Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রস্তাবিত র‌্যাব সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলা নিহত ১ : আইএসের দায় স্বীকার

র‌্যাবের ২ সদস্য আহত

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর আশকোনায় প্রস্তাবিত র‌্যাব সদর দফতরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে সন্দেহজনক জঙ্গি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন র‌্যাবের দুই সদস্য। বিস্ফোরণের পর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে আত্মঘাতী ব্যক্তির দেহ। কোন দল বা গোষ্ঠীর তা নিশ্চিত না হলেও র‌্যাব বলছে, আত্মঘাতী হামলাকারী জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য। এদিকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) আত্মঘাতী এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনার পর দেশের সবগুলো বিমানবন্দর, কারাগার, থানা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিশেষ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। আহত দুই র‌্যাব সদস্যকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘটনাস্থলে ছুঁটে যায় বোম ডিসপোজাল ইউনিট।
আশকোনার হাজী ক্যাম্পের পশ্চিম পাশে প্রস্তাবিত র‌্যাব সদর দফতর অবস্থিত। সেখানে রয়েছে অস্থায়ী ব্যারাক। হাজী ক্যাম্প ও প্রস্তাবিত র‌্যাব সদর দফতরের মাঝে একটি সীমানা প্রাচীর আছে। র‌্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আশকোনার হাজী ক্যাম্প সংলগ্ন র‌্যাব সদর দফতর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গা। সেখানে র‌্যাব ভবন নির্মাণকর্মী ও তদারককারীরা ওই কম্পাউন্ডের ভেতরে অস্থায়ী ব্যারাকে থাকেন। পাশেই একটি জায়গা আছে, যেখানে তারা গোসল করা বা কাপড় ধোয়ার কাজটি করেন।  
গতকাল বেলা আনুমানিক বেলা ১টার দিকে যা গ্রিল ও দেয়াল দিয়ে নির্মিত ডানপাশের বাউন্ডারি টপকে অজ্ঞাত ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশ করে। র‌্যাব সদস্যরা তাকে দেখে চ্যালেঞ্জ করে। এ সময় ওই ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এর মধ্যেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ব্যক্তির দেহে থাকা বোমার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এ সময় পাশে থাকা দুই র‌্যাব সদস্যও সামান্য আহত হন। ঘটনার পর আহত র‌্যাব সদস্যদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দুই র‌্যাব সদস্য আশঙ্কামুক্ত।
র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সরোয়ার বিন কাশেম বলেছেন, জুমার নামাজের আগে ২৫-৩০ বছর বয়সী এক যুবক ক্যাম্পের সামনে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। হামলাকারীর পরিচয় জানা যায়নি। ওই আত্মঘাতী হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আত্মঘাতী হামলাকারীর লাশের আশপাশে কালো কাপড়ের ছিন্নভিন্ন টুকরা পড়ে ছিল। এ ছাড়া, সাদা রঙের পোশাকের একটি টুকরাও দেখা গেছে। তার গলায় একটি নীল রঙের গেঞ্জির মতো কিছু একটা বাঁধা ছিল। পাশেই ছিল একটি ক্যাপ। আত্মঘাতী হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় হামলাকারীর শরীর। হামলাকারীর গলার নীচ থেকে শরীরের কঙ্কাল-কাঠামো ছাড়া বলতে গেলে কিছুই অবশিষ্ট নেই। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কালো কাপড়ের টুকরা থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, জঙ্গির পরনে কালো রঙের কোনো পোশাক ছিল। এদিকে গত রাত ৮টার দিকে আত্মঘাতী জঙ্গির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ছুটির দিনের দুপুরে ওই বিস্ফোরণের খবর পেয়ে র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশকোনায় ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ক্যাম্পের বাইরে ভিড় করে উৎসুক জনতা। র‌্যাব ও বোম্ব ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখে আত্মঘাতীর শরীর কিংবা ঘটনাস্থলের আশপাশে বিস্ফোরক রয়েছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তবে সে ধরনের কোনো আলামত মেলেনি। ঘটনাস্থলের আশপাশে পাওয়া যায়নি কোনো লিফলেট বা অন্য কোনোকিছু।
সুলতান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, জুমার নামাজ শুরুর কিছু আগে তিনি বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান। কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। পরে র‌্যাব ক্যাম্পে ছুটাছুটি দেখে সেখানে এগিয়ে যান। দেখেন মাটিতে পড়ে আছে একজনের ছিন্ন ভন্ন দেহ। র‌্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) মুফতি মাহমুদ খান বলেন, হামলাকারী কোন দলের বা কোন গোষ্ঠীর, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে তার কাছে থাকা বিস্ফোরকের ধরণ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, আত্মাঘাতী হামলাকারী  জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য। এদিকে আমাক মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের মাধ্যমে ঢাকার আশকোনায় এই হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে বিস্ফোরণ স্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। পরিদর্শন শেষে তারা প্রাথমিকভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
এদিকে দেশে এই প্রথম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফতরে কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটনার পর সারাদেশের থানা, কারাগার, সকল বন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশের থানাগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের বুলেটপ্রæফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরে থানার গেটে ডিউটি করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
কারা অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, জঙ্গি হামলার পর সারাদেশের কারাগারগুলোতে কর্মকর্তা এবং কারারক্ষীদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।



 

Show all comments
  • Rashidul ghani ১৮ মার্চ, ২০১৭, ৮:৩৪ এএম says : 0
    People of Bangladesh is peaceful. They believe that religion is for mankind, they don't belive in religipus terrorism.
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৯ মার্চ, ২০১৭, ২:২৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা মাঝখানে একটু কম হলেও আবার এটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠিছে। এরই মধ্যে আবার আমাদের মন্ত্রী দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। আবার জামাত হেফজতের ঘাড়ে চেপে মাঠে নামছে; এটাও বুঝার বিষয়। আমাদের মন্ত্রী যদি পুলিশি কায়দায় কথা না বলে তিনি যে একজন দায়িত্ববান জনপ্রতিনিধি সেই কথাটা মাথায় রেখে কথা বলেন এবং সামনের দিকে এগিয়ে যান তাহলে মনে হয় অবস্থার পরিবর্তন হতেও পারে। আমি নিশ্চিত এটা আইএস এর কাজ নয় কিন্তু তারা সুযোগের স্বদব্যবহার করেছে মাত্র। সাথে সাথে পুলিশদেরকে ঘটনার উপর গল্প বলা বন্ধ করতে হবে এবং ঢালাওভাবে পুলিশ সাংবাদিকদের সাথে মিথ্যার ঝুলি খুলে কথা বলতে পারবেনা। প্রয়োজনে একটি মিডিয়া সেল করে সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশদের সঠিক ভাবে বুঝাতে হবে তারা দেশের রাজা নয় ওরা হচ্ছে সাধারন জনগণের সেবক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইএস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ