Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখীর হানা

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নোয়াখালীতে বজ্রপাতে নিহত ১, কুড়িগ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে শত শত টিনের চাল
ইনকিলাব ডেস্ক : নোয়াখালী, বরিশাল, কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে গতকাল আঘাত হেনেছে কালবৈশাখী। এতে ওইসব অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালীতে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছে। কুড়িগ্রামে শিলাবৃষ্টিতে কয়েকশ’ বাড়ির টিনের চাল ফুটো হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
নোয়াখালীতে বজ্রপাতে নিহত
নোয়াখালী ব্যুরো ঃ সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নে বজ্রপাতে মো. সেলিম (৪৫) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছে। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে পশ্চিম চরজব্বর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম ওই গ্রামের হালিম সারেং বাড়ির মো. নুরুল হকের ছেলে। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। তিনি পেশায় একজন কৃষক ছিলেন।
চরজব্বার থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জানান, সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ছিল। দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে সেলিম গরু আনতে বাড়ির পাশে যায়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
একই সময় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উঠতি বোরো ও রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ডিগ্রি কলেজের টিনেসেড ঘরের চাল উড়ে গেছে। এতে ভেতরে থাকা স্কাউটসদের কম্পিউটার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল দুপুর একটার দিকে জেলার বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। শিলাবৃষ্টিতে উঠতি বোরো ফসল ও রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া গাছ-পালা উপড়ে পড়ায় জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যা বিকেল নাগাদও স্বাভাবিক হয়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক প্রনব ভট্টাচার্য ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিকেলে জানান, ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিরুপনের কাজ চলছে। এখনও প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তবে চাটখিল ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় বেশি ক্ষতি হতে পারে বলে স্থানীয়ভাবে জানানো হয়েছে।
বরিশালে কালবৈশাখী
বরিশাল ব্যুরো : মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানেই দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে মওসুমের দ্বিতীয় দফার মাঝারী মাত্রার কালবৈশাখীতে জনজীবনে ছন্দপতন ঘটে। গতকাল দুপুর ১২টা পরে বরিশালে সাড়ে ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতসহ দমকা আকারে প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ায় ঘণ্টাখানেক জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়। এসময় বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকাতেই বিদ্যুৎ সরবারহও বন্ধ ছিল। অথচ মাত্র ২৪ ঘন্টা আগেই মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক ও নৌযোগাযোগ অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। চৈত্রের ঐ কুয়াশা রবি ফসলের জন্য ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। আবহাওয়া বিভাগের মতে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। অপর একটি লঘুচাপ উত্তর বঙ্গোপসাগরসহ সন্নিহিত এলাকায় রয়েছে। পাশাপাশি মওসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় রয়েছে। বরিশাল ও খুলনাসহ সমগ্র উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পাবার সম্ভাবনার কথা বলে আবহাওয়া বিভাগ।
গত ৪৮ ঘণ্টায় বরিশালে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে সাড়ে ৬ ডিগ্রী বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকালে ২১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উন্নীত হয়। অপরদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ৪৮ ঘণ্টায় অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করেছে। বৃহস্পতিবার ৩০.৩ ডিগ্রী থেকে শুক্রবার ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে ২৭.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে স্থির হলেও গতকাল তা আবার ৩০.৫ ডিগ্রীতে উন্নীত হয়। তবে আজকের পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় দিনের তাপমাত্রা আবার হ্রাস পাবার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
কুড়িগ্রামে শিলাবৃষ্টি
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা :
কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ^রী ও ফুলবাড়ী উপজেলার হলোখানা ও ভোগডাঙা ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ি  ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টিনের চাল ফুটো হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি। ধান ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে উঠতি আলু ক্ষেতের ক্ষতিতে মুষড়ে পড়েছেন কৃষকরা। সবচেয়ে বেশী হয়েছে সদর উপজেলার হলোখানা, ভোগডাঙা, নাগেশ^রীর ভিতরবন্দ ও ফুলবাড়ীর বড়ভিটা ও ভাঙামোড়  ইউনিয়নে।
হলোখানার হেমেরকুঠি গ্রামের আজাদ আলী ও আক্কেল আলী জানান, তাদের টিনের চাল ব্যাপকভাবে ফুটো হয়েছে। ধানগাছের ডগা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। সদ্য রোপণকৃত ভুট্টার চারা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আজাদ আলী জানান, গত কয়েক দশকে এমন শিলাবৃষ্টি দেখেননি তারা।
ভেরভেরি গ্রামের তারা মিয়া জানান, তাদের গ্রামে একশ’ বাড়িতে টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। চর হলোখানা গ্রামের মমিনুল হক জানান, এক একটি শিলার ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম। শিলাবৃষ্টির সময় অনেকেই চৌকি ও খাটের নিচে আশ্রয় নেন।
ফুলবাড়ীর ভাঙামোড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাবু বলেন, ‘এলাকা পরিদর্শন করে ব্যাপক ক্ষতি লক্ষ্য করছি। টিনের চাল মাকড়শার জালের মতো হয়ে গেছে। এটা একটা বড় ধরনের দুর্যোগ এলাকার মানুষের কাছে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিন আল পারভেজ জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  
অনেক জায়গায় চৈতালী বৃষ্টি বজ্রপাত        
চট্টগ্রাম ব্যুরো :       
এছাড়া লঘুচাপের বর্ধিতাংশের প্রভাবে গতকাল (শনিবার) দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই চৈতালী বৃষ্টির সময় চট্টগ্রামসহ কোন কোন জায়গায় দমকা হাওয়া এবং বজ্রবৃষ্টি হয়। গত সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে নোয়াখালীতে ৬২ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৮ মিমি, ময়মনসিংহে ১১ মিমি, চট্টগ্রামের স›দ্বীপে ৪৫ মিমি, চাঁদপুরে ৩০ মিমি, সিলেটে ১৪ মিমি, বগুড়ায় ৩ মিমি, বরিশালে ৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছে।
আজ (রোববার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দুয়েক জায়গায় দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি জায়গায় শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ২ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।



 

Show all comments
  • Golam Mostafa ১৯ মার্চ, ২০১৭, ৪:০৭ এএম says : 0
    Yah Allah Plz save us
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কালবৈশাখী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ