পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে : ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ায় দ্বি-মুখী বাণিজ্যের পরিবর্তে একমুখী বাণিজ্যের মাধ্যমে একতরফা সুবিধা লুটে নিচ্ছে ভারত। অপরদিকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা একশ্রেণীর অসাধু রফতানিকারক ও কাস্টম কর্মকর্তাদের যোগসাজসে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অনুমোদিত পণ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পণ্য ভারতে পাচার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের আসাম ত্রিপুরাসহ দুর্গম ৭টি রাজ্যের সাথে স্বল্প সময়ে কম খরচে বাংলাদেশের সমতল ভ‚মির রাস্তা, রেললাইন ও নদী পথ ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ট্রানজিট আদায়ের জোর চেষ্টা করছে ভারত। ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর উদ্বোধনের প্রায় সাড়ে ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অবকাঠামোসহ স্থলবন্দর পরিচালনার কোন ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় আমদানি কার্যক্রম ঢিলেঢালাভাবে চলছে রফতানি। বাংলাদেশ ভারতের বাণিজ্য সুবিধা ভাড়াতে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ফেনীর বিলোনিয়া শুল্ক বন্দর ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর স্থলবন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত উত্তর পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য ছিল এ বন্দরের মূল লক্ষ্য। বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতকে দেশের ১৭তম স্থলবন্দর হিসেবে বিলোনিয়া স্থলবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়। শুরুতে ওই স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ উভয়পক্ষ লাভবান হওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে ভারতই একতরফা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বন্দর থেকে সুবিধা নিচ্ছে বলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। বিলোনিয়া স্থলবন্দর চালু হওয়ার পর প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ফেনী পরশুরাম বিলোনিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক সংস্কার করা হয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পিলার ২১৬০ এলাকায় বিলোনীয়া স্থল বন্দরের অবস্থান। অন্যদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে এর দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। গণপূর্ত বিভাগের জায়গায় পরিত্যক্ত একটি ঘরে বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশনের কাজ চলছে। ইমিগ্রেশান বিভাগের কোনো নিজস্ব অফিস নেই। এখানে বন্দরের মূল ভবন, শেড কন্টেইনার টার্মিনাল, গুদাম রাসায়নিক পরীক্ষাগার, স্টাফ কোয়ার্টার, নিরাপত্তা রক্ষীদের ডরমিটার, আর শুল্ক স্টেশনে রয়েছে জনবল সংকট। সেখানে একজন ল্যান্ড কাস্টমস অফিসার, একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও দু’জন সিপাহী দায়িত্ব পালন করছেন। নেই ওজন মাপার যন্ত্র। ভারতে রফতানিকৃত পণ্যের ওজন মাপতে না পারায় ওজনে গরমিল হচ্ছে। ইট, পাথর, রড সিমেন্টসহ রফতানিকৃত পণ্যের কাগজপত্রে ১০-১৫ টন লেখা থাকলেও বাস্তবে নেয়া হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি পণ্য। শুল্ক ছাড়াই অতিরিক্ত এসব পণ্য থেকে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছে ভারত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন্দরের নানা সমস্যার অজুহাত ধরে ভারত পণ্য রফতানি করছে না বাংলাদেশে। অথচ বাংলাদেশ থেকে ভারতে এ বন্দর দিয়ে নিয়মিত পণ্য যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এভাবে একতরফা পণ্য রফতানি করে লোকসান দিতে হচ্ছে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিনই ইট, পাথর, সিমেন্ট, রড, শুঁটকি রফতানি হচ্ছে ভারতে। এদিকে ভারত থেকে গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফল-মূল, গাছ-গাছালি বীজ, কয়লা, গম, চুনা, পাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন রয়েছে। তবে ভারত বিলোনিয়া স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় কোনো পণ্য পাঠাচ্ছে না ভারত। বিলোনিয়া স্থলবন্দর একজন কর্মকর্তা জানান, উদ্বোধনের পর থেকে ভারত ইট, সিমেন্ট, পাথর, শুঁটকি রফতানি করে এ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। বর্তমানে এ বন্দরে একমুখী বাণিজ্য চলছে। তারপরও গত সাড়ে ৭ বছরে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে বলে স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে। টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। তবে ভারত থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পণ্য বাংলাদেশে আসেনি। সিঅ্যান্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, অবকাঠামোর দিক থেকে এই স্থলবন্দর এখনও পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। যার কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে বাণিজ্যের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছে না। রফতানি কার্যক্রম চললেও এখনও অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনবল না দেয়ায় অ্যাসোসিয়েশনের এ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ স¤পাদক জুলফিকার আলী ভুট্টো জানান, এ বন্দরে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক পণ্য লোড-আনলোড করা হয়। অব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের কারণে ড্রাইভাররাও এ বন্দরে ভাড়া নিয়ে আসতে চায় না। অপরদিকে কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, শুধু অবকাঠামোগত সমস্যা নয়, বিলোনিয়া সীমান্ত ফাঁড়ির বর্ডার গার্ড (বিজিবি) বিভিন্ন অজুহাতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ট্রাক আটকে রাখে। তবে ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বন্দর ব্যবহারকারীদের ভারতের অংশে কোনো লোক ঢুকতে দেয়া হয় না। বাংলাদেশের জমিসহ সব কিছুই ব্যবহার করছে ভারত। বিলোনিয়া স্থল বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সেক্রেটারি জুলফিকার আলী ভুট্টো জানান, অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় পণ্য স্টক করা যাচ্ছে না। স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পণ্য আমদানি-রফতানির মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় ভারত একমুখী বাণিজ্য সুবিধা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের স্বার্থহানী করে নিজেরা সুবিধা লুটে নিচ্ছে। এতে দু’দেশের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে বিলোনিয়া স্থলবন্দর খুলে দেয়ায় ভারতের স্বার্থই বেশি রক্ষা পাচ্ছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা ভূমি অফিসসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যৌথ উদ্যোগে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করার লক্ষে ১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছিল তার মধ্যে বেশিরভাগ ছিল অর্পিত সম্পতি (ভিপি) তালিকাভুক্ত। জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা ভূমি মালিকানা দাবিদারকে জমি অধিগ্রহণের লক্ষে ৬ ধারা নোটিশ প্রদান করে এবং ৭ ধারা নোটিশ দেয়ার সময় জনৈক মোঃ আইয়ুব হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করে। বিলোনিয়া স্থল বন্দরের জমি ভূমি অধিগ্রহণের উপর হাইকোর্ট রুল জারি করেছে। ২০১৩ সালের ১৭ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও জাফর আহাম্মদের বেঞ্চ এ রুল জারি করেছে। বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম জানান, এখানে প্রায় শতাধিক শ্রমিক মালামাল লোড-আনলোডের কাজ করে। তারাও উচিত পরিশ্রমিক পাচ্ছে না। এছাড়াও আবাসন সমস্যাতো আছেই। ফলে কিছুদিন কাজ করার পর শ্রমিকরা অন্যত্র চলে যায়। বন্দরের অবকাঠামো বলতে কিছুই নেই। আমরা অনেক কষ্টে বন্দরটি চালিয়ে নিচ্ছি। পুরোপুরি চালু হলে আমাদের আরো অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হক ভূঁঞা জানান, বিলোনিয়া স্থলবন্দরের ভারতে পণ্য পাচার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাষ্টমস অফিসটি খুবই ঝরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পরিপূর্ণ বন্দরে রূপান্তরের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম মনিরা হক জানান, বিলোনিয়া স্থল বন্দরের অবকাঠামোসহ ওপেন ইয়ার্ড করার জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে ছিল এবং ৬ ধারা নোটিশও দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টে রিট করায় হয়তোবা ভূমি অধিগ্রহণে পুনরায় জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিলোনিয়া স্থলবন্দরের জমি অধিগ্রহণের জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি টিম সরেজমিনে এসে পরিদর্শন করেছেন। জমি অধিগ্রহণ হলে অবকাঠামো তৈরি করা হবে। আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে অত্র এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য গতি হবে। ফেনী জেলা প্রসাশক আমিন উল আহসান সাংবাদিকদের জানান, বিলোনিয়া স্থলবন্দর উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চলছে। এর জন্য একটি জায়গা দরকার। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হলে ১২/১৩ একর জায়গার প্রয়োজন রয়েছে। সে কার্যক্রম শুরু করেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। স্থলবন্দরে যাওয়ার জন্য যে রাস্তাটি রয়েছে সেটি অত্যন্ত সরু। সে রাস্তাটি ৬৫ ফিট চওড়া করার জন্য সড়ক বিভাগ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিলোনিয়া স্থল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ফেনী ১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার যাবতীয় সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।