Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিলোনিয়া স্থলবন্দর পূর্ণতা পায়নি ৬ বছরেও

প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে : ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দর উদ্বোধনের প্রায় সাড়ে ৬ বছর পরও পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অবকাঠামো সংকট, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, আমদানি-রপ্তানিকারকদের হয়রানি, ভারতের কাস্টমস কর্মকর্তাদের অসহযোগিতাসহ নানা সমস্যার ফলে বিলোনিয়া স্থলবন্দর কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নানামুখী সমস্যার মধ্যে আমদানি কার্যক্রম একদম না থাকলেও ঢিমেতালে চলতে রপ্তানি কার্যক্রম। এমন সমস্যার মধ্য থেকেও বন্দরটি বিগত ৬ বছরে আয় করেছে প্রায় ৩শ’ ৪০ কোটি টাকা। জানা যায়, ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মধ্যে আমাদানি-রপ্তানি সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কার্যক্রাম শুরু হয়। ঢাকডোল পিটিয়ে বন্দর কার্যক্রম শুরু হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, লোকবল, গুদাম ও মালামাল পরিমাপের যন্ত্র সংকট ছাড়াও ওয়ালহাউজ নির্মাণসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীদের মাঝে এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় তেমন আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি। অবকাঠামো সমস্য সমাধান করতে এলাকায় ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হলেও আইয়ুব হোসেন নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে ভূমি অধিগ্রহণের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে একটি রিট আবেদন করায় অধিগ্রহণের কার্যক্রম থমকে দাঁড়ায়।
আমদানি-রপ্তানিকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কোন কাস্টমস অফিস নেই। পুরাতন একটি পরিত্যক্ত ভবনে মাত্র একজন কর্মকর্তা ও একজন অফিস পিয়ন দিয়েই চলে বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম। তাদের অভিযোগ এখানে শুধু রপ্তানি কার্যক্রম চলছে, ব্যাপক পণ্য আমদানির সুযোগ ও চাহিদা থাকলেও ভারতের সরকার ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের বাঁধার কারণে আমদানি করা যাচ্ছে না। বিলোনিয়া সিএন্ডএফ এজেন্ট সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা য়ায়, এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে সিমেন্ট, ইট, পাথর এবং শুঁটকি। এখানে সিএন্ডএফ অনুমোদিত প্রায় ৮টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পণ্যগুলো রপ্তানি করছে। এগুলো হচ্ছে স্কাইল্যান্ড শিপিংজাওয়াদ এন্টারপ্রাইজ, জিয়ান এন্টারপ্রাইজ, স্ট্যান্ডার্ড শিপিং ও সেতারা করপোরেশন। এছাড়া সিমেন্ট রপ্তানি করছে আরামিট, এমআই, সেভেন রিং, হোলসিম, আল্ট্রাটেক, প্রিমিয়াম ও কনফিডেন্স কোম্পানি। এদিকে ভারত থেকে গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ গাছালির বীজ, কয়লা, গম, চুনা, পাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন রয়েছে। তবে ভারত বিলোনিয়া স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় কোন পণ্য পাঠাচ্ছে না ভারত। বিলোনিয়া স্থলবন্দর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রীতিময় কান্তি বড়ুয়া জানান, উদ্বোধনের পর থেকে ভারত ইট, সিমেন্ট, পাথর, শুঁটকি রপ্তানি করে এ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। এছাড়াও এখান থেকে ৬ বছরে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্রমণকর আদায় করা হয়েছে। রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইমাম হোসেন জানান, বর্তমানে এ বন্দরে একমুখী বাণিজ্য চলছে। তারপরও শুধু বিগত ১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকাসহ এবং গত ১৩-১৪ অর্থবছরে ৪১ কোটি ৭৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। তবে ভারত থেকে এখন পর্যন্ত কোন পণ্য বাংলাদেশে আসেনি। সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, অবকাঠামোর দিক থেকে এই স্থলবন্দর এখনো পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। যার কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে বাণিজ্যের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছে না। এখানে প্রতিদিন রপ্তানি কার্যক্রম চললেও অনেক সময় বন্দরে কোন কর্মকর্তা থাকে না, তাই ব্যবসায়ীদেরকে ফেনীতে গিয়ে কর্মকর্তাদের থেকে সই নিতে হয় বলে ব্যাপক ভোগন্তির শিকার হয়। রপ্তানি কার্যক্রম চললেও এখনো অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনবল না দেয়ায় এসোসিয়েশনের এ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আমদানি-রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলি ভুট্টো জানান, এ বন্দরে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক পণ্য লোড-আনলোড করা হয়। অব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের কারণে ড্রাইভাররাও এ বন্দরে ভাড়া নিয়ে আসতে চায় না। অপরদিকে কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, শুধু অবকাঠামোগত সমস্যা নয়, বিলোনিয়া সীমান্ত ফাঁড়ির বর্ডার গার্ড (বিজিবি) বিভিন্ন অজুহাতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ট্রাক আটকে রাখে। তবে ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কোম্পানি কমান্ডার। বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইব্রাহিম জানান, এখানে ৫৯ জন শ্রমিক মালামাল লোড-আনলোডের কাজ করে। তারাও উচিত পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। এছাড়াও আবাসন সমস্যাতো আছেই। ফলে কিছুদিন কাজ করার পর শ্রমিকরা অন্যত্র চলে যায়। পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম জানান, বিলোনিয়া স্থলবন্দরের অবকাঠামোসহ ওপেন ইয়ার্ড করার জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে ছিল এবং ৬ ধারা নোটিশও দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টে রিট করায় হয়তোবা ভূমি অধিগ্রহণে পুনরায় জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিলোনিয়া স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ফেনী ১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার যাবতীয় সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিলোনিয়া স্থলবন্দর পূর্ণতা পায়নি ৬ বছরেও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ