পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইজারাদারের স্বার্থে অবৈধ সময়সূচি চালু করছে বিআইডব্লিউটিসি
নাছিম উল আলম : ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অশান্ত মৌসুম শুরুর পনের দিন পরও বিআইডব্লিউটিসি বরিশাল-লক্ষীপুর, ভোলা-লক্ষীপুর, ভোলার মূল ভূখন্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরাসহ ভোলার মির্জাকালু ও লক্ষীপুরপুরের চর আলেকজান্ডারের নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করতে পারল না। উপরন্তু ভোলার সাথে লক্ষীপুরপুরের মজু চৌধুরীরহাট রুটে ভয়াল ভাটি মেঘনা পাড়ি দিয়ে ‘এসটি খিজির-৫’ ও ‘এসটি খিজির-৭’ নামের সরকারি দুটি সি-ট্রাক ইজারায় চালু করা হলেও তার অবস্থাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সার্ভে সনদ তামাদি হয়ে যাবার পর ‘বিশেষ বিবেচনা’সহ নানা শর্তে সাময়িক অনুমোদন সংগ্রহ করে ঐ নৌযান দু’টি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের অনুমোদন লাভ করেছে। কিন্তু খিজির-৭ সি-ট্রাকটি গত প্রায় ৪ বছরেও ডকিং করা হয়নি। বারবার তলা ফেটে যাবার পর সিমেন্ট প্লাস্টার করে নৌযানটি পরিচালনা করছে ইজারাদার। কিন্তু এ অশান্ত মৌসুমে মধ্য মেঘনায় কোনো বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটলে তার দায় কে নেবে তা বলতে পারছেন না কেউ। তবে প্রায় চলাচল অযোগ্য এসব সি-ট্রাকের সময়সূচি প্রবর্তন করা হয়েছে সংস্থাটির যাত্রীসেবা ইউনিট প্রধানের দফতর থেকে। কিন্তু ‘ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স-১৯৭০’ ও ‘অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (সময় ও ভাড়াসূচি) বিধি ১৯৭০’ অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিসিএ ব্যতিরেকে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নৌ পরিবহন খাতের রুট পারমিটসহ সময়সূচি ও ভাড়া প্রবর্তন করার এখতিয়ার নেই। এমনকি বিষয়টি নিয়ে গত বেছর ১৮ জানুয়ারি নৌ পরিবহন মন্ত্রী মো: শাজাহান খানের সভাপতিত্বে এক বৈঠকেও ‘বিআইডব্লিউটিসিএর নিকট হতে রুট পারমিট নিয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র জাহাজসমূহ চলাচল করবে’ বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু একটি সরকারি নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্তে¡ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর সে সিদ্ধান্তকে এড়িয়ে চলছে সংস্থাটির যাত্রীসেবা ইউনিট। এমনকি সার্ভে মেয়াদ তামাদি হয়ে যাওয়া, ইজারাদারের অভাবে গত মধ্য অক্টোবর থেকে বন্ধ ‘খিজির-৮’-এর সময়সূচিও প্রদান করেছে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট দফতর। ইতঃপূর্বে নৌযানটি বরিশাল-লক্ষীপুর রুটে চলাচল করত।
এ ব্যাপারে গতকাল বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীসেবা ইউনিটের প্রধান শেখ মু নাসিমের সাথে তার সেল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। তবে মেরিন মার্কেন্টাইল ডিপার্টমেন্টের প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘এসব বিষয় আমাদের নজরে রয়েছে। তবে বিশেষ শর্ত ও বিবেচনায় ভোলা-লক্ষীপুর রুটের সি-ট্রাক দু’টিকে চলাচলের সাময়িক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নৌযান দু’টির প্রয়োজনীয় মেরামত ও সংস্কার করার মতো সব শর্ত পূরণ না করলে এর চলাচল অনুমোদন বাতিল করা হবে বলেও জানান তনি। বিআইডব্লিউটিসি-কে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১২টি সি-ট্রাক সংগ্রহে সরকারি তহবিলের যোগান দেয়া হয়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর ত্রাণ কাজে ব্যবহারের জন্য পাওয়া ‘এসটি রূপালী’ নামের অপর একটি সি-ট্রাকও বিপুল অর্থ ব্যয়ে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু এসব সি-ট্রাকের অর্ধেকেরও বেশি এখন অচল। সরকারি অর্থে সংগ্রহ করা এসব সি-ট্রাক দেশের উপক‚লীয় এলাকায় পরিচালনের মাধ্যমে নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিতকরণে সরকার সংস্থাটিকে প্রতি বছর ৫০ লাখ টাকার নগদ ভর্তুকিও প্রদান করছে। কিন্তু সংস্থাটি এসব নৌযান ইজারা দিয়ে কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এসব সি-ট্রাকের পরিচালনও এখন ইজারাদারের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল বলে অভিযোগ রয়েছে। এর সাথে সংস্থাটির যাত্রীসেবা (?) ইউনিটের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেরও সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালকে ‘অশান্ত মৌসুম’ বিবেচনা করে ভোলার ইলিশা থেকে ভাটি মেঘনাসহ উপক‚লীয় এলাকার নৌপথসমূহকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে ঘোষণা করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর। এ সময়কালে পর্যাপ্ত যাত্রী নিরাপত্তা সরঞ্জামসহ উপক‚ল এলাকা অতিক্রমকারী দুই ইঞ্জিন ও দ্বিস্তর তলাবিশিষ্ট নৌযান ছাড়া অন্য কোনো নৌযানের ঐসব ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ নৌপথে চলাচল ও যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইতঃপূর্বে শুধুমাত্র সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের অনুমোদিত নকশায়বিআইডব্লিউটিসির সি-ট্রাকগুলোই ঐসব নৌপথে চলাচলের অনুমোদন পেলেও গত বছর বেসরকারি খাতে নির্মিত ‘এমভি পারিজাত’ নামের একটি নৌযানে যাত্রী পরিবহনের অনুমোদন দেয়া হয়।
কিন্তু এর পর থেকেই বেসরকারি নৌযানটির চলাচল বন্ধে নানা তৎপরতা শুরু করে বিআইডবিøউটিসির ইজারাদার। এ ব্যাপারে নানা নামে হাইকোর্টে ৪টি রিট পিটিশনও করা হয়। উচ্চ আদালত সবগুলো রিট খারিজ করে বেসরকারি নৌযানটির চলাচল বৈধ বলে ঘোষণা করে। সেই থেকে ঐ নৌযানটি সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর ও বিআইডবিøউটিএর বিধিবিধান মেনে যাত্রী পরিবহন করলেও সরকারি নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটির সি-ট্রাকগুলো চলছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বিধিবিধান অবজ্ঞার পেছনে রয়েছে ইজারাদারের স্বার্থ সংরক্ষণ।
এদিকে অশান্ত মৌসুম শুরুর পনের দিন পরও ভোলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সাগর মোহনার মনপুরা উপজেলার সব ধরনের নিরাপদ নৌযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ রুটে ইতঃপূর্বে চলাচলকারী সি-ট্রাক ‘এসটি শেখ কামাল’ মেরামতের লক্ষ্যে প্রায় ৫ মাস আগে সংস্থাটির ডকইয়ার্ডে নেয়া হলেও তা এখনো ভোলায় ফেরেনি। মির্জাকালু-চর আলেকজান্ডার রুটেও গত দু’বছর ধরে কোনো সি-ট্রাক চলছে না। ফলে দেশীয় ইঞ্জিনচালিত নৌযানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ দু’টি রুটে সাগর মোহনার ভাচি মেঘনা পাড়ি দিচ্ছে।
এসব ব্যাপারে গতকাল বিআইডব্লিউটিসির জিএম-বাণিজ্য এন এস শাহদাত আলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বরিশাল-লক্ষীপুর রটে সি-ট্রাক চালুর লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ইজারাদার না পেলে বিভাগীয় পর্যায়েই তা চালু করা হবে। ভোলা-মনপুরা রুটের সি-ট্রাকটির মেরামত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যত দ্রত সম্ভব সেটিকে যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।