Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রূপগঞ্জে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অর্ধশতাধিক এনজিও ও সমিতি কর্তারা

| প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রতারণার ফাঁদে সহজ-সরল দরিদ্র মানুষ
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন দরিদ্র ঘরের মানুষগুলো। আর এ অর্থ দিয়ে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে কিছুটা হলে আয় করতে চান সকলেই। তাই কষ্টের উপার্জিত জমানো অর্থ দিয়ে আরো অর্থ উপার্জনের লক্ষ্য থাকে তাদের। আর এসব সহজ-সরল ও দরিদ্র ঘরের মানুষগুলোকে এক শ্রেণীর প্রতারক দিনের পর দিন ঠকিয়ে যাচ্ছে। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতারকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে অনেকে মামলা-হামলা, হুমকি-ধামকির শিকার হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন নামে ভুয়া সমিতি ও এনজিওগুলোতে অর্থ জমা করেন শত শত দরিদ্র ও সহজ-সরল মানুষ। প্রায় অর্ধশতাধিক ভুয়া এনজিও ও সমিতি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে উধাও হয়ে গেছে। বিশেষ করে উপজেলার ভুলতা, গোলাকান্দাইল ও রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন এলাকায় প্রতারণার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ঋণ প্রদানের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয় গ্রহণ ও অধিক লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে এখন এসব এনজিও ও সমিতিগুলো উধাও হয়ে গেছে। এদিকে, ভুয়া এনজিও ও সমিতির প্রতারণার কারণে প্রকৃত এনজিও ও সমিতি কর্তৃপক্ষ ও গ্রাহকরা আতঙ্কে থাকছেন এবং বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহক। এসব সমিতির শতভাগ কার্যক্রম থাকলেও ভুয়া ও প্রতারক সমিতিগুলোর কারণে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি হতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সবুজ বাংলা মাল্টিপারপাস নামে সমিতিটির চেয়ারম্যান রুহুল আমিন গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গ্রাহকরা তাদের গচ্ছিত অর্থ চাইতে গেলেই দেয়া হয় মামলা-হামলার হুমকি। স্থানীয় কৃষকরা তাদের শেষ সম্বলটুকু এ সমিতিতে গচ্ছিল রেখে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করে রুহুল আমিন এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করছে না। স্থানীয়দের দাবি, রুহুলের রয়েছে একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী বাহিনী। তার লালিত সন্ত্রাসীবাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয় পূর্বাচলের প্লটের প্রাচীর নির্মাণ ও চাঁদাবাজির কারসাজি। পুলিশের কতিপয় দারোগাকে ম্যানেজ করে পুলিশ সোর্স হিসেবে স্থানীয় লোকজনকে হয়রানির অভিযোগও কম নয়। এলাকায় নিজেকে শক্তিশালী প্রমাণ করতে নিজেই নিরীহকে ধরিয়ে দিয়ে আবার ছাড়িয়ে দিয়ে ভালোসাজার চেষ্টা করে এই প্রতারক। সূত্র জানায়, তার আপন চাচাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় তারই পরিকল্পিত ঘরযন্ত্রে। পরে বাজারে লোকজনের সামনে থেকে ছাড়িয়ে নেয় তাকে। এসব নানা অনিয়মের পরও তার গড়া সবুজ বাংলা মাল্টিপারপাস থেকে টাকা নিয়ে জমি ক্রয় করেছে তার নিজের নামে। ফলে গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে না পারায় নিজেকে রক্ষা করতে বেচে নিয়েছে পুলিশের সোর্স হিসেবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রুহুল আমিন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি ও নিরীহদের ফাঁসানোর মতো জঘন্য কাজ করে আসছে। তার কুকর্মের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বাগবের এলাকার লোকজন। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় লোকজনের শেষ সম্বলটুকু তার কাছে আমানত রাখলেও আত্মসাতের পরিকল্পনা রয়েছে তার। এসব গচ্ছিত রাখা লাখ লাখ টাকা মেরে দিয়ে বিদেশ পাড়ি দিবে বলে রয়েছে গুঞ্জন। তাই এই এলাকার গ্রাহকের হয়রানি ও হতাশার শেষ নেই। এদিকে তাকে বাড়িতেও না পাওয়ায় এ ক্ষোভ আরো বেড়েছে বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসী হিসেবে রয়েছে তার নানা কুকর্ম। জামায়াত নেতা ই¯্রাফিলের সাথে সখ্যতা করে অপর জামায়াত নেতা স্থানীয় কর্ডোভা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হারুন রশিদ, গোলজার হোসেন ও খায়রুলসহ একটি সন্ত্রাসীর চক্রের সাথে মিলে এই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে সে।  অপরদিকে, সবুজ বাংলার গ্রাহক ও কর্মচারীদের ঠকিয়ে  তালা ঝোলানো হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানে। ফলে রুহুলের কাছে কোনো মানুষজন তার টাকা ফেরৎ চাইতে এলেও তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দিয়েও সুরাহা পাচ্ছেন না তারা। একইভাবে মামলা দিলে টাকা ফেরৎ পাবে না এমন হুমকির মুখে আইনি আশ্রয় নিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতারিত হওয়া গ্রাহকরা। পুলিশের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে গোপন আঁতাত রয়েছে বলে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকে রুহুল। তাই অভিযোগের শেষ নেই তার। এসব বিষয়ে অভিযুক্ত রুহুল আমিন বলেন, সমিতির টাকায় জমি ক্রয় করেছি সত্য, তবে জমির দাম কমে যাওয়ায় তাদের টাকা ফেরৎ দিতে পারছি না। এ সময় গড়িমসির কথা স্বীকার করেন তিনি। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, রহুল নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে নিজের প্রভাব বিস্তার করে বলে শুনেছি। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, প্রতিটি এনজিও বা সমিতির সরকারি রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করে বা সদস্যরা যদি প্রতারণার অভিযোগ করেন তাহলে আমরা তদন্ত করে রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ ব্যবস্থা নেয়া হবে।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ