Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কালিগঞ্জের ২২ গ্রামের মানুষের দুঃখ চিত্রা নদীর সাঁকো

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ থেকে : ঝিনাইদহ কালিগঞ্জে প্রায় ৫০ বছর পূর্বে চিত্রা নদীর গড়ে উঠেছে তত্বিপুর বাজার। নদীর দু’পাড়ের কমপক্ষে ২২টি গ্রামের মানুষ এই বাজারের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে। দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে ৭টি গ্রাম, আর উত্তরে ১৫টি। এই গ্রামগুলোর মানুষ কেউ ব্যবসা করেন, কেউ দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটান এই বাজারেই। অথচ একটি সেতুর অভাবে ওই নদীর দু’পাড়ের গ্রামগুলোর লোকজনের বাজারটিতে আসা-যাওয়ার ভোগান্তির শেষ নেই। এই বাজারে খুচরা ও পাইকারি বিভিন্ন মালামাল বিক্রি হয়। এলাকাবাসী বলেন, বছরে ৬ থেকে ৭ মাস তারা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হন, সে সময় নদীতে পানি কম থাকে। বাকি সময়টা অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে পানির চাপে সাঁকোও ভেসে যায়। ফলে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা দীর্ঘদিন ওই নদীর তত্বিপুর ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজো কোনো উদ্যোগ দেখেননি। ফলে ঝিনাইদহ কালিগঞ্জ উপজেলার তত্বিপুর বাজারের সঙ্গে যুক্তদের ভোগান্তির শেষ নেই। স্থানীয় মালিয়াট ইউনিয়নের তত্বিপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম ও শিক্ষক মোবাশ্বের আলী জানান, ১৯৭৩ সালে তত্বিপুর বাজার প্রতিষ্ঠিত। মালিয়াট ইউনিয়নের সেই সময়ের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ইউনিয়ন পরিষদটি ঘিরে মাত্র ৪ থেকে ৫টি টং দোকান দিয়ে যাত্রা শুরু করেন এই বাজার। বর্তমানে এখানে স্থায়ী দোকান আছে ২ শতাধিক। আর সাপ্তাহিক বাজারের আরো দোকান বসে শতাধিক। বাজারে বেশকিছু বড় বড় দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাজারের সঙ্গেই রয়েছে একটি পুলিশ ফাঁড়ি। বাজারটি যে মালিয়াট ইউনিয়নের মধ্যে সেই ইউনিয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২১টি। আর এই বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে আছে নদীর উত্তরের মালিয়াট, তত্বিপুর, দিঘেরপাড়া, দলেননগর, মাগুরা, চাকুলিয়া, রাড়িপাড়া, পাঁচকাহুনিয়াসহ ১৫টি গ্রামের মানুষ এবং দক্ষিণের বারফা, পরাণপুর, আন্দলপোতা, কাস্টসাগরা, সোনালীডাঙ্গাসহ রয়েছে ৭টি গ্রামের মানুষ। নদীর ধার ঘেঁষে রয়েছে উত্তরে তত্বিপুর ও দক্ষিণে বারফা গ্রাম। বাজারের পার্শ্ববর্তী মাগুরা গ্রামের বাসিন্দা নূর আলী জানান, বাজারটি যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন প্রতিষ্ঠাতারা ভেবেছিলেন মালিয়াট ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের মানুষ এখানে কেনাবেচা করবেন। কিন্তু অল্পদিনেই এই বাজারের দোকানপাট বাড়তে থাকে। নদীর দক্ষিণ পাড়ের গ্রামের লোকজনও নানাভাবে বাজারে আসতে থাকেন। তারা এই বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিন্তু নদীতে একটি সেতু না থাকায় তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। তারা তালের নৌকা আর কলার ভেওয়ায় পারাপার হতেন। আর এতে প্রায়ই ঘটতো নানা দুর্ঘটনা। সারাদিন পরিশ্রম শেষে পরিবারের খাবার জোটাতে চাল কিনে বাড়ি ফেরার সময় পানিতে পড়ে নষ্ট হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই অবস্থায় ১৯৯১ সালে তারা সম্মিলিতভাবে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। কিন্তু নদীতে পানি বেড়ে গেলে সাঁকো ধরে রাখা যায় না। তাছাড়া এই সাঁকো মাঝে মধ্যেই ভেঙে পড়ে। যার কারণে তারা ওই সাঁকোর স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজো কেউ এব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, বাঁশের সাঁকোটির দুই পাশে পাকা সড়কও রয়েছে। এই স্থানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এলাকার মানুষ সহজেই বাজারে আসা-যাওয়া এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহন করতে পারত। এতে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হতো, বেড়ে যেত মানুষের জীবনযাত্রার মান। গ্রামের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতার পরে অনেক জনপ্রতিনিধি এসেছেন, তারা ভোটের আগে প্রতিশ্রæতি দিয়ে ছিলেন যে, নির্বাচনে জিততে পারলে ও এলাকার মানুষ ভোট দিলে এলাকার সাঁকো আর থাকবে না পাশ করার পরে তার প্রথম কাজ হবে ব্রিজ করার। কিন্তু পরে ঐ নেতারা তাদের প্রতিশ্রæতির কথা আর মনে রাখেননি। অবশেষে ঝিনাইদহ ৪ আসনের এমপি সেতু নির্মাণের জন্য চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে এলজিইডি’র স্থানীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তত্বিপুর বাজারের দক্ষিণে চিত্রা নদীর তত্বিপুর ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার এ বিষয়ে চেষ্টা করছেন। আশা করা যায় ওই স্থানে একটি সেতু নির্মিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ