Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখন অভিভাবক শূন্য

| প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছরুল ইসলাম নাবিল, রাবি থেকে : দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সপ্তাহখানিক ধরে অভিভাবক শূন্য। গত ১৯ মার্চ ২২তম ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজউদ্দিন ও ১২তম প্রো-ভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহানের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নিয়ম মাফিক দায়িত্বে রয়েছেন কোষাধ্যাক্ষ। শীর্ষ দুই পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ রকম অবস্থায় আর কতদিন চলবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ভিসি ও প্রো-ভিসি না থাকায় ইতোমধ্যে গতি হারিয়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কারা আসছেন তা নিয়ে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। দীর্ঘদিন এ বিশ্ববিদ্যালয় শাসন করেছে বিএনপি জামাত জোট। এখানেই ছাত্রশিবিরের কর্মকাÐ ও প্রভাব ছিল ব্যাপক। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের উপর দিয়ে যে রাজনৈতিক সিডর বয়ে যায়। তাতে তারা কিছুটা বিপর্যস্ত হলেও একবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। রয়েছে সুযোগের অপেক্ষায়। এ মহলটি বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কারা প্রশাসনের র্শীষ দায়িত্বে আসছে। বিগত দিনে দক্ষ হাতে প্রশাসন চালানোয় তারা ছিল বেশ কোণঠাসা। এদিকে প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক ও নেতা। তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বেশ আগে থেকেই। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের কেউ কতটুকু দক্ষহাতে প্রশাসন চালাতে পারবেন এ নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দক্ষ মানুষ দিতে ভুল হলে ক্যাম্পাসের চলমান পরিবেশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে পর্যবেক্ষক মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিগত প্রশাসনের সাথে স্থানীয় আ.লীগের দূরত্ব সৃষ্টি হয় লোক নিয়োগসহ কিছু বিষয় নিয়ে। সদ্য বিদায়ী ভিসি ও প্রো-ভিসি কট্টর দলীয় লোক হওয়া সত্তে¡ও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ছিলেন কঠোর। যার সুফলও মিলেছে। আর এতেই দূরত্ব বাড়ে স্থানীয় নেতৃত্বের সাথে। মূলত নিয়োগের ব্যাপারটি নিয়েই বিরোধ ছিল বেশি। যা নিয়ে ভিসি ও প্রো-ভিসিকে কয়েকবার নাজেহালও হতে হয়েছে। সরকারের উপর মহলের সুনজরে থাকায় তারা তাদের মেয়াদ পার করেন। এখন এ শূন্য পদে আসার জন্য চলছে প্রচÐ লবিং ও গ্রæপিং। স্থানীয় নেতাদের আশীর্বাদ নেয়ার জন্য তাদের তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়ার প্রতিশ্রæতির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এছাড়াও নজর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতে সরকারের দেয়া ৩৬৪ কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্যের দিকে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা সেলের কাজ চাঁদার দাবিতে ছাত্রলীগ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন শীর্ষ পদে কেউ না থাকায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের সাথে আলাপ হলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ পদ দুটিতে দক্ষ মানুষ দেয়া না হলে নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ে সংঘাত সংঘর্ষে ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে। তারা আশা করেন সরকার সব দিক বিবেচনা করে পদ দুটি পূরণ করবে এবং অন্তত বর্তমান স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে। গোয়েন্দা ও বিভিন্ন সূত্র বলছে, ‘সদ্য বিদায়ী ভিসি মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও প্রো-ভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহান আবারও একই পদে থাকতে পারেন। তাদের দায়িত্বে গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিকভাবে যে উন্নতি হয়েছে তা এরইমধ্যে সরকারের নজর কেড়েছে। তাই বর্তমান সরকার হঠাৎ করে নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে নাও পারেন। এর বাইরেও একাধিক শিক্ষক ওই পদগুলোতে দায়িত্ব পেতে পারেন বলেও ধারণা সূত্রগুলোর। আবার কেউ কেউ বলছেন, স্থানীয় নেতাদের সাথে দূরত্বের কারণে এরা নতুন করে দায়িত্বও নাও পেতে পারেন। বর্তমানে ভিসি বা প্রো-ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার দৌড়ে আছেন প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম, সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ছাদেকুল আরেফিন, প্রফেসর রকীব আহমেদ, সাবেক ভিসি (২০০৯-১২) এম আবদুস সোবহান, প্রফেসর মুশফিক আহমেদ, আনন্দ কুমার সাহা, প্রফেসর মো. রোস্তম আলী, প্রণব কুমার পাÐে, প্রফেসর সেলিনা পারভীন ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শাহ্ আজম শান্তনুসহ আরো বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় আসছে। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী এক মাসও অভিভাবকহীন থাকতে পারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এবারে প্রো-ভিসি পদে দেখা যেতে পারে দুইজনকে। যাদের একজন প্রশাসনিক অন্যজন একাডেমিক দায়িত্বে থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বলছেন, প্রশাসনের শীর্ষ এই দুই পদে শুন্যতার ফলে প্রশাসনিক কর্মকাÐের ব্যাঘাতসহ কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কীভাবে তা মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে নানা শঙ্কায় পড়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতর থেকে জানা গেছে, ভিসি ও প্রো-ভিসি না থাকায় ইতোমধ্যে গতি হারিয়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রমে। বিভিন্ন কাজের জন্য আর্থিক অনুমোদন, সিন্ডিকেট সভা, শিক্ষকদের বিদেশ গমন, শিক্ষাছুটি অনুমোদন, প্রমোশন আবেদনপত্র, শিক্ষার্থীদের ফলাফল কপি ও সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরসহ প্রসানিক কাজগুলো ভিসি ছাড়া অন্য কেউ করতে পারেন না। তবে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নোটিশ অনুসারে এসব কাজ কোষাধ্যক্ষকে করতে হয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোনো নোটিশ আসনি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ