Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বারো মাস ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় নৌকায়

২০ গ্রামের মানুষের হয়নি ভাগ্যের পরিবর্তন

প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০১৭

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জ কাজিপুর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের বাস যমুনার চরাঞ্চলে। প্রতিদিনকার কাজে তাদের ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার যমুনা নদী পাড়ি দিতে হয়। আর বর্ষা কিংবা বন্যায়, রোদ কিংবা বৃষ্টিতে কোনো সময়েই তাদের নেই ন্যূনতম সেবা পাওয়ার অধিকার। দিনের পর দিন তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপজেলা ও জেলা শহরের সাথে যোগাযোগের জন্য নদী পার হচ্ছেন। কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, মনসুরনগর, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, শুভগাছা, চরগিরিশ এবং মাইজবাড়ী ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম পুরোপুরি যমুনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল। এসব এলাকার মানুষের দৈনন্দিন কাজ বা চিকিৎসার জন্য যেতে হয় জেলা ও উপজেলা সদরে। জেলা-উপজেলা সদরে যোগাযোগের একমাত্র বাহন হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশু, নারী-পুরুষ, এমনকি গবাদিপশু এবং নানা প্রকার পণ্যসামগ্রী সবাই ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পারাপার হয়। বৃষ্টি, ঝড় তুফানের মধ্যেও প্রতিদিনই দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে তাদের নিজ গন্তব্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গম চরাঞ্চলে নাটুয়ারপাড়ার নৌকা ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ঝড় তুফানের মধ্যে ছেড়ে যায়। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী বহনের কাজে নিয়োজিত এই সকল শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো যাত্রী ও মালামাল বহন করে দেদার চলাচল করছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসব নৌকায় নেই কোনো বসার ব্যবস্থা, ছই কিংবা লাইফ জ্যাকেট। দুর্গম চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়ার একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মৃত্যুর ঝুঁকি থাকা সত্তে¡¡ও চরাঞ্চলের মানুষকে বাধ্য হয়ে এসব নৌযানে চলাচল করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ী ছাড়াও প্রতিদিন সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নিরাপত্তাহীনভাবে যমুনা পার হন। এসব চরের মানুষ অসুস্থ হলে উপজেলা কিংবা জেলা শহরে যাতায়াতের জন্যে এসব নৌকায় পাড়ি দিতে হয়। এলাকাবাসী ও যাত্রীরা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন শত শত যাত্রী যাতায়াত করে নাটুয়ারপাড়া ও মেঘাই নৌকা ঘাট দিয়ে। ঘাট কর্তৃপক্ষ নৌকা পারাপারে জনপ্রতি ভাড়া নেন ২৫ টাকা। আর ১০ কেজির বেশি মালামাল নিলেই তার জন্যে আলাদা ভাড়া দিতে হয়। অথচ তাদের যাত্রীসেবার মান বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নেয়না। উপজেলা পরিষদ থেকে মেঘাই ঘাটে একটা যাত্রী ছাউনি তৈরি করেছে। কিন্তু তাতে যাত্রীদের তেমন কোনো সুবিধা হয়নি। আর নৌঘাটে নেই টয়লেট, বসার ব্যবস্থা। সরকারিভাবে একটি পল্টুন থাকলেও সেখানে একটির বেশি নৌকা লাগানো সম্ভব নয়। ফলে প্রায়ই যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণ সিঁড়ি দিয়ে, পানি বা বালির মধ্যে লাফিয়ে নামতে হয়। এতে করে শিশু, বৃদ্ধদের চরম কষ্ট সহ্য করতে হয়। সাইকেল, মোটরসাইকেল ও মালামাল নৌকায় উঠানোর জন্য নেই ভালো ব্যবস্থা। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়, রোগী ও গর্ভবতী মায়েদের উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে নেয়ার ক্ষেত্রে। প্রতিদিন যমুনা পার হয়ে চরের স্কুলে শিক্ষকতা করা শফিকুল ইসলাম, শামসুল আলম, রেদওয়ান ও সাইফুদ্দিন জানান, আমরা প্রতিদিন প্রায় এপার থেকে ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষক নিয়মিত নৌকা ঘাট দিয়ে চলাচল করি। কিন্তু নৌকা ঘাটে ন্যূনতম যাত্রীসেবা নেই। নৌকার নির্ধারিত যাত্রী না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঘাট থেকে অন্তত দুইশ’ ফুট দূরে ছোট্ট একটা অপেক্ষমাণ কক্ষ থাকলেও সেখানে রিকশা ও ভটভটি, ভাড়ায় মোটসাইকেল, অটোরিকশা চালকরা বসে আড্ডা দেয়। অথচ ঘাট কর্তৃপক্ষের এদিকে কোনো খেয়াল নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখা দিলেও অনেক সময় যাত্রী ও মলামালসহ নৌকাগুলো ডুবে গিয়ে এ পর্যন্ত অনেক যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী মালামাল হারিয়ে পথে বসেছেন। নাটুয়ারপাড়া ঘাট মালিক সমিতির সভাপতি ওমর আলী জানান, ঘাটগুলো প্রায়ই নানাস্থানে সরিয়ে নিতে হয় বলে যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার জন্যে তেমন কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। তবে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান। কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক জানান, আমরা কাজিপুরের চরাঞ্চলবাসী, প্রশাসনের কাছে বারবারই দাবি করেছি চরাঞ্চলের মানুষের নিরাপদ যোগাযোগের ব্যবস্থা করার জন্য। আশা করি কর্তৃপক্ষ সত্বর এ বিষয়ে নজর দেবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ