পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট উৎসব। দলীয় পরিচয়ে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠে রয়েছে যথেষ্ট উত্তাপ-উত্তেজনা। এ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের মাঠে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জাতীয় রাজনীতির সাংগঠনিক তৎপরতাও ফুটে ওঠেছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার জয় নিশ্চিত করতে দলের কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতারা ঘামঝরা শ্রম দিয়েছেন। পক্ষান্তরে নগর উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার সেøাগান তুলে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে আরেকবার মেয়র নির্বাচিত করার আহŸান জানিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের মাঠ সরব রেখেছেন। জয়ের ব্যাপরে আওয়ামী লীগ যেমন আশাবাদী তেমনি বিএনপিও একই আশার মাঝে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন। তবে নির্বাচন কমিশন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যেকোনো মূল্যে কুসিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে কোনোরকম শৈথিল্য বরদাশত করা হবেনা। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নগরীর ৫৩ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ঢেকে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে।
আগামীকাল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচন নিয়ে আশা-আশঙ্কা দু’টোই ভর করেছে রাজনৈতিক মহলে। স্থানীয় নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকের কারণে নারায়ণগঞ্জের পর কুমিল্লাকে নিয়ে গোটা দেশে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে বিশ্বের বাঙলা ভাষাভাষি কোটি কোটি মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা, বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু, জেএসডির শিরিন আক্তার, স্বতন্ত্র থেকে মামুনুর রশীদ এবং সংরক্ষিত আসনে ৪০ নারী ও সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৪জনসহ মোট ১৫৮জন ৩৭টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৩টি ভোটকেন্দ্রে এবারে মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬জন ভোটরের মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯জন মহিলা ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন নির্বাচন কমিশন। ভোটাররা যাতে নিরাপদে নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে স্বাধীনভাবে বেছে নিতে পারে এমন নির্বাচনের পরিবেশ ইতোমধ্যে গড়ে তুলেছে কমিশন। গতকাল সকাল থেকে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের স্ট্রাইকিং-টহল ফোর্সের বিচরণ শুরু হয়েছে। নির্বাচনে ২৬ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ৩৪টি টিম এবং পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, জুডিশিয়াল ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি নিরাপত্তাবাহিনী ভোটের নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরী গুরুত্বপূর্ণস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট বসেছে। নগর চষে বেড়াচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম। সবমিলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বচ্ছ প্রক্রিয়া জনমনে তুলে ধরতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে নগরীর ৫৩ দশমিক ৪বর্গ কিলোমিটার এলাকা।
কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল শতভাগ স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নির্বাচনী সংস্কৃতি চর্চার এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপনে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো মহল প্রশ্ন তুলুক সেই সুযোগ দেয়া হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার সকাল ১১টা হতে কুমিল্লা টাউন হল থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তারমধ্যে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, প্যাড, সিল, অমোচনীয় কালিসহ অন্যান্য উপকরণ পুলিশি পাহারায় ১০৩টি ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হবে। নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিতে সবকটি কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রায় ৫০টি কেন্দ্রের দিকে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে। কমিশন চায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কেন্দ্রেগুলোতে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যদিয়ে এ নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে উঠুক।
আগামীকাল বৃহস্পতিবারের ভোটযুদ্ধে সীমা নাকি সাক্কু বসবেন মেয়রের চেয়ারে এমনটি জোর দিয়ে বলতে পারছেন না সাধারণ ভোটার। গতকাল বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে সীমা ও সাক্কুর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার আভাস পাওয়া যায়। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সীমার লোকজন বলছেন, দলের বাইরেও সীমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। সে কমিটমেন্ট রক্ষা করার মতো একজন নারী যে, মেয়র নির্বাচিত হলে তার প্রতিশ্রæতির সিংহভাগ বাস্তবায়ন করতে পারবেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু আবারো মেয়র হবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তার লোকজন বলছেন গত পাঁচ বছরে নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনসহ সকলক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপি বাইরেও সাক্কু ব্যক্তিগতভাবে বেশ জনপ্রিয়। সাক্কুর জনপ্রিয়তাই গত নির্বাচনে জয় এনে দিয়েছে। এবারে দলীয় অংশের ভোটসহ ব্যক্তি সাক্কুর ভোটের সম্মিলনে বড় ব্যবধানে ধানের শীষের জয় আসবে। জয়ের আশার পাশাপাশি নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব ও সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির লোকজন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। নির্বাচন কমিশনের বিধি ও নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটগ্রহণের ৩২ঘন্টা আগে মঙ্গলবার মধ্যরাত ১২টায় শেষ হয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণার ডামাঢোল। অন্যান্য দিনের তুলনায় শেষ প্রচারণায় প্রার্থীদের কণ্ঠে ছিল আবেগ। বিনয়ের সাথে ভোটারের কাছে ভোট চেয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ চেয়ে প্রার্থীদের শিশুসুলভ আচরণে অনেক ভোটারই মুগ্ধ হয়েছেন। গতকাল আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু নগরীর সদর অংশেই বেশি জনসংযোগ করেছেন। এছাড়াও তাদের পক্ষে দলের স্থানীয় নেতারাও প্রচারণা চালিয়ে ভোট চেয়েছেন। রাত ৯টার পর ভিড় বাড়তে থাকে সীমা ও সাক্কুর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে। রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত ভোটের দিন কেন্দ্রের বাইরে থাকা কর্মী ও কেন্দ্রের এজেন্টদের দেয়া হয় দিক নির্দেশনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।