Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সৈয়দপুরে তৈরি কিচেন আইটেম যাচ্ছে ভুটানের বাজারে

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : দেশের বাজার দখল করে বিদেশের বাজারে যাচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে তৈরি কিচেন আইটেম তৈজসপত্র। ‘মঙ্গাকে করেছি জয়, নোয়াহ্ করবে এবার বিশ্বজয়’- এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে তৈরি হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম কিচেন আইটেম, হাঁড়ি, পাতিল, জগ, ননস্টিক ফ্রাইপ্যান, ক্যাসল, কড়াই, তাওয়াসহ রকমারি পণ্য। সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের পাশে সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সাথে লাগোয়া নোয়াহ্ গ্রুপের রয়েলেক্স মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজটি প্রায় সাড়ে ৩ একর জমিতে গড়ে ওঠে ১৯৭৮ সালে। প্রথমে কারখানাটি শুধুমাত্র অ্যালুমিনিয়াম পণ্য সামগ্রী তৈরি করে গোটা উত্তরাঞ্চলের বাজার দখলে নেয়। তারপর ২০০৭ সালে শুরু হয় প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, গ্যাস চুলা, ননস্টিকের নানা পণ্য তৈরির কাজ। মানসম্মত পণ্য তৈরি করায় দ্রুত বাজার দখলে নেয় এসব পণ্য। ঢাকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রতিবছর অংশ নিচ্ছেন রয়েলেক্স মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ। কারখানায় বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছেন প্রায় সাড়ে ৩শ’ নারী-পুরুষ শ্রমিক-কর্মচারি। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে কারখানাটিতে। তাদের পরিশ্রম ও ঘামে এবং মালিকের সার্বিক তত্ত¡াবধানে কারখানায় তৈরি হচ্ছে বিদেশে রফতানিযোগ্য কিচেন আইটেম। এরই মধ্যে প্রায় ৫ লাখ টাকার ফ্রাইপ্যান, ক্যাসল, কড়াই, তাওয়াসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী পাঠানো হয়েছে ভুটানে। সেখানে দিন দিন কিচেন আইটেমের এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। কারখানার মালিক রাজকুমার পোদ্দার জানান, (এইচএস কোড-৭৬১৫-১০.০০) সর্বনিম্ন মূল্যে দুই ডলার প্রতিকেজি মূল্য ধরে নন-স্টিক কুকওয়্যার, প্রেসার কুকার এবং অ্যালুমিনিয়াম তৈজসপত্র আমদানি করা হচ্ছে। অথচ একই পণ্য দেশীয় শিল্পে যারা উৎপাদন করে তাদের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও দুই ডলার প্রতিকেজি মূল্য নির্ধারণ করে একই রকমভাবে শুল্কায়ন করা হয়। আমদানিকৃত তৈরি পণ্য এবং দেশীয় শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে একই ধরনের মূল্য ধরে শুল্কায়ন দেশীয় শিল্পের জন্য সহায়ক নয়। তিনি উল্লেখ করে বলেন, এসব পণ্য উৎপাদনে আমাদের ৪ হতে ৫ ডলার মূল্য নির্ধারণ আছে। এ কারণে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এবং তৈরি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভ্যালু যথাক্রমে দুই ডলার প্রতিকেজি ও ছয় ডলার প্রতিকেজি নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেন। বিষয়টি তিনি লিখিত আকারে নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে এফবিসিসিআই-কে অবহিত করেছেন। কারখানায় উৎপাদিত অ্যালুমিনিয়ামের প্রেসার কুকার, নন-স্টীকের তৈজসপত্র, স্টীলের বাসনপত্র, ইলেকট্রিক রাইস কুকার, গ্যাস চুলা ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানের পণ্য তৈরি হয়। এরমধ্যে প্রেসার কুকার, নন-স্টীকের তৈজসপত্র তৈরিতে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে অ্যালুমিনিয়াম সার্কেল, পিটিএফআই কোটিং, ফিটিংস সামগ্রী, পলিশিং মেটেরিয়াল, পলিশিং বাফ, অ্যালু: প্রোফাইল, এসএস সার্কেল, এসএস ফিটিংস ও ইলেকট্রিক রাইস কুকারের পার্টস, এএস সার্কেল আমদানি করতে হয়। কিন্ত এই এসএস সার্কেলের নির্দিষ্ট এইচএস কোড বা সঠিক শ্রেণি বিন্যাস না থাকার কারণে শুল্ক কর্তৃপক্ষ ইচ্ছেমতো শুল্কায়ন নির্ধারণের কারণে এ ধরনের শিল্প কারখানা বিকশিত হতে পারছে না। ফলে এই কারখানার প্রেসার কুকার উৎপাদন বন্ধ করে বিদেশ থেকে আমদানি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। রংপুর ও দিনাজপুরের মধ্যবর্তী স্থানে সৈয়দপুরে কারখানাটি অবস্থানের কারণে অতিদ্রুত এর উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বাজার দখল করে নেয়। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উৎপাদনে মাঝে মধ্যে বিঘœ ঘটে কারখানায়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ নানা সমস্যার কারণে প্রতিযোগিতার বাজারে প্রতি মুহূর্তেই হোঁচট খেতে হয়। এক সময় বাইরে থেকে এক্সপার্ট এনে এখানে কাজ করানো হতো। এখন এখানকার কারিগররা নিজেরাই এসব কাজ শিখে নিয়েছেন। নারী হাতের ছোঁয়ায় যেমন তৈরি হচ্ছে গ্যাসের চুলা তেমনি পুরুষের শক্ত হাতে নন-স্টীক সামগ্রীসহ অন্যান্য কিচেন আইটেম তৈরি হচ্ছে। কারখানার শ্রমিক- কর্মচারি আলম হোসেন, লোকমান আলী, নূর আলম জানান, কারখানার মালিক শ্রমিকবান্ধব। শ্রমিকদের মাঝে মিলেমিশে থাকেন। নিয়মিত পারিশ্রমিক প্রদানের পাশাপাশি বিশেষ দিবসে বোনাসসহ উপহার সামগ্রী প্রদান করে উৎসাহ প্রদান করে থাকেন। প্রয়োজনে শ্রমিক-কর্মচারিদের অগ্রিম টাকাও দেন। ফলে এই কারখানা দিনে-রাতে কাজ চলে। দি সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, নীলফামারীর সৈয়দপুরে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় ও অহেতুক ট্যাক্স এবং ভ্যাটের কবলে পড়ে এসব কারখানার মালিকের উৎপাদনে ব্যয় বাড়ছে। শিল্প-কারখানার সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত এসব সমস্যা দূর করা হলে এই অঞ্চলে শিল্প- কারখানা আরও বিকশিত হবে। ফলে এলাকার হাজার হাজার বেকার মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে বলে তিনি মনে করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ