Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি সীমা-সাক্কু

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। আর মাত্র ১১দিন পর ৩০ মার্চ কুসিক নির্বাচনের চ‚ড়ান্ত পরীক্ষায় কে হবেন মেয়র? হেভিওয়েট দুই প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের কাছে এমন অঙ্কের হিসাব দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। তবে স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পৌর ও নগর পিতার আসনে বেশ সময় ধরে থাকার কারণে রাজনীতির বাইরেও সাধারণ পর্যায়ে সাক্কুর ব্যাপক জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়েছে। সেইদিক থেকে সীমার জনপ্রিয়তা এলাকাকেন্দ্রিক গড়ে উঠলেও দলীয় রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজের বিষয়টি কুসিক নির্বাচনে জনপ্রিয়তা সৃষ্টিতে অনেকটা কাজে আসবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সিটিতে কুমিল্লায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত দলীয় প্রতীকের ভোটযুদ্ধে সমান তালে চলছে সীমার নৌকা ও সাক্কুর ধানের শীষের প্রচারণা। আলোচিত কুসিক নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি ওই দুই প্রার্থী ভোটারদের কাছে নিজেদের ব্যক্তি ইমেজকে তুলে ধরে জনপ্রিয়তা অর্জনেও মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
নির্বাচনী উৎসবে মুখরিত গোটা কুমিল্লা। বিভিন্ন মহল্লা ও পাড়ার অলি-গলিতে ফুটে ওঠেছে ভোটের আমেজ। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী সাক্কু ও সীমার দিকে নগরীর সাধারণ মানুষসহ ভোটারদের চোখ। নির্বাচনী প্রচারণায় মেয়র প্রার্থী সাক্কু ও সীমা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কুশল বিনিময় করছেন, আর দোয়া ও ভোট চাইছেন। কেবল তাই নয়, উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। নির্বাচনী উত্তাপে সরগরম সমগ্র সিটি করপোরেশন এলাকা। জনপ্রিয়তার মানদÐে সাক্কু নাকি সীমা এগিয়ে রয়েছে এমন মন্তব্য ভোটাররা করতে চাইছেন না। তবে ভোটাররা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী দু’জনই নগর উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। সাবেক মেয়র সাক্কুর বিগত দিনের কাজের মূল্যায়ন বিবেচনা করেই দলের বাইরের সাধারণ ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেবেন। আর সীমা নগর উন্নয়নে তথা নাগরিক সুবিধার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে কতটুকু ভ‚মিকা রাখতে পারবেন এ নিয়েও সাধারণ ভোটাররা চিন্তাভাবনা করছেন। দলীয় ভোটারদের বাইরে যেসব সাধারণ ভোটার রয়েছেন, তাদের কাছে প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তি ইমেজের বিষয়টি উপস্থাপনে সাক্কু ও সীমা দু’জনেই কৌশলী হয়ে ওঠেছেন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার এ সময়টিতে বিএনপি প্রার্থী সাক্কু দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কুমিল্লা সিটিতে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমার ভোটব্যাংক এলাকাগুলোতে নেতাকর্মীদের বেশ সতর্কতার সাথে পা ফেলে ভোটারদের মন জয়ের ক্ষেত্রটি তৈরি করার ব্যাপারেও বিএনপির কৌশলী প্রয়োগ চলছে। এসব এলাকা থেকে সাক্কুর পক্ষে ভোট আনা অনেকটা কঠিন হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকনির্দেশনায় স্থানীয় নেতারা কর্মপন্থা তৈরি করে রেখেছেন। সীমার ভোটব্যাংক এলাকায় সাক্কুর জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত করতে বিএনপি নেতারা কৌশলী হয়ে ওঠেছেন। গতকাল সকালে সিটির দক্ষিণ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় বের হওয়ার আগে বিএনপি প্রার্থী সাক্কু বলেন, ‘দলীয় নির্বাচনে প্রতীকের বাইরেও ভোটার ও সাধারণ মানুষের কাছে আমার ব্যক্তিইমেজ রয়েছে। সিটি নির্বাচনের মতো একটি বড় নির্বাচনে প্রার্থী হলেই জনগণের প্রিয় হয়ে ওঠা যায় না। জনপ্রিয় হতে হলে জনগণের জন্য কাজ করতে হয়। দীর্ঘদিন নগরকর্তার দায়িত্বে থেকে এবং তৃণমূলে রাজনীতি করার মধ্যদিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আর এভাবে কাজ করতে করতে আমার কিছুটা হলেও তো জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। এ জনপ্রিয়তা উন্নয়নের জনপ্রিয়তা। তাই আমি বিশ্বাস করি, আমার জনপ্রিয়তা যাচাই করেই নগরবাসী আমাকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে সিটির দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত করবেন। আর এবার মেয়র নির্বাচিত হলে আমি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে সবুজায়ন ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।’
অন্য দিকে, রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য কুসিক নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দু’চোখের পাতা এক হচ্ছে না। আর স্থানীয় নেতারা মরিয়া হয়ে ওঠেছেন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সীমার জয় নিশ্চিত করার জন্য। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন, দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সীমার জয়ের বিষয়টি দলের জনপ্রিয়তার সাথেও জড়িয়ে রয়েছে। তাই সীমাকে তার ইমেজ কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয়তার জায়গায় অপ্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে ওঠতে হবে। আর তাই এ নির্বাচন দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দলীয় ভোটারের বাইরে তৃণমূলের সাধারণের ভোট নৌকা প্রতীকে নিশ্চিত করার জন্য দলের নেতাকর্মীরা ২৭টি ওয়ার্ডে কর্মপরিকল্পনা করে এগুচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, কুমিল্লা সিটিতে ৫০ হাজারের বেশি ভোটার রয়েছে, যারা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। এমন সব ভোটার আয়ত্তে আনতে হলে প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার অনেক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সে একটি রাজনীতি পরিবারে বেড়ে ওঠ মেয়ে। রাজনৈতিক, পারিবারিক সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে সীমা নিজেকে গড়ে তুলেছেন। যখনই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তখনই জয়লাভ করেছেন। নির্বাচন নিয়ে সীমার জীবনে পরাজয় কখনো আসেনি। তাই কুমিল্লা আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী আশাবাদী, সীমা তার ব্যক্তি ইমেজ দিয়ে সব শ্রেণির ভোটারদের মন জয় করবেন। দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধতা ও সীমার জনপ্রিয়তা নৌকাকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ