Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেরানীগঞ্জে ভয়াল গণহত্যা দিবস আজ

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো: আব্দুল গনি, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) থেকে : কেরানীগঞ্জে আজ ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় সেই ভয়াল গণহত্যা দিবস ২ এপ্রিল। ১৯৭১ সালে এই দিনে পাকিস্তানি হানাদর বর্বর বাহিনী কেরানীগঞ্জে নির্বিচারে ও নির্মমভাবে নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে এক নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে প্রায় ৫ হাজারের অধিক নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়। নিহত এসব মানুষের মধ্যে কেরানীগঞ্জের স্থানীয় বিভিন্ন গ্রামের ছয় থেকে সাতশ’ স্থায়ী বাসিন্দা রয়েছে। নিহত বাকি মানুষেরা রাজধানী ঢাকা থেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়। জানা যায়, ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ গভীর রাতে ঘুমন্ত নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষের ওপর অতর্কিত পাক হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে অপারেশন চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। তখন জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার মানুষ বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিতে থাকে। পাক হানাদার বাহিনী রাজধানী ঢাকায় সার্চলাইট অপারেশন চালানোর এক সপ্তাহের মধ্যে কেরানীগঞ্জে অপারেশন চালানোর পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা মাফিক ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল ফজরের আযানের পরই পাক হানাদার বাহিনী মিটফোর্ড হাসপাতালের ছাদ থেকে কেরানীগঞ্জকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে জিনজিরা, আগানগর, শুভাঢ্যা ও কালিন্দী ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দারা ও এসব জায়গায় রাজধানী থেকে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো প্রাণভয়ে একটু নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার জন্য চার দিকে ছোটাছুটি করতে থাকে। অসহায় মানুষগুলো জানত না যে পাক বাহিনী এসব এলাকা চার দিক থেকে ঘিরে ফেলে আক্রমণ চালাচ্ছে। ফলে লোকজন রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য দৌড়াতে থাকে। কিন্তু পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে তারা কেউই রক্ষা পায়নি। তাদের ধরে ধরে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নজরগঞ্জ এলাকায় সেসময় প্রভাবশালী সরদার বাড়িতে পাক বাহিনী হামলা চালিয়ে চার সহোদর ভাই আফজালুল হক, ফায়জুল হক, ওবায়দুল হক ও শফিকুল হককে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া এই বাড়িতে আশ্রয় নেয়া একই পরিবারের আরো তিনজনকে পাক সেনারা হত্যা করে। এ বাড়ির পাশে এক শিল্পপতি লোককেও পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করে। এ বাড়ির পাশে এক শিল্পপতি লোককেও পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করে। নজরগঞ্জ দীঘির পাড়ে দুই সহোদর ভাই মো: রহমত উল্লাহ ও মো: মনির হোসেনকে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করে। নজরগঞ্জ কবরস্থানে একই কবরে পাক সেনাদের হাতে নিহত ১৭ জনকে একসাথে কবর দেয়া হয়। কবরস্থানের প্রধান ফটকের এক পাশে এই ১৭ শহীদের নামফলক লাগানো রয়েছে। মনু বেপারীর ঢালে একটি বাড়ির ঘরে ৫০ জন এবং বাড়ির পাশে একটি মাটির গর্তে ৪৫ জন আশ্রয় নেয়া মানুষকে পাক সেনারা ধরে একসাথে গুলি করে হত্যা করে। গণহত্যার প্রতক্ষদর্শী কেরানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম জানান, তার বাড়ির পাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পাক হানাদার বাহিনী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। হিন্দু পরিবারের কয়েকজনকেও তারা গুলি করে হত্যা করে। তার বাড়ির পাশে একটি ডোবার পাড়ে পাক সেনাদের হাতে নিহত ৮/১০টি লাশ পড়ে থাকে। মনু বেপারীর ঢালে সবচেয়ে বেশি হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক সেনারা। এখানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের পেছনে ছিল একটি খাল ও ডোবা। জিনজিরা, কালিন্দী এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে সমকালীন বিশ্বে এ ধরনের ঘটনার তুলনা নেই। পাক সেনারা মনু বেপারীর ঢাল ও এর আশপাশ এলাকায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে উল্লাস করেছিল। সেই খাল ও ডোবা এখন আর নেই। তিনি শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি সৌধটি সারা বছরই সংরক্ষণ করার দাবি জানান। সেখানে গড়ে উঠেছে রাস্তা ও মার্কেট। পাক হানাদার বাহিনী ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ সময় তারা মানুষের বাড়িঘরেও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মনু বেপারীর ঢালে বেশিরভাগ মানুষ পাক সেনাদের হাতে হত্যার শিকার হয়। তাই সেখানে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। শহীদ পরিবারের লোকজনেরা আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও ২ এপ্রিল শহীদদের কোনো সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি। সাহায্য- সহযোগিতা পাওয়া তো দূরের কথা। তাদের দাবি সরকারিভাবে শহীদদের স্বীকৃতি মিললে হয়তো তাদের আত্মা শান্তি পাবে। এদিকে এই দিবস পালন উপলক্ষে আ’লীগ, বিএনপি, কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, কেরানীগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মিলাদ মাহফিল, শোক র‌্যালি, আলোচনা সভা, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, কালো ব্যাজ ধারণ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন ও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক প্রদান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ