Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রান্নার কাজে ব্যবহৃত কড়াইয়ের ওপর কুকুর, ডালের ভেতর তেলাপোকা

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. আশরাফুল আলম, বাকৃবি থেকে : খাবারের নিম্নমান ও পরিবেশনের অস্বস্তিকর পরিবেশ নিয়ে যখন চারদিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ তখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একটি খাবার হোটেলে রান্নার কাজে ব্যবহৃত কড়াইয়ের ওপর কুকুর শুয়ে থাকতে দেখে আরও বিক্ষুব্ধ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। গত ২৮ মার্চ দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়স্থ ভাই ভাই হোটেলে ঘটনাটি লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়াও একই হোটেলে গত ২৯ মার্চ দুপুরে খাবার খাওয়ার সময় ডালের মধ্যে তেলাপোকা পড়ে থাকতে দেখেছেন বলে অভিযোগ করেন এক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, আঁইশযুক্ত মাছ রান্না, তেল ছাড়া শাক-সবজি ভাজি করা এবং তরকারির মধ্যে অনেক সময় ভাতের মাড় ও আলু দিয়ে ঝোল গাঢ় করাসহ আরও স্বাস্থ্যসম্মতহীনভাবে রান্নাবান্না চলে হোটেলগুলোতে। বাসি, নষ্ট ও বেশি হওয়া তরকারি ফ্রিজে রেখে পরের দিন পরিবেশনের অভিযোগও রয়েছে ওইসব হোটেলের বিরুদ্ধে। আগের দিনের ব্যবহৃত তেল সংরক্ষণ করে চলে পরের দিনের রান্নার কাজ। নতুন তরকারির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয় আগের দিনের তরকারি ও সবজি। আর এসব খাদ্য খেয়ে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা পেট খারাপ, এসিডিটি, ডাইরিয়ার মতো রোগে ভুগতে থাকে। শিক্ষার্থীরা জানায়, হলে ডাইনিংয়ের খাবারের মান খারাপ ও হলে হিটারে রান্নাবান্না করতে না দেয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওইসব হোটেলই ছিল একমাত্র ভরসা। কিন্তু যেভাবে খাবারের নি¤œমানের সাথে অস্বাস্থ্যকর বিষয়গুলো সামনে আসছে তাতে করে হোটেলগুলোতে খাওয়া প্রায় অসম্ভব। হলে থেকে কষ্ট করে পড়াশোনা করার পরও কোনো পুষ্টিকর খাবার খেতে না পারায় তারা খুবই হতাশাগ্রস্ত। এ ব্যাপারে হোটেলগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজরদারির পাশাপাশি হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মানোন্নয়ন করার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়েজ আহমদ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি জব্বারের মোড়ের ওই হোটেলগুলোতে একই তেল বার বার ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই খাবারগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তিনি বলেন, হেলথ কেয়ারে প্রতিদিনই পেট খারাপ, এসিডিটি, ডাইরিয়ার প্রচুর রোগী ভিড় করছে। হোটেলগুলোর নোংরা পরিবেশ আর অস্বাস্থ্যকর কালো তেল ব্যবহারের কারণেই রোগগুলো হচ্ছে। এ ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে বড় ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘটনার বিষয়ে হোটেলের মালিক কাজল গোস্বামী বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত। প্রতিদিন আমরা এভাবেই কড়াই তালা দিয়ে বাইরে রেখে যাই। তদারকির বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম আজাদ-উদ দৌলা প্রধানের সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে কড়াইয়ের ওপর কুকুরের বসে থাকার ছবি প্রকাশের পরপরই হোটেলটিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আযহারুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কিছু দিন আগেও হোটেলগুলোতে অভিযান চালিয়ে সতর্ক করেছিলাম। আমরা সরাসরি কোনো শাস্তি দিতে পারব না। কিন্তু বিএসটিআইর ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তাদেরকে জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আনা হবে। উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক ঝটিকা অভিযান চালানো হয়। সে সময় হোটেলগুলোতে বহুদিনের পুরনো তেল, বাসি খাবার, নোংরা পানি ও অপরিছন্ন পরিবেশে রান্না করতে দেখা যায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত দাম রাখা হচ্ছিল বিভিন্ন খাদ্যের। এ সময় সকল হোটেল মালিকদের খাদ্যের মান উন্নয়ন করতে ও নিয়ন্ত্রিত মূল্য রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ