা নেই। ভেড়াখালী সোলেমানের বাড়ির নিকট হতে ভেড়াখালী ঈদগাহ পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা মেরামত কাজে নির্ধারিত শ্রমিক সংখ্যা ৫১ জন। অথচ সেথানে মাত্র ২৬ জন শ্রমিককে মাটি কাটতে দেখা গেছে। ২৫ জন শ্রমিকের কোনো অস্তিত্ব মেলেনি। এ প্রকল্পে উপকারভোগী নারী শ্রমিক দৌলতপুর গ্রামের সুখীরন নেছা জানান, তারা ৩২ জন শ্রমিক প্রতি সপ্তায় ৫দিন মাটি কাটার কাজ করছে। এর বেশি আর কোনো শ্রমিক এ রাস্তায় কাজ করতে আসেনি। তিনি আরও জানান, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের রাস্তায় মাটি কাটতে হয়। ২নং প্রকল্পের সভাপতি ভেড়াখালী গ্রামের মেহের আলী মেম্বর মানব পাচার মামলায় জেল হাজতে রয়েছেন। চুয়াডাঙ্গার একটি মামলায় তিনি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাজতে রয়েছেন। হাজতে থাকা অবস্থায় তার স্বাক্ষরে কিভাবে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে মেম্বর মেহের আলীর সাক্ষর জাল ও তার ভুয়া উপস্থিতি দেখানো হচ্ছে। পার-দখলপুর বাবুলের বাড়ির নিকট হতে ভেড়াখালী ঈদগাহ পর্যন্ত রাস্তা রক্ষলণাবেক্ষণ প্রকল্পে কোনো উপকারভোগী শ্রমিককে রাস্তায় কাজ করতে দেখা যায়নি। নির্ধারিত প্রকল্পের রাস্তায় শ্রমিক কাজ না করার ব্যাপারে প্রকল্প সভাপতি সাইফুর রহমানের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ওই রাস্তার কাজ হয়ে গেছে এখন গ্রামের ভেতর কাজ চলছে। একটি সূত্র জানিয়েছে ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে অন্য রাস্তায় মাটি ফেলিয়ে রাখা হচ্ছে। সামনে কাবিখা, টিআর এর কাজ এলে ওই কাজ না করে টাকা তুলে নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের একজন ইউপি সদস্য জানান, প্রতিটি প্রকল্পে ৩২জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। তিনটি প্রকল্পে মোট শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৯৬ জন। বাকি ৫৮ জন শ্রমিকের হিসাব চেয়ারম্যান জানেন। ৫৮ জন শ্রমিকের নামের তালিকা কাগজে কলমে থাকলেও তারা রাস্তায় কাজ করতে আসেনি। কাজ না করিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। কাজ দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত (ট্যাগঅফিসার) সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলে থাকা প্রকল্প সভাপতির স্থানে নতুন আরেকজন সভাপতি করা হয়েছে। তিনি জানান, আমি উপজেলার স্কুল ভিজিট করার কারণে ঠিকমতো কর্মসৃজনের কাজ দেখতে পারি না। তবে যতটুকু পারি সঠিক করার চেষ্টা করছি। তবে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগসাজস করে এই টাকা লোপাট করা হয়েছে। ৩ নং প্রকল্পের সভাপতি হিঙ্গের পাড়া গ্রামের ফারুক আহম্মেদ এর কাছে রাস্তায় শ্রমিক কম থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার প্রকল্পে চেয়ারম্যান নিজে ৩২ জন শ্রমিক দিয়েছে। আমি শ্রমিকের ব্যাপারে কিছুই জানি না। ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর বুড়োর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু শ্রমিক কাজ থাকায় অনুপস্থিত ছিল। তাছাড়া বাকি কাজ সুচারুভাবেই হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত পিআইও) আব্দুর রহমানের কাছে শ্রমিক সংখ্যা কম থাকা সত্তে¡ও বিল প্রদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, হরিনাকুন্ডুর ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবোনা। আমি কোনো রাস্তাঘাট চিনিনা। আমি ছাড়া বিল-ভাউচারে আরও তিনজন স্বাক্ষর করেছে। এলাকাবাসি জানিয়েছেন প্রকল্পের রাস্তায় কোন তথ্য সম্বলিত সাইন বোর্ড লটকানো না থাকায় কি ভাবে কাজ করানো হচ্ছে তা সম্পর্কে জানা যায়নি। যে কারনে মেম্বর চেয়ারম্যানরা তাদের ইচ্ছামতো কাজ করেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, হরিণাকুন্ডু উপজেলার অন্যান্য প্রকল্পেও এমন পুকুর চুরির ঘটনা হচ্ছে। তদন্ত করলেই বিষয়টি ধরা পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।