Inqilab Logo

শনিবার, ০১ জুন ২০২৪, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দুর্যোগ মৌসুমে ঝুঁকিতে সাতক্ষীরার ২১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ

দ্রুত সংস্কার করা না হলে প্লাবিত হবে গোটা এলাকা

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরার প্রায় ২১০ কিলোমিটার উপক‚ল রক্ষা বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রæত সংস্কার করা না হলে আসন্ন দুর্যোগ মৌসুমে এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে গোটা এলাকা। দেখা দিতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা ও বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন এবং আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, খাজরা, আনুলিয়া ও বড়দল ইউনিয়ন ঘিরে প্রবাহিত কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী এবং দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা ও কোমরপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে কোথাও কোথাও আর মাত্র এক-দেড় হাত অবশিষ্ট রয়েছে। যা যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে গোটা এলাকা।
খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, জেলার ৭৯৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামের শিক্ষক অসীম কুমার মন্ডল জানান, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি, পূর্বপাতাখালী, চাউলখোলা ও বন্যতলায় বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ওইসব পয়েন্টে বেড়িবাঁধ যেকোন সময় ভেঙে নদীগর্ভে ভেসে যেতে পারে।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আতাউর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নের চারদিক কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী বেষ্টিত। অন্তত ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার আরেকটি দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা। গাবুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাকছুদুল আলম বলেন, আইলা ও সিডরে বিধ্বস্ত গাবুরার নাপিতখালী, লেবুবুনিয়া, কালিবাড়িসহ তার আশপাশের এলাকায় বেড়িবাঁধের অবস্থা ভাল না। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ না ভাঙলে কখনও খোঁজ-খবর নেয় না।
জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের হিজলিয়া, কোলা, শুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, দয়ারঘাট, মনিপুর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে আর এক-দুই হাত অবশিষ্ট আছে। এ বছর বেড়িবাঁধ ভেঙে তার ইউনিয়ন অন্তত চারবার প্লাবিত হয়েছে।
বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার বাঁধ ভাঙলে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড তলিয়ে যায়। অবকাঠামো নাজুক হয়ে পড়ে। বাঁধ ভাঙলে সংস্কার করা হয়, ভাঙার আগে বার বার বলা সত্তে¡ও কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। তার ইউনিয়নের অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঠিক একই অবস্থা আনুলিয়া, বড়দল, খাজরা ইউনিয়নেও।
আর দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা ও কোমরপুর এলাকায় সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের অবস্থাও একই রকম।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিএম আব্দুল মোমিন বলেন, পাউবো-১ এর আওতায় ৩৭৭ দশমিক ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে ৬০ কিলোমিটার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে নোট শিট পাঠিয়েছি। কিন্তু কোন বরাদ্দ নেই।
তিনি বলেন, সাধারণত মে মাসে দুর্যোগ মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবার তাড়াতাড়ি গরম পড়ে যাওয়ায় এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই দুর্যোগ মৌসুম শুরু হয়ে যাবে। চলবে অগাস্টের শেষ পর্যন্ত। তাই বাঁধগুলো সংস্কার জরুরী।
অপরদিকে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক বলেন, পাউবো-২ এর আওতায় ৪২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। নোট শিট প্রদানের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খুব দ্রæত টেন্ডার আহŸান করে কাজ শুরু করা হবে। এতে মাত্র ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার করা যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ