পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) নৌযানগুলো যাত্রীসেবার পরিবর্তে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে ভাসমান রেস্তোরা ও পানশালা ব্যবহারে। অভিযোগ রয়েছে, যাত্রীর বহনে তাদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। উল্টো ভাসমান রেস্তোরা ও পানশালা করার জন্য নৌযান ইজারা দিচ্ছে। এতে করে ধ্বংস করা হচ্ছে বিম্ব ঐতিহ্যকে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র বলছে, প্রায় পাঁচ বছর আগে একটি স্ক্রু-হুইল নৌযানের পরে এবার ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল জাহাজ ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ও দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা দেয়া হচ্ছে। আর এ ব্যাপারে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বিআইডব্লিউটিসি ইজারার মাধ্যমে ভাসমান রেস্তোরা ও পানশালার দিকে ঝুঁকে পড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রজধানীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগ ব্যাহত হবে। একই সঙ্গে যাত্রী পরিবহন পুরোপরি বেসরকারি খাতে জিম্মি হয়ে পড়বে।
পিএস অস্ট্রিচ গতকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে বাণিজ্যিক পরিচালন। আগামী সপ্তাহেই নৌযানটি ‘এ্যাকর্ড লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি মাসে মাত্র দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে পাঁচ বছরের জন্য নৌযানটি ভাড়া নিচ্ছে। যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে সম্মতির সঙ্গে তাগিদ ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সংস্থার অপর যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি সোনারগাঁও’ পাঁচ বছর আগে বেসরকারি সেক্টরে ইজারা দেয়া হয়। ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে নৌযানটি অপর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাসে মাত্র আড়াই লাখ টাকায় ইজারা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাগলা ঘাটে পর্যটন করপোরেশনের বার কাম রেস্তোঁরা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দৃশ্যত দুটি যাত্রীবাহী নৌযান রাজধানীর সন্নিকটে পানশালায় পরিনত হতে যাচ্ছে।
কয়েক বছর ধরেই একটি মহল বিশ্বের অবশিষ্ট চারটি প্যাডেল জাহাজ দিয়ে যাত্রী বহন বন্ধে কলকাঠি নাড়ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘পিএস মাহসুদ, পিএস অষ্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণ’ নামের প্যাডেল জাহাজগুলোর সার্ভে সনদ প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় শতবর্ষের এসব নৌযান ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ ও চলাচল উপযোগী নয়’ বলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর থেকে জানান হয়।
১৯৩৮ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে নির্মিত প্যাডেল স্টিমের ওইসব নৌযানের মধ্যে প্রথম তিনটি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে আধুনিকায়ন করা হয়। নৌযানগুলো কাঠামো পরিবর্তন ছাড়াও নতুন ডিজেল চালিত ইঞ্জিনও সংযোজন করা হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে পুনরায় এসব নৌযান পুনরায় সংস্কার করা হয়। পিএস টার্ণ জাহাজটি ২০০২ সালে সংস্কারসহ নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। এরপর থেকে এসব নৌযানের মূল ইঞ্জিনের ওভারহলিংসহ অবকাঠামো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। অথচ সে কাজটি করা হলে চারটি প্যাডেল জাহাজই কমপক্ষে আরও ২০ বছর নিরাপদ ও নির্বিঘে যাত্রী পরিবহন করতে পারত বলে জানিয়েনে একাধিক নৌযান বিশেষজ্ঞ।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিটসি’র যার সাথেই আলাপ করা হয়েছে, সকলেই ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পিএস অষ্ট্রিচ ভাড়া হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন। অত্যন্ত সাশ্রয়ী এসব প্যাডেল জাহাজে জ্বালানি খরচ ঘণ্টায় মাত্র ৮৫ থেকে ৯৫ লিটার। যাত্রী বহন ক্ষমতা ৯৬০ জন। অথচ বছর চারেক আগে প্রায় ৫৬ কোটি টাকায় কেনা ‘এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি’ নামের দুটি যাত্রীবাহী নৌযানের জ্বালানি খরচ ঘণ্টায় প্রায় ২০০ লিটার। যাত্রী বহন ক্ষমতা ৭৫০ জন।
এরপরও প্রায় তিনগুণ জ্বালানি পুড়িয়ে ওইসব নৌযান পরিচালনার ব্যাপারে সংস্থাটির একটি প্রভাবশালী মহলের আগ্রহ বেশি। অভিযোগ রয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি ট্রিপে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পাচার হচ্ছে। ২০১৪ সালের এপ্রিল ও ২০১৫ সালের মে মাসে নতুন ওই নৌযান দুটি চালু করার পর গত অর্থ বছর পর্যন্ত লোকসানের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা।
অথচ গত কয়েক বছর ধরে চারটি প্যাডেল জাহারের নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত করা হচ্ছে না। অথচ কাগজ-কলমে রক্ষণাবেক্ষণ দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাট হচ্ছে। চার জাহাজের মেরামতের নামে গত বছর ২৬ লাখ টাকার বিল ভাউচার দাখিল করা হয়েছে। অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের জন্য ২০০৫ সালে মাত্র এক কোটি ৮৪ লাখ টাকার ‘স্ক্র্যাপ ভ্যালু’তে ‘এমভি সোনারগাঁও’ নামে রেলওয়ের একটি যাত্রবাহী নৌযান বিআইডব্লিউটিসি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। প্রায় ১১ কোটি টাকা খরচ করে নৌযানটির মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হয়।
কিন্তু রহস্যজনক কারনে নৌযানটিতে নতুন ইঞ্জিন সংযোজনের পরিবর্তে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকায় পুরনো ইঞ্জিন মেরামত করতে গিয়েই সব বিপত্তি দেখা দেয়। বিলাসবহুল নৌযানটির গতি আশানুরূপ না হওয়ায় সুষ্ঠু বাণিজ্যিক পরিচালন ব্যাহত হয়। অথচ যে টাকায় এমভি সোনার গাঁও এর ইঞ্জিন মেরামত করা হয়েছিল, তা দিয়েই নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করে নৌযানটি অত্যন্ত সাফলভাবে বাণিজ্যিক পরিচালন সম্ভব হত।
এসব বিষয়ে গতকাল বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যানকে ফোন করলে তিনি জানান, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত জনস্বার্থে এসব প্যাডেল জাহাজ চালাতে পারব, ততক্ষণ তা অব্যাহত রাখব। ডিজি শিপিং এসব প্যাডেল জাহাজ চলাচলে অনুমোদন দিচ্ছেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।