পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার জঙ্গিবাদকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছে
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে একাত্তর সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সারা জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন। তিনি যদি ওইদিন যুদ্ধের ঘোষণা না দিতেন কবে যুদ্ধ শুরু হতো তা বলা মুশকিল ছিল।
গতকাল শনিবার সকালে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী যুব দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন সরকার জঙ্গিবাদকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছে। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী যুব দলের উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফিতা কেটে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
প্রদর্শনীতে একাত্তরে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতিসংঘের মহাসচিব কুট ওয়াল্ডহেম, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী থ্যাচার, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসীর আরাফাত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদ, চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই, গিনির প্রেসিডেন্ট আহমেদ সেকেতুরেসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের সাথে বৈঠকে আলোকচিত্র, খাল কাটা, শিশু-কিশোর সমাবেশে জিয়াউর রহমানের বক্তব্যের ছবির পাশপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর ছবিও এই প্রদর্শনীতে স্থান পায়।
সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের পর প্রদর্শনীস্থল ঘুরে ঘুরে দেখেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যেকদিন যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তাতে আমরা প্রচন্ড উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছি, উদ্বেগময় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত এক সাপ্তাহে ৩-৪টি ঘটনা ঘটল, আত্মঘাতী বোমা হামলার। সরকারের এক একটি প্রতিষ্ঠান-এজেন্সি একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে। আমরা বলতে চাই, সরকার এটাকে (জঙ্গিবাদ) আসলে সমাধান করতে চায় না। তারা এটাকে জিইয়ে রেখে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। কোনোমতে জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়, সেই আহবান আমরা জানাচ্ছি।
গতশুক্রবার শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুলিশের চেকপোস্টের কাছে সংঘটিত আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, গতকালকে (শুক্রবার) ওই ঘটনা নিয়ে দেখা গেলো দুই রকমের বক্তব্য। একদিকে বলা হলো যে এটা আইএস দাবি করেছে। আরেকদিকে বলা হচ্ছে, এটা আগের ঘটনাগুলোর মতো নয়। এখন আমাদের প্রশ্ন থেকে যায়, যে মানুষটি আত্মঘাতী বোমা নিয়ে নিহত হলো, সে কী নিজেকে নিহত হবার জন্যই আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে?
দেশের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরে তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। মানবাধিকার নেই, আইনের শাসন নেই। মানুষের আজ কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষের কোনো অধিকার নেই্। কথা বলতে গেলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আইনসম্মতভাবে মিছিল-মিটিং করতে দেয়া হয় না। উল্টো হত্যা করা হয়। আমাদের সমাবেশ করতে দেয়া না।
এই পর্যন্ত ২ হাজারের ওপর নেতা-কর্মী হত্যা, ৫‘শ ওপর গুমের ঘটনাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বরাবর তাদের র(আওয়ামী লীগ) সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী কোনো কিছু ঘটলেই বিএনপিকে দোষারোপ করেন। এই যে ভয়াবহ একটা প্রবণতা, এটাকে বন্ধ করে সঠিক সত্য অনুসন্ধান না করে, তদন্ত না করে যদি প্রথমেই এই ধরনের উক্তি করা হয়, যাদের জড়ানো হচ্ছে, তাদেরকে যদি হত্যা করা হয়, তাহলে কোনো দিনই সত্য উদঘাটন হবে না।
আমরা সেই কারণে বার বার দাবি জানিয়ে আসছি, জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহতা রোধ করতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপণœ হয়ে পড়বে। এই সম্পর্কে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য তৈরি করে, সেভাবে সকলকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এটাকে প্রতিরোধ করতে হবে। আর সঠিক সত্য উৎঘাটন করতে হবে- কারা এই কাজের সাথে জড়িত, কারা মদদ দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত না করা গেলে আসল যারা ক্রিমিনাল তারা বাইরেই থেকে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অগ্নিকান্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন কী হচ্ছে? যেভাবে ঘটনা ঘটছে, তাতে মনে হয় বাংলাদেশে কোনো সরকার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই তলাতে আগুন লাগল, যে তলাতে বৈদেশিক রিজার্ভের ডুকেমেন্টস রাখা আছে। আপনাদের মনে আছে, কিছুদিন আগে বৈদেশিক রিজার্ভের প্রায় ৮শ মিলিয়ন ডলার হ্যাক করে নিয়ে গেল। এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। পত্র-পত্রিকায় দেখেছি যে, এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকেরা জড়িত রয়েছে, অনেক সময় শুনা যায় বাইরের আরো কেউ জড়িত থাকতে পারে।
এজন্য এখানে সন্দেহ হওয়ার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ তলায় আগুন লেগেছে, সেই ডকুমেন্টস পুড়েছে।
ভারত সফর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা দিবসের পরপরই আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাচ্ছেন। আমরা অত্যন্ত আশাবাদ ছিলাম যে অন্তত আমাদের পানি সমস্যা সমাধানের এজেন্ডায় থাকবে। এখন পর্যন্ত দেখছি আমরা জানিনা, কি বিষয়ে আলোচনা হবে, কী চুক্তি হবে।
পত্র-পত্রিকায় দেখছি, পানিসম্পদ মন্ত্রী বলছেন, তিস্তা পানি চুক্তির নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাহলে কি জন্যে যাচ্ছি আমরা?
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমাদের তিস্তার পানি চুক্তি না হলে আমরা কী শুধু তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য যাচ্ছি। আমাদের পানি সমস্যা হচ্ছে বড় সমস্যা। সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, সেই সমস্যার সমাধান নেই। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের যে বাধাগুলো আছে, তার সমাধান নেই। অথচ এখন পর্যন্ত ভারত যা যা চেয়েছে, তা আমরা দিয়ে দিয়েছি।
প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন যেটা আসছে সামরিক চুক্তি। এই চুক্তি কিভাবে হবে, এটা আমাদের জানা প্রয়োজন। এজন্য জানা প্রয়োজন, অতীতে যে আমাদের অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি সামরিক চুক্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র দেশগুলো তারা কিন্তু বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ভাবে আমরা দেখেছি, বিশেষজ্ঞ আছেন, তারাও বলেছেন, এই ধরনের চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়তে হবে। আমরা এখনো দৃঢ়ভাবে বলছি, দেশের স্বার্থ ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো চুক্তি মানুষ মেনে নেবে না।
অনুষ্ঠানের শুরুতে একাত্তর সালের ২৫ মার্চ কালো পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বাংলাদেশিদের ওপর নির্মমতার ঘটনা উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই ২৫ মার্চ ভয়াবহ গণহত্যা হয়েছিল এবং হাজার হাজার মানুষকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যা করেছিল। স্বাধীনতার যে দাবি উঠেছিল, মুক্তির যে দাবি উঠেছিল, তাকে দাবিয়ে দিতে ওই গণহত্যা হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের অদম্য যে আকাক্সক্ষা তাকে তারা দমন করতে পারেনি। নয় মাস দীর্ঘ যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজকে সেই বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই।
অনুষ্ঠানে যুব দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, যুগ্ সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম জুয়েল, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুুল খালেক, ফারুক আহমেদ, কামরুজ্জামান দুলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।