রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির দীর্ঘদিনেও শুরু হয়নি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা-মেহেরপুর ভায়া মুজিবনগর পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ কাজ। বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের স্থান ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক মুজিবনগরের গুরুত্ব বাড়াতে ও সেইসাথে অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি। জানা গেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন হয় বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথতলার একটি আম বাগানে। পরবর্তীতে এই বৈদ্যনাথতলার নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। এরপর ১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের স্মৃতি ধরে রাখতে এই আমবাগানটিতে গড়ে তোলা হয় স্মৃতিসৌধ। যা বর্তমানে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। আর ঐতিহাসিক এ স্থানটিকে ঐতিহ্যবাহী করে তুলতে পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত হয়েছে নানা স্থাপনা সম্বলিত মুজিবনগর কমপ্লেক্স। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন মুজিব সরকার ঐতিহাসিক এ স্থানটিকে অর্থবহ করে তুলতে দর্শনা থেকে মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একটি কুচক্রীমহল দেশের তৎকালিন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে। থেমে যায় রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা। এরপর ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। শেখ হাসিনা এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার ঘোষণা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিবনগরে এসে ঐতিহাসিক মুজিবনগরকে আরও ঐতিহ্যবাহী করে তুলতে আবারও দর্শনা-মেহেরপুর ভায়া মুজিবনগর রেলপথ নির্মাণের ঘোষণা দেন এবং এ প্রকল্প দ্রæত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। ফলে বাস্তবায়নের পথে আবারও উঁকি মারতে শুরু করে দর্শনা-মেহেরপুর ভায়া মুজিবনগর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি। এরপর বিগত ২০১৩ সালে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দীর্ঘ দিনেও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রেলপথ বিভাগের একটি টেকনিক্যাল টিম সরেজমিন এসে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উল্লেখিত নতুন ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণের প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে দুই বছর আগে। প্রস্তুত করা প্রাথমিক সমীক্ষা রিপোর্টে প্রস্তাবিত ওই ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটিতে মোট ৬টি রেলস্টেশন ও ৩টি ব্রিজ রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত স্টেশনগুলো হলো চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা সদর, হাতিভাঙা ও চন্দ্রবাস এবং মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা সদর, মোনাখালী ও মেহেরপুর জেলা সদর। সমীক্ষা রিপোর্টের ওই প্রস্তাবনায় এ রেলপথটিতে ৩টি ব্রিজের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙা নদীর ওপর দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা পয়েন্টে একটি, একই উপজেলার ভৈরব নদের ওপর কানাইডাঙ্গা পয়েন্টে ১টি ও ভৈরব নদের মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর পয়েন্টে ১টি ব্রিজ রাখা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা রেলপথের মাঝখানে গাইদঘাট ও জয়রামপুর স্টেশন থেকে নতুন সৃষ্ট ভিন্ন দুইটি নতুন লাইন মিলিত হবে দামুড়হুদা স্টেশনে। যেটি, মুজিবনগর স্টেশন হয়ে মেহেরপুরে পৌঁছাবে। সমীক্ষা রিপোর্টের ওই প্রস্তাবনায় ৬টি স্টেশনসহ ৫৩ কিলোমটার রেলপথ নির্মাণের জন্য চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা এবং মেহেরপুরের মুজিবনগর ও মেহেরপুর সদর উপজেলায় মোট ৫৪০ একর কৃষি জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালিসহ ১৫-১৬টি জেলার মানুষ রেলপথে ঐতিহাসিক মুজিবনগর যাতায়াতের সুযোগ পাবে। অপরদিকে এ রেলপথেই মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের মানুষ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাজারে যাওয়ার সুযোগ পাবে। আর এ রেলপথের কারণেই প্রসার ঘটবে এ এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের। দর্শনা থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন হলে পরবর্তীতে মেহেরপুর থেকে এ রেলপথটি কুষ্টিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারণ কাজও সহজ হবে। এছাড়া সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে পাস হওয়া একদিকে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন অন্যদিকে ফরিদপুর ভাঙা থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এ সমস্ত জেলার সাথেও মেহেরপুর জেলার রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে গুরুত্ব বাড়বে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের স্থান ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক মুজিবনগরের। দর্শনা থেকে মুজিবনগর ও মেহেরপুর হয়ে কুষ্টিয়া পর্যন্ত রেলপথ স্থাপিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী উন্নয়নের সূচনা হবে। সেইসাথে দর্শনা রেলবন্দর ও মুজিবনগরে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক কাস্টমস্ ও ইমিগেশন চেকপোস্ট স্থাপন করলে এ রেলপথটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ফলে উন্নয়নের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে অবহেলিত চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৫-১৬ জেলার। প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের চুয়াডাঙ্গা সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শওকত আলীর সাথে তার ০১৭১১৬৯২৮৬৫ নং মোবাইল ফোনে ১১ ও ১২মার্চ দুপুরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে চট্টগ্রামের রেলওয়ে হেড-কোয়ার্টারের প্লানিং অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কয়েকদিন আগে চিফ ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস থেকে আমাদের এখানে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিল। উক্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রস্তাবে বেশ কিছু ভুলত্রæটি থাকায় সেগুলো কারেকশনের জন্য কয়েকদিন আগে চিফ ইঞ্জিনিয়ার বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে হয়ত সেখান থেকে সমীক্ষা প্রস্তাবটি কারেকশন করে আমাদের কাছে পাঠাবে। সেটি আমাদের এখানে আসলে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।