Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জৈব সার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

| প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা : মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই, তেমনি নিরাপদ খাদ্যের ও গুণগত মান রক্ষায় কেঁচো কম্পোস্ট সারের বিকল্প নেই। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে দীর্ঘদিন ধরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলাতে নিরলসভাবে কাজ করছে পল্লী বন্ধু কৃষি সংযোগ নেটওয়ার্ক। ইতোমধ্যেই সবজি চাষী, পানচাষী ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন এবং বিভিন্ন ফল চাষীদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে কেঁচো কম্পোস্ট সার।
বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নটাপাড়া গ্রামের সবজি চাষী কালীপদ, রঞ্জন বৈরাগী, স্বপন কুমার, মতিন মোল্যা, নবাবপুর ইউনিয়নের দিলালপুর গ্রামের অচিন্ত কুমার মোদক, সঞ্জয় কুমার মোদক জানায়, এ বছর পল্লী বন্ধু কৃষি সংযোগের পরিচালক রুহুল আমিন বুলুর অনুরোধে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে ফুল কপি ও বাঁধা কপির চাষ করেন। এতে ভালো ফলনের পাশাপাশি কপির চাহিদাও বাজারে পাওয়া যায়। এ সার ব্যবহার করায় একদিকে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়নি ও বাজারে চাহিদা থাকায় দামও বেশি পেয়েছি। এতে একদিকে উৎপাদন খরচ হ্রাস পেয়েছে অন্যদিকে লাভবান হওয়া গেছে। আশা করছি, আগামীতে এ অঞ্চলের চাষীরা এ সার ব্যবহারে ঝুকে পড়বে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দি এলাকার পানচাষী সঞ্জয় দেবনাথ জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই আমরা পানচাষ করে আসছি। প্রতিবছরই রাসায়নিক সার ব্যবহার করে পানচাষ করায় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পল্লী বন্ধু কৃষি সংযোগ নেটওয়ার্কের অনুপ্রেরণায় ১৫ শতাংশ জমিতে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে পানের চাষ করছি পরীক্ষামূলকভাবে। রাসায়নিক সার ব্যবহারকারী পানের চেয়ে সতেজ ও ভালো ফলন পাচ্ছি কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহারকারী পানের বরজে। এ ক্ষেতে কোন কীটনাশক দেয়া লাগছে না। এতে মনে হচ্ছে কেঁচো কম্পোস্ট সার একটি যুগোপযোগী। এখন অনেক চাষী আমার কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী গ্রামের নবিয়াল শেখ জানান, এ বছর রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে লাউ, কুমড়ার চাষ করি। গাছের সতেজতা ও ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে কীটনাশক ছাড়া চাষ করার কথা বললে ক্রেতারা চাহিদার সাথে গ্রহণ করে। ফলে লাউ বেশি দামে বিক্রি করতে বেগ পেতে হয়নি। ফলন ভালো ও বেশি দামে বিক্রি করায় লাভবান হয়েছি। আমার চাষ দেখে অন্যান্যে কৃষকরা জৈব কেঁচো সার ব্যবহার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখন ৪ একর জমিতে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দল, ঝিঙা, পুঁইশাকের চাষ করেছি। এতেও ভালো ফলন পাবো বলে আশা করছি।
পল্লী বন্ধু কৃষি সংযোগ নেটওয়ার্কের পরিচালক মোঃ রুহুল আমিন বুলু বলেন, সরকারের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আন্দোলনকে কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন। প্রথমদিকে কৃষকরা ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করলেও দিন দিন এ সারের ব্যবহার বাড়ছে। যারা একবার এ সার ব্যবহার করছে তাদের আর পুনরায় বলতে হচ্ছে না। এখন এ সারের যে চাহিদা রয়েছে অর্থাভাবে তার যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকারী সহযোগিতা পেলে এ সারের ব্যাপ্তি বাড়ানো সম্ভব হবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান জানান, কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দিন দিন কৃষকরা জৈব সারের উপকারিতা বুঝে এখন ব্যবহার শুরু করেছে। ফলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আকরাম হোসেন জানান, সরকারীভাবে আমাদের কৃষকদের জৈব সার ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার নির্দেশনা রয়েছে। ফলে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি। অনেক কৃষক জৈব সারের উপকারিতা জেনে ব্যবহার শুরু করেছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, নিরাপদ খাদ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখন কৃষকদের মাঝে জৈব সার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিরাপদ

২৩ অক্টোবর, ২০২২
৩০ জুলাই, ২০২২
২৪ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ