Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পঙ্গুত্বের কাছে হার মানেননি অলি মিয়া

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে : তিনি পঙ্গু। তিনি ভিক্ষা করেননি। ভাগ্যের পরিহাসে হয়েছেন কাবলি বুট বিক্রেতা। ইচ্ছে করলে ভিক্ষা করতে পারতেন। বংশ মর্যাদা আর সম্মান রক্ষার্থে ভিক্ষা পেশায় না জড়িয়ে বুট বিক্রেতা হয়েছেন। কাবলি বুট বিক্রেতা অলি মিয়া (৫৫) চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের নোয়ার্দ্দা গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে। পুরো উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাজারগুলোতে গিয়ে কাবলি বুট বিক্রি করতেন। এখন বেশি অসুস্থতার কারণে হাজীগঞ্জ বাজারে ঘুরে ঘুরে বুট বিক্রি করছেন। অলি মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, অলি মিয়া ৩ ছেলে ১ মেয়ের জনক। বাবার জমি-জমায় নিজেই কাজ করতেন। সুন্দরভাবে সংসার চলত। বেশ কয়েক বছর আগে জ্বর হয়ে শরীরের বোধশক্তি অনেকখানি হারিয়ে ফেলেন। শারীরিক কারণে এক সময় পুরো বেকার হয়ে যান। সংসারে দেখা দেয় পুরোপুরি অভাব। আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবরা সাহায্য-সহযোগিতা করতে গিয়ে ৬ মাসেই কেটে পড়েন তারা। ঠিক সেই সময় এলাকাবাসী পরামর্শ দেন বাড়ির পাশে হাজীগঞ্জ বাজারে গিয়ে এক স্থানে বসে টাকা-পয়সা (ভিক্ষা) চাইলে দৈনিক ৪/৫শ’ টাকা পাওয়া যাবে। এক সময় মনে ধরে বিষয়টি। ২/১ দিন বাজারে এসেছেন কিন্তু চক্ষুলজ্জায় মানুষের কাছে হাত না পেতে ফিরে গেছেন বাড়ি। তার কয়েকদিন পর নিজের স্ত্রীর পরামর্শে শুরু করেন কাবলি বুট ভেঁজে বোলে করে কাঁধে ঝুলিয়ে বিক্রি। ছোট একটি বোল, পাল্লা, বাটখারা আর ২/১ কেজি কাবুল বুট নিয়ে নেমে পড়েন ব্যবসায়। যেখানে খেলাধুলা হতো সেখানেই বুট আর বোল নিয়ে ছুটে যেতেন। খেলার মাঠের চারপাশে হেঁটে হেঁটে ক্রীড়ামোদীদের কাছে ৫০ গ্রাম কিংবা ১শ’ গ্রাম করে বিক্রি করতেন এই বুট। আবার বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা হাট-বাজারে হেঁটে বিক্রি করতেন ভাঁজা বুট। তখন শরীরটা একটু ভালো ছিল। দৈনিক ৩/৫ কেজি বুট বিক্রি করতে পারতেন। যা থেকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭শ’ টাকা আয় হতো। সম্প্রতি অলি মিয়ার দেখা মেলে হাজীগঞ্জ পৌর ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকায়। আগের ছেয়ে আরো অসুস্থ অলি মিয়া এখন আর হাঁটতে পারেননি। শরীর প্রতিনিয়ত কাঁপে। বুটের পরিমাণ আগের ছেয়ে অনেক কম আনেন। শরীরের কারণে বেশি বুট কাঁধে নিয়ে হাঁটতে পারেননি। আর এভাবেই চললেন এখন অলি মিয়ার বুটের ব্যবসা। কথা বলতে চাইলে অলি মিয়া অস্পষ্ট স্বরে আর ধীরে বলেন, এখন আর ভালো নেই। সবই শরীর। শরীর কাঁপে। ২ ছেলে স্কুলে যায়। আয় কমে যাওয়ায় অভাব যেন সংসার ছাড়ছেই না। বাড়িতে বসে সময় কাটে না। তাই আধা কিংবা এক কেজি বুট নিয়ে বাড়ি হতে বাজারে চলে আসি। আপনার চেয়ে আরো ভালো শরীরের অধিকারী ব্যক্তিরা ভিক্ষা করে আপনার শরীরের যে অবস্থা আপনি ভিক্ষা করছেন না কেন প্রশ্ন করতেই করলে তো আগেই করতাম। এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাইলেন না এই অভাবী আর অসুস্থ অলি মিয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ