Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসলিম বিশ্বের বিপন্ন স্বাধীনতা

| প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ড. মুহাম্মদ সিদ্দিক : ওআইসির মোট সদস্য সংখ্যা ৫৭। এসব রাষ্ট্রকে স্বাধীন বলা হয়। তবে এসব রাষ্ট্রের সবারই প্রকৃত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রয়েছে কিনা তা বিতর্কিত। এদের অনেকেরই স্বাধীন সার্বভৌম পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি প্রশ্নের সম্মুখীন। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি অমুসলিম দেশে যথেষ্ট সংখ্যক মুসলমান নাগরিক রয়েছে। তাদের পৃথক রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে তারা কি সবাই ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অন্যান্য মানবাধিকার পাচ্ছে? এটা প্রশ্নসাপেক্ষ। মিয়ানমার ও ইউরোপের দিকে তাকালে আমরা কি চিত্র পাই? একে তো আধুনিকতা বলা যায় না। এ যেন প্রাচীন যুগের ধর্মীয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কুৎসিত ছবি। অন্যদিকে মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর ভিতর এমন সব ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালানো হচ্ছে, যাতে এসব রাষ্ট্রের অস্তিত্বই বিপন্ন। এখানে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবস্থা সংক্ষেপে তুলে ধরা হচ্ছে : 

সিরিয়া : মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি অশ্রæপাত হচ্ছে সিরিয়াতে। স্থানীয় শিয়া-সুন্নি, আলকায়েদা, আইএস আর মার্কিন-রুশ-তুর্কি বাহিনী দেশটিকে ধ্বংসের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। দেশটিতে আস্ত ঘরবাড়ি আর নেই বললেই চলে। ইরাক-আফগানিস্তানের যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে এখানো। ছয় বছরে প্রায় পাঁচ লাখ লোক নিহত; গৃহহারা হয়েছে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ। দেশের পঞ্চাশ লাখ মানুষ দেশ থেকে পালিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলছে, সিরিয়ার যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবসৃষ্ট বিপর্যয়।
মার্কিন হস্তক্ষেপের পর ২০১৫ সালে রাশিয়া সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করে, সেই সঙ্গে ইরান ও লেবাননের শিয়া হিজবুল্লাহ, তুরস্ক ও ইসরাইল। এক সমীক্ষক বলছেন যে, এ যুদ্ধে কোনো সমাধানই আর সিরীয়দের হাতে নেই। মোটামুটি আটটি গোষ্ঠী সিরিয়ার মাটির জন্য মুসলিম হত্যা চালাচ্ছে।
প্রকাশ্য তথ্যে জানা যায় যে, সিরিয়ায় আগে থেকেই আট-নয় শত মার্কিন সেনা ছিল। এখন রাকার কাছে মেরিন আর্টিলারি ব্যাটারি মোতায়েন করেছে। ট্রাম্প এখন আরও এক হাজার মার্কিন সেনা সিরিয়ায় পাঠাচ্ছেন। এদিকে মার্কিন বিমান হামলায় ৫৮ মুসল্লি নিহত হন আলেপ্পোর মসজিদে। আলু পোড়া খেতে মার্কিন ঘনিষ্ঠমিত্র ইসরাইলও সিরিয়াতে বিমান হামলা করছে।
তুরস্ককে নিয়ে তথাকথিত উদারপন্থি প্রেসিডেন্ট ওবামা যা করেছেন তাতে মুসলিম বিশ্বের চেতনা ফেরা উচিত। আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্রের দুটি করে চেহারা রয়েছে। একটা প্রকাশ্য, অন্যটা অপ্রকাশ্যে। যেটির প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ ধনাঢ্য ইহুদিদের ও তেলআবিবের হাতে। সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস করতে মুসলিম সমর্থনকে কাজে লাগালেও, সোভিয়েত ইউনিয়ন ধ্বংসের পরে পাশ্চাত্যের নীতির প্রায় ইউটার্ন হয়ে গেছে। ফলে ইসলামপন্থি তথা জাতীয়তাবাদী মুসলিম রাষ্ট্র ও জনসমষ্টিকে উৎখাত করা এখন পাশ্চাত্য এজেন্ডা। তুরস্কের জাস্টিস পার্টি একটি মধ্যপন্থি উদারনৈতিক দল, কতকটা বাংলাদেশের বিএনপির মতো। অথচ তাকে মিলিটারি ‘ক্যু’র মাধ্যমে হটাতে চান ওবামা অথবা তার সরকারে থাকা ইহুদি উগ্রবাদীরা। তবে এরদোগান সরকার প্রকৃত শত্রæ চিনতে ভুল করেছিল। রুশ জঙ্গী বিমান তুরস্কের সামান্য একটু সীমানা ভুলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে লংঘন করাতে তুর্কি বৈমানিক রুশী বিমানকে ভূপাতিত করেন। অথচ পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে যে, এই তুর্কি বৈমানিকের সম্পর্ক একই বিমান ঘাঁটিতে অবস্থিত মার্কিন বৈমানিক আড্ডার সঙ্গে। পরবর্তীতে এই তুর্কি বৈমানিক এরদোগান বিরোধী ব্যর্থ ‘ক্যু’র সময় এরদোগান ও সরকার সমর্থকদের ওপর বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করেন। সমগ্র ‘ক্যু’র পেছনে যে তথাকথিত তুর্কি আলেম (মূলত তিনি ব্যবসায়ী এবং দায়ীবিহীন) মাওলানা গুলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসে আছেন (এখনও বহাল তবিয়তে)। যুক্তরাষ্ট্র শুধু ‘ক্যু’ করতে চায়নি, তুরস্কের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক নষ্ট করতে চেয়েছিল। পাশ্চাত্য সামরিক বাহিনীতে অনুপ্রবেশ করে অতীতে বহু ‘ক্যু’ করেছে। হালে মিসর এর শিকার। আসলে পাশ্চাত্য নানা কথা বললেও মুসলিম বিশ্বের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চায় না।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত তুরস্ক পশ্চিমী শঠতা বুঝতে পেরে বেশি ক্ষতি হওয়ার পূর্বেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়, যা দুই দেশের জন্যই মঙ্গলজনক মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে ‘এক্সপোজড’ হয়ে গেছে। তবে কি ওবামা-পরবর্তী সরকার সঠিক পথে থাকবে? মোটেও না। এ তো সেই ইংরেজি এবাদের মতোÑ “ফ্রম ফ্রায়িং প্যান টু ফায়ার” (তপ্ত কড়াই থেকে উনুনে পতন)। ওবামা যা গোপনে করেছিলেন, তাই-ই ট্রাম্প প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে করবেন।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের পরিচালক মার্ক লিওনার্ড ‘প্রজেক্ট সিন্ডিকেট’ ফোরামে ‘কোন পথে ভূ-রাজনীতি?’ শীর্ষক নিবন্ধে লেখেন : ‘তুরস্ক গত নভেম্বরে (২০১৫) এক রুশ বিমান ভূপাতিত করলে রাশিয়া তুরস্কের পেছনেও লাগে। অভিযোগ আছে, তিনি (পুতিন) জঙ্গি সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে অস্ত্র দিয়েছেন।’ রাজনীতি বিজ্ঞানী ইডান ক্রাস্তেভ বলেন, ‘মনে হচ্ছে, পুতিন তুর্কি অর্থনীতির পা ভেঙে দেওয়া এবং এরদোগানের রাজনীতিকে খাটো করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।’ ওদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের রাজতন্ত্র ও ইরানের ধর্মতন্ত্র অস্তিত্বের জন্য এক লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে।” উদ্ধৃতি শেষ।
তবে আমরা জানি ওবামাই রুশ তুর্কি বিবাদ লাগায়। আর তারপরেই এরদোগান-বিরোধী ‘ক্যু’ প্রচেষ্টা। আর কুর্দিদের নিকট বেশি অস্ত্র আসছে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপ থেকে। এদিকে মুসলিম দেশ বলে খৃস্টান ক্লাব ইউরোপীয় ইউনিয়নে কোনক্রমেও তুরস্ককে ঢুকতে দিচ্ছে না। অথচ ইইউ সদস্য পদের জন্য আবেদনকারী দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক প্রথম দিকের। ইইউকে আর কোনোক্রমে সেকুলার সংগঠন বলা যায় না তাদের খ্রিস্টান প্রীতির জন্য।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান তুরস্কের শাখারা শহরে বললেন যে ক্রস ও ক্রিসেন্টের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তিনি ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের মুসলিম নারীর মাথার হিজাববিরোধী রায়ের উল্লেখ করেন। এরদোগান দেশে-বিদেশে তুর্কি দম্পতিদের পাঁচ সন্তান নিতে বলেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বসনিয়ার ¯েœবেনিয়ায় আট হাজার মুসলিম বালক ও পুরুষ হত্যার জন্য ওই এলাকায় তখন মোতায়েন জাতিসংঘের নেদারল্যান্ডস আগত শান্তি রক্ষী বাহিনীকে দায়ী করেন।
লিবিয়া : লিবিয়া নিয়ে পাশ্চাত্য খেলা শুরু করেছে মুসলিম অনৈক্যের কারণে। পাশ্চাত্যের মতলব লিবিয়ার তেল দখল। সর্বশেষে রাশিয়াও ঢুকে পড়েছে সেখানে। তা মুসলমানদের জন্য ভালো, না মন্দ হবে। ভবিষ্যতই বলবে। লিবিয়াতে বর্তমানে তিনটি সরকার।
সোমালিয়া : ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর গণতন্ত্র ঠিকই চলছিল এখানে। তবে ১৯৯১ সালে গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পালিয়ে গেলে সেই থেকে অশান্তি চলছে। এর ভিতর নানা গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। সুয়েজ খাল নিয়ন্ত্রণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সোমালিয়াতে জড়িয়ে পড়ে। রাজধানী মোগাদিসুর সরকারের কর্তৃত্ব রাজধানীর বাইরে ঢিলেঢালা। দেশে চলছে এখন দুর্ভিক্ষ।
মিয়ানমার : বিশ্বজনমতের দৃষ্টিতে সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত জনগোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদের ধরা হচ্ছে। তাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্রবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অত্যাচার হিটলারের গ্যাস চেম্বারের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
শুধুমাত্র মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এই গণহত্যা নিয়ে সোচ্চার। হালে চীন মিয়ানমারকে রাশ টেনে ধরতে পরামর্শ দিলেও চীন-রাশিয়া জাতিসংঘে মিয়ানমারবিরোধী কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধী।
সৌদি আরব ও ইরান : রয়টার্স একটা বিশ্লেষণ করেছিল যে, প্রতিদ্ব›দ্বী ইরানকে ‘এক ঘরে’ করতে চায় সৌদি আরব। ৩৪টি মুসলিম দেশের যে সন্ত্রাসবিরোধী ইসলামী জোট গঠিত হয়েছে, সেখানে ইরানকে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এদিকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবাইর বলেছিলেন, ইরানকে অবশ্যই আচরণ পরিবর্তন করতে হবে।
সৌদি-ইরান দ্ব›দ্ব মুসলিম বিশ্বে অন্যের নাক গলাবার সুযোগ করে দিচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও পশ্চিম ইউরোপ। পাশ্চাত্য যতটা না সৌদিবিরোধী, তারচেয়ে বেশি ইরান-বিরোধী।

পাশ্চাত্য ও মুসলিম প্রশ্ন : ২৭ জানুয়ারি ১৭ ট্রাম্প সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কোর্টের বাধার মুখে পরবর্তীতে ৬ মার্চ ১৭ সাতের বদলে ছয়টি মুসলিম দেশের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন তিনি।
নেদারল্যান্ডসের নির্বাচনে উগ্রবাদী নেতা গ্রিট উইল্ডার্সের একটি ইসলামবিদ্বেষী পোস্ট রিটুইট করে মার্কিন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ কিং লেখেন, “উইল্ডার্স বুঝতে পেরেছেন সংস্কৃতি ও জনসংখ্যাই আমাদের ভবিষ্যৎ। অন্যদের (মুসলমি?) সন্তানের জন্য আমরা আমাদের সভ্যতা পুনর্নির্মাণ করতে পারছি না।” ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সব শেয়ালের একই হুক্কা হুয়া।
এদিকে মার্কিন সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম যা চলছে আফ্রিকা ও অন্যত্র তাতে হচ্ছে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐ। এখানে যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়াকে দিয়েছে চার কোটি মার্কিন ডলার। আর ২০০৫ সালে থেকে সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত ট্রান্স-সাহারান কাউন্টার টেরিজম পার্টনারশিপ চুক্তির অধীনে দশটি দেশকে প্রতিবছর একশ মিলিয়নের বেশি অর্থ জোগান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কেনিয়াতে বেশ কিছু গুম-খুন হয়েছে বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব কেনিয়াতে মুসলিম এলাকাতে।
পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর লেখেন জং দৈনিক পত্রিকাতে “মার্কিন বাহিনী যে অঞ্চলেই যায় সেখানেই সুফি, বুজুর্গ ও সাহাবায়ে কেরাম (রা)-এর মাজারে হামলা শুরু হয়ে যায়। এর কারণ কী? নিঃসন্দেহে ওই হামলাগুলোতে ওইসব মুসলমানকে ব্যবহার করা হয়, যারা তথাকথিত তাকওয়ার দর্পের কারণে শ্রেষ্ঠত্বের পাগলামির শিকার হয় এবং নিষ্পাপ মুসলমানদের হত্যা করে জান্নাতে যাওয়ার খোয়াব দেখে।”
অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি সর্বত্র মুসলিম বিদ্বেষ বেড়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ইন্ডিয়া, মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশে।
নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার খাদিজা আরিব। এ ছাড়া সেখানকার সাবেক আইনমন্ত্রী নেবাহাত আল বারেক। সেদেশের প্রায় বিশ লাখ অভিবাসীর মধ্যে দশ লাখের বেশি মুসলিম। মধ্য ডানপন্থি দল ডিভিডির থেকে প্রধানমন্ত্রী মার্করুন্টের সরকার তুরস্কের সঙ্গে অভিবাসী প্রশ্নের বাগ্যুদ্ধে জড়ালেও, প্রতিদ্ব›দ্বী উগ্র ডানপন্থি দল পিভিডির প্রধান গ্রেট উইল্ডার্সের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল :
মুসলিমদের বহিষ্কার, কোরআন নিষিদ্ধকরণ এবং চারশ পঞ্চাশ মসজিদ বন্ধের ঘোষণা। ভাগ্যক্রমে উইল্ডার্সের দল নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। তবে তারা আসন জয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতে তারা যে মৌলবাদী বিজেপির মতো প্রথম স্থান পাবে না। তা তো বলা যায় না।
ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে বহিরাগত ইহুদিদের জন্য সমানে বসতি নির্মাণ করছে ইসরাইল। সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিমালিকানার জমিতে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের চার হাজার বাড়িঘর তৈরির বৈধতা দিয়েছে ইসরাইল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিনিধি জেসন গ্রিন বার্ডের সঙ্গে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের আলোচনাও হয়েছে এ ব্যাপারে।
তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইস্টার সানডেতে দেয়া বক্তৃতায় ডেভিড ক্যামেরন বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ব্রিটেনকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং গর্বের সাথে দেশটির খ্রিস্টান মূল্যবোধকে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘যখন সন্ত্রাসীরা মুসলিম ব্রাসেলসে হামলার মতো হামলা চালিয়ে আমাদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ফেলার চেষ্টা করছে, সে সময় আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে খ্রিস্টীয় মূল্যবোধ ধারণ করে খ্রিস্টান দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।’ উল্লেখ্য যে, ক্যামেরন ইভান জেলিক খ্রিস্টান হিসেবে পরিচয় দেন। এরা খুবই মৌলবাদী। ক্যামেরন মুসলিম সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলেন, তবে আইআরএর রোমান ক্যাথলিক সন্ত্রাস নিয়ে নিশ্চুপ ছিলেন।
ইন্ডিয়ার মুসলিম প্রশ্ন : ইন্ডিয়ার উত্তর প্রদেশের বেরেলি থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রামে এমন কিছু পোস্টার লাগানো হয়, যাতে মুসলিম অধিবাসীদের ওই এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পোস্টারে বলা হয়েছে, এবার উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকার গঠিত হয়েছে। তাই মুসলমানদের সাথে তা-ই করা উচিত যা ট্রাম্প করছেন।
ইন্ডিয়ার উত্তর প্রদেশে বুলন্দ শহরে জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকার মসজিদে বিজিবির পতাকা উড়িয়েছে উগ্র হিন্দুরা। এদিকে ইন্ডিয়ার পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ লোকসভায় শত্রæ সম্পত্তি (সংশোধনী ও বৈধকরণ) বিল পাস হয়েছে। ফলে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় যারা ইন্ডিয়া থেকে পাকিস্তান বা চীনে চলে গেছেন, ইন্ডিয়ায় বসবাসকারী তাদের উত্তরাধিকারীরা আর তাদের সেই সম্পত্তির দাবি করতে পারবেন না। মুসলমানদের টার্গেট করে এ আইন।
এর ভিতর আবার আইএস ঘেঁষা একটি মিডিয়া গোষ্ঠী আহওয়াল উম্মত মিডিয়া সেন্টারের অ্যাপে বলা হয়, আইএসের হুমকির নিশানায় রয়েছে তাজমহল। এসব প্রতিষ্ঠান ভুয়াও হতে পারে। অথবা কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা অন্য কোনো মুসলিম বিদ্বেষী গোষ্ঠীর কার্য হবে এটা। গোয়েন্দারা উদোরপিÐি বুধোর ঘাড়ে দিতে ওস্তাত।

মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থা মোটেও সন্তোষজনক নয়। একে বাইরে থেকে আসছে গোপন ও প্রকাশ্য আক্রমণ। অন্যদিকে মুসলমানরা নিজেরাই কোন্দলে জড়িয়ে শত্রæদের সুযোগ করে দিচ্ছে। ওআইসির ভূমিকাও হতাশাব্যঞ্জক। শত্রæদের ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তাদের সার্বভৌমত্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে চলছে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর অমানুষিক জুলুম অনেক দেশেই।
(লেখক : ইতিহাসবিদ, গবেষক ও কলাম লেখক)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন