Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিরসরাইয়ে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

| প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের কৃষিপ্রধান মিরসরাই উপজেলায় জমির উপরিভাগের উর্বর মাটির একটি ব্যাপক অংশ চলে যাচ্ছে ইটভাটা ও বাসগৃহ নির্মাণে। এক শ্রেণীর মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট জমির মালিকদের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে স্বল্পমূল্যে উর্বর এই মূল্যবান মাটি ইটভাটা ও গৃহ নির্মাণে বিক্রি করায় উৎপাদন প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগের ধারণা থাকলেও বাস্তবে ৭৫ শতাংশ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে বলে গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। আর এতে কৃষি ও পরিবেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মিরসরাই উপজেলায় আবাদি কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর। অনাবাদিসহ রয়েছে ৪৮ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমি। কিন্তু সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ও চলতি মওসুমে কিছু অসাধু মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের উর্বর আবাদি জমি থেকে পিকআপ ও ট্রাক্টর-ট্রলি ভর্তি করে বিক্রি করছে অবাধে। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা, নয়টিলা, রায়পুর, পূর্ব দুর্গাপুর, সোনাপাহাড়, খৈয়াছরা, ওয়াহেদপুর, জোরারগঞ্জ এলাকা থেকে এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সরাসবি স্থানীয় কিছু ইটের ভাটায়। বিশেষ করে উপজেলার রায়পুর নাইনটি সেভেন নামের ব্রিক ফিল্ড, বড়দারোগার হাট বাজার সংলগ ব্রিক ফিল্ড, মস্তাননগর রেলস্টেশন সংলগ্ন ব্রিক ফিল্ডে দেদার কৃষি জমির মাটি কেনার অভিযোগ পাওয়া যায়। উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষি পর্যবেক্ষক আনোয়ারুল হক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জমির উপরিভাগে জৈব উপাদান থাকলেও মালিকরা না বুঝে এই জৈব উপাদানযুক্ত মাটি বিক্রি করায় স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। এসব বিভিন্ন কারণে উপজেলায় আউশ, আমন, বোরো ও রবিশস্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। জানা গেছে, গ্রামের দরিদ্র কৃষক অর্থাভাবে, আবার কেউ কেউ সচেতনতার অভাবে ফসলি জমির উর্বর মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন। মিরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার নুরুল আলম বলেন, মিরসরাই উপজেলার কৃষি জমির টপসয়েল বিক্রি হওয়ায় আগামীতে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি উর্বর, এ মাটির সাথে জৈব উপাদান রয়েছে। ফসলি জমিতে ৫ শতাংশ জৈবসার থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে আছে মাত্র ১ শতাংশ। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ফসলি জমির মাটি এভাবে বিক্রি হলে আগামীতে আরো ২০ শতাংশ হারে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের সংসদ সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও কৃষিজমি রক্ষা এবং টপসয়েল বিক্রির বিষয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন। এখন প্রয়োজন শিগগিরই প্রশাসনিক ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে আইনের প্রয়োগ। মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, মাটি বিক্রি করে সাময়িক অভাব দূর হলেও ক্ষতি হয় অনেক বেশি। আমরা কৃষক পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেব। তবে এজন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।’ পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ করতে আমরা উপজেলা প্রশাসন শিগগিরই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করব। আবার যারা এসব মাটি কিনছেন সেইসব ইটের ভাটার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ