হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মুনশী আবদুল মাননান : চট্টগ্রামের রাউজানে কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নূরুল আলম নূরুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার স্বজন ও বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, গত বুধবার রাত ১২টার দিকে পুলিশ পরিচয়ে চট্টগ্রাম নগরের চন্দনপুরা এলাকার বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। নূরুর ভাগ্নে রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘ছয় থেকে সাতজন সাদা পোশাকে এবং দুই-তিনজন জেলা পুলিশের পোশাক পরা লোক এসে নূরুকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়।’ তার দাবি, ‘সাদা পোশাকে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদবির একজন কর্মকর্তাকে তারা চিনতে পেরেছেন।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ‘রাউজান থানার নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শেখ জাভেদ চন্দনপুরা বাসা থেকে নূরুল আলমকে তুলে নিয়ে যান।’ তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘নূরুল যদি মামলার আসামি হন, তাহলে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত ছিল। ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হলো কেন?’ গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই শেখ জাভেদ জানিয়েছেন, ‘বুধবার দিবাগত রাত দুইটা পর্যন্ত আমি রাউজানের একটি মাদ্রাসা এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ছিলাম। নূরু নামের কাউকে আটক বা শহরের বাসা থেকে তুলে আনার বিষয়টি আমার জানা নেই।’ নূরুর ভগ্নিপতি জাফর আহমদ জানিয়েছেন, ‘তারা তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে রাতেই রাউজানের নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি ও থানায় গিয়ে খোঁজ করেন। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানায়।’ রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাকে কারা তুলে নিয়েছে, কারা হত্যা করেছে আমরা এখনো নিশ্চিত নই।’
নূরুল আলম নূরুর স্বজন ও বিএনপির অভিযোগ এবং স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকারের বিষয়টি স্পষ্ট এবং অনেকটা দ্ব্যর্থহীন। তার অর্থ অবশ্যই এটা নয় যে, নূরুকে তুলে নিয়ে যাওয়া ও হত্যা করা হয়নি। তার হাত-পা ও চোখ বাঁধা গুলিবিদ্ধ লাশই সাক্ষ্য দেয়, তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রশ্ন ওঠে, পুলিশের পক্ষ থেকে যদি এটা করা না হয়, তাহলে কারা করল? পুলিশের নাম করে অন্য কোনো চক্র কি তবে এটা করেছে? সেটা যদি হয় তাহলে তাকে ভয়ংকর বললেও কম বলা হবে। এমনিতেই নাগরিক নিরাপত্তা তলানিতে এসে পৌঁছেছে। এর ওপর যদি কোনো অপহরণ ও হত্যাকারীচক্র এভাবে মানুষকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে তবে মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কীভাবে নিরাপদ বোধ করবে? অভিযোগ অস্বীকারের মধ্যেই পুলিশের দায় শেষ হয়ে যায় না। প্রতিটি নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের প্রধানতম দায়িত্ব। এ দায়িত্ব কোনো অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অতএব পুলিশেরই দায়িত্ব কারা সে রাতে পুলিশের পরিচয়ে নূরুল আলম নূরুকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করা। প্রধানত দুটি কারণে এটা করা দরকার। প্রথমত, অপহরক-ঘাতকদের খুঁজে বের করা পুলিশের পেশাগত দায়িত্বের অংশ। শান্তি-শৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার স্বার্থেই এটা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা অপনোদন করতে হলে অপরাধীদের খুঁজে বের করার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে কোনো রূপ ব্যতিক্রম হলে দায়-দোষ পুলিশের ওপর গিয়েই পড়বে।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা এই যে, বাসাবাড়ি বা রাস্তা থেকে মানুষ তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে এবং অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রেই অঙ্গুলি উত্থিত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে। যথারীতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযোগ অস্বীকার করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১৫ জনকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে। চট্টগ্রাম মহানগর থেকে নূরুল আলম নূরুকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে আরও তিনজনকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা একই পরিবারের সদস্য। একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। অন্য দুজন তার শ্যালক। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ডিবি পুলিশের পরিচয়ে বাসা থেকে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনো তাদের খোঁজ নেই। ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিবি তাদের তুলে নিয়ে যায়নি। ঝিনাইদহে ১০ দিনের ব্যবধানে পাঁচজনকে পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে একজন স্থানীয় কলেজের অধ্যক্ষ। তুলে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা জানিয়েছেন, তারা তাদের সন্ধান পাচ্ছেন না। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কিছুই জানে না। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা থেকে পুলিশ পরিচয়ে তিন যুবককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রোববার রাতে সাদা পোশাকের ১৫ থেকে ২০ জন লোক পুলিশের পরিচয় দিয়ে একজনকে তুলে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাতে অনুরূপ পরিচয় দিয়ে আরো দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। তাদেরও কোনো খোঁজ নেই। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা থেকে একজনকে পুলিশের পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। তারও কোনো খবর নেই। অন্যদিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা থেকে র্যাবের পরিচয় দিয়ে দুই ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারাও নিখোঁজ। মাত্র কয়েক দিনে এতগুলো মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের কোনো হদিস না পাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ঘুরেফিরে সেই একই প্রশ্ন ওঠে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের তুলে নিয়ে না থাকে তাহলে কারা নিয়ে গেছে?
বিগত কয়েক বছরে তুলে নিয়ে যাওয়া, গুম ও খুন এবং সেই সঙ্গে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে বিগত নয় বছরে সাড়ে চারশর বেশি লোক নিখোঁজ হয়েছে, যাদের বেশির ভাগেরই খোঁজ পাওয়া যায়নি। অনেকের লাশ পাওয়া গেছে। একই সংগঠনের চলতি বছরের শুরুতে দেয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১১ মাসে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৮৪ জন। তার আগের বছর নিহত হয় ১৭১ জন। তারও আগের বছর নিহত হয় ২৫৪ জন। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিখোঁজ ও বন্দুকযুদ্ধের অধিকাংশের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দোষ আরোপিত হয়েছে, যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা অস্বীকার করেছে।
তুলে নেয়া, গুম, খুন, বন্দুকযুদ্ধ মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবেই বিবেচিত। সঙ্গতকারণেই দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশে মানবাধিকারের এহেন লঙ্ঘন বিষয়ে পূর্বাপর উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ বিচারবহিভর্‚ত হত্যা ও গুমের ঘটনায় উচ্চমাত্রার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও শুনানির পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি তার এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বিচারবহিভর্‚ত হত্যা ও গুমের ঘটনায় গভীর উদ্বেগের পাশাপাশি এসব অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকায় কমিটি এই মর্মে মন্তব্য করেছে যে, এর ফলে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারগুলো বিচার পাচ্ছে না। দেশের আইনে গুমের স্বীকৃতি না থাকায় এবং তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় কমিটি আরো উদ্বিগ্ন বলে উল্লেখ করেছে। এ বিষয়ে অবিলম্বে আইন পর্যালোচনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শক্তি প্রয়োগের মৌলিক নীতিমালা ঠিক করাসহ জবাবদিহি করার আহ্বান জানিয়েছে কমিটি। এই সঙ্গে কমিটির পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে পূর্ণ অধিকার দেয়ার ও প্রয়োজনীয় সম্পদ সহযোগিতা প্রধানের আহ্বানন জানানো হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কার্যপদ্ধতির ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত নীতিমালা অনুসরণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। আইসিপিসির সনদে বর্ণিত সব নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার দেশের প্রচলিত আইনে এখনো সংযোজিত না হওয়ার প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, এগুলো পুরোপুরি সংযুক্ত করার লক্ষ্যে আইন পর্যালোচনা জরুরি। যেসব আইন ওই সনদের পরিপন্থী সেগুলো বাতিল করা উচিত।
পরিতাপজনক হলেও অস্বীকার করা যাবে না যে, প্রচলিত আইন এবং সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সর্বোচ্চ আদালত সাদা পোশাকে ও বিনা ওয়ারেন্টে আসামি গ্রেফতার না করার নির্দেশনা দিলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। যদি হতো তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা কাউকে তুলে নিয়ে যেতে পারত না। ওয়ারেন্ট ছাড়াও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হতো না। উচ্চ আদালত পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ, রিমান্ড, ডান্ডাবেড়ি ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কেও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এই নির্দেশনাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মান্য করা হচ্ছে না। ফলে রিমান্ডে আসামি নির্যাতনসহ পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা থামছে না। পর্যবেক্ষক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তুলে নেয়া, গুম, খুন এবং বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকান্ডের তদন্ত সঠিকভাবে ও দ্রুত হলে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথোচিত শাস্তি নিশ্চিত করা হলে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আপনাআপনিই কমে যেত।
মানবাধিকারের লঙ্ঘন কোনো বিবেকবান মানুষ ও দেশ সমর্থন করতে পারে না। সভ্য দেশের সবচেয়ে বড় মাপকাঠি হলো সেখানে মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত ও নিশ্চিত। এই মাপকাঠিতে আমাদের দেশের অবস্থান কোথায় সেটা গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যখন দেশে-বিদেশ প্রশ্ন ওঠে, উদ্বেগ প্রকাশিত হয়, আমরা বিচলিত না হয়ে পারি না। কারণ এর সঙ্গে নাগরিক নিরাপত্তা ছাড়াও দেশের ভাবমর্যাদার প্রশ্ন জড়িত থাকে। একটি দেশ দীর্ঘদিন মানবাধিকার লঙ্ঘনের দুর্নাম নিয়ে চলতে পারে না। অনেকে মনে করেন, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার না থাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়ছে। তারা আরো মনে করেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা এক ধরনের দায়মুক্তি ভোগ করছে। তুলে নেয়া, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি এর একটি বড় কারণ। আমরা মনে করি, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি যে পর্যালোচনা ও পরামর্শ দিয়েছে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হলে মানবাধিকার অনেকখানি সুরক্ষিত হবে। আইসিপিসির সনদ অনুযায়ী আইন সংস্কার ও প্রচলিত অন্য সকল আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত হলে সুফল পাওয়া যাবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীন ও সক্ষম করে তোলা হলে এই কমিশন মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রত্যাশিত ভূমিকা ও অবদান রাখতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।