Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মা সেতুর অপার সম্ভাবনার তুলনায় খুলনা অঞ্চলে বিনিয়োগে সাড়া নেই

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর : পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে দেশের অন্য জেলাগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা অভ‚তপূর্ব সহজতর হবে। নির্বাচনী রোডম্যাপ সামনে রেখে নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই যাতে সেতুটি বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকেই খেয়াল রাখছে সরকার। সে হিসেবে ২০১৯ সাল নয়; ২০১৮ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অভিমত। পদ্মা সেতুর যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার অপার সম্ভাবনা প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাস্তবে পদ্মা সেতুর অপার সম্ভাবনার তুলনায় খুলনা অঞ্চলে শিল্প কলকারখানা নির্মাণ ও বিনিয়োগে সাড়া পড়ছে না।
খুলনা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সূত্রমতে, খুলনা ও বাগেরহাটে গত ৬ মাসে মাত্র ৩৫টি নতুন কলকারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যদিও বিনিয়োগ বোর্ড বলছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ এ অঞ্চলে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে।
সংস্থার উপ-মহাপরিদর্শক মহর আলী মোল্লা বলেন, প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা কম হলেও; পদ্মাসেতু নির্মাণের পর বহু শিল্প গড়ে উঠবে। এ অঞ্চলে সুলভ শ্রম ও ব্যাপক জনবল এবং বিস্তীর্ণ জমিন রয়েছে বিনিয়োগের।
এদিকে, বিনিয়োগ বোর্ড খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর কাজ দৃশ্যমান হওয়ার পর থেকে খুলনায় বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে গত বছরেই শুধুমাত্র ৪৪টি ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে খুলনা ও বাগেরহাট এলাকায়। আর বিনিয়োগের হার এ অঞ্চলে প্রায় ৯১৯ শতাংশ। ইতোমধ্যে গার্মেন্টস্ এক্সপোর্ট হাউজ নামে তৈরি পোশাক রফতানিকারক, বিজি বøক টাইগার নামে দেশের সবচেয়ে বড় আধা নিবিড় চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন হচ্ছে খুলনার নতুন বাজার লঞ্চঘাট এলাকায়। সুপার এক্স লেদার লিঃ নামে চামড়া প্রক্রিয়াজাত ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সিরামিক কারখানার মত বড় বড় প্রতিষ্ঠানও স্থাপিত হচ্ছে এ অঞ্চলে।
খুলনা বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক নিরঞ্জন কুমার মÐল বলেন, এ অঞ্চলে শিল্প কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কারখানায় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। পদ্মা সেতুসহ গ্যাস আসা শুরু করলে শিল্প কারখানা আরও বাড়বে।
খুলনা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে ৭৫৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর ১৮৩টি বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে নানা অনিয়মের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৯টি কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে। গত ৬ মাসে খুলনা-বাগেরহাটে ৩৫টি নতুন কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রতিবছর নতুন নতুন কারখানার দেখভাল করা এখানের কম জনবল দিয়ে করা সম্ভব হয় না।
সূত্র জানায়- খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার শিল্প কল-কারখানাগুলোর তদারকি করতে হয় এ দপ্তরকে। শ্রমিকদের কল্যাণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসমূহ বাস্তবায়নসহ শ্রমক্ষেত্রে শৃঙ্খলা সমুন্নত রেখে মালিক, শ্রমিক, সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হয় কর্মকর্তাদের। তবে জনবল সংকটের কারণে এ পরিসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান এ দপ্তরের কর্মকর্তারা। খুলনার জনবল কাঠামোতে একজন উপ-মহাপরিদর্শক এবং শ্রম-মেডিকেল ও প্রকৌশল পরিদর্শক পদ ২১টি, দোকান ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক ৬টি, উচ্চমান সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহকারী পদ একটি করে মোট ৩১ পদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মাত্র ১২ জন।
এ প্রসঙ্গে খুলনা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মহর আলী মোল্লা বলেন, নতুন জনবল কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। শীঘ্রই নতুন লোক পাওয়া যাবে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ সুফল ভোগ করতে হলে গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাস না হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে কখনোই শিল্প বিপ্লব সম্ভব নয়। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে রাজনীতিক ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি অ্যাড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “পদ্মার সেতুর নির্মাণের সাথে সাথে খুলনা অঞ্চলে ব্যাপক বিনিয়োগ হবে এটা এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের। কিন্তু কেন সেটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে? এর পিছনে কতিপয় আমলা জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন। যেমন- কাস্টমস্ কমিশনার ড. আল আমিন প্রামাণিক। আমদানী-রপ্তানিকারকদের সহযোগিতার কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা মংলা বন্দর ব্যবহার করছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলের বিনিয়োগের উপরও।”

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ