রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : নানা অনিয়ম ও সংশ্লিষ্টদের নজরদারির অভাব আর অবহেলায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর উপর নির্মিত গলাইদড়িঘাট সেতুটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দায়সারাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি কয়েকবার মেরামত করা হলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বরং ক্রমান্বয়ে ঘটছে অবনতি। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে ছোটবড় শত শত যানবাহনসহ হাজার হাজার মানুষ পারপার হচ্ছে এ সেতুটি দিয়ে। ভারি যানবাহনের ভারে জরাজীর্ণ সেতুটি যে কোন সময় ধসে পড়ে জানমাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ রুটে চলাচলকারী যানবাহনসহ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেতুটি দ্রæত মেরামতের দাবি। জানা যায়, ইংরেজি ১৯৯৫ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর উপর গলইদড়ি ঘাটে ভবিষ্যতে প্রশস্ত করার ব্যবস্থা রেখে বেইলি সেতু নির্মিত হয়। আর এ সেতুটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন ঘটে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের। নির্মাণকাজ শেষ হলে ওই বছরই ২ আগস্ট তৎকালীন সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী অলি আহম্মদ বীর বিক্রম এ সেতুটির উদ্বোধন করেন। তখন থেকে এ সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে নানা অনিয়ম সেইসাথে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে নজরদারি না থাকায় মেরামতের অভাবে সেতুটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সরেজমিন সেতু ও সেতু সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নির্মিত সেতুটির মোট প্রশস্ততা ১৩ ফুট। তার মধ্যে দুই পাশে রেলিংয়ের ২ ফুট বাদ দিয়ে চলাচলের জায়গা মাত্র ১১ ফুট। যেকোন দিক থেকে এই সেতুটির উপর একটি বাস বা ট্রাক উঠলে পাশে আর জায়গা থাকে না। ফলে কোনো দিকে থেকে আসা একটি বাস, ট্রাক বা অন্য কোন গাড়ি সেতুটি পার হওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে সেতুর সামনের রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেতুর উভয় পাশে অবৈধভাবে রাস্তার জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে দোকানপাট। এছাড়াও সেতুর উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ রোডের ফাঁকা জায়গার পাশ থেকে মাটি সরে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হওয়ার কারণে পারাপারের অপেক্ষায় লোড গাড়িগুলোকে একপাশে কাত হয়ে বিপদজনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফলে একই সময়ে উভয় দিক থেকে আসা যানবাহনগুলোকে সেতুটি পারাপার হতে অনেক বেগ পেতে হয়। নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান সময়। এ ছাড়াও বর্তমানে সেতুটির পাটাতনের নিচের বেশ কয়েকটি লোহার বিমের বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ধরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাটাতনের বিভিন্ন স্থানে জং ধরে ঝাঝরা হয়ে গেছে। ঢিলা হয়ে গেছে বিমের সাথে পাটাতনের সংযোগস্থলের নাট-বোল্টগুলো। অনেক স্থানের নাটবোল্ট ভেঙে নষ্ট হয়ে পাটাতন আলগা হয়ে গেছে। ফলে ভারি যানবাহন সেতুর উপর উঠলে ওই স্থান দেবে যায় এবং সেইসাথে বিকট শব্দ হয়। এতে গাড়ির চালক ও যাত্রীরা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে সেতুটি পারাপার হয়। ইতোমধ্যেই চোরচক্র সেতুর দুই পাশের রেলিংয়ের অনেকাংশের পাইপ কেটে চুরি করে নিয়ে গেছে। ফলে ওই স্থান ফাঁকা হয়ে থাকায় সেতু পারাপারের সময় পথচারী বা যানবাহন সেতুর নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীর পশ্চিম পাশে সেতুর নিচ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে সেতুর শেষ প্রান্তের পিলারটি হুমকির মুখে পড়েছে। পশ্চিম পাশে সেতুর নিচে অবৈধভাবে নদীর জায়গা দখল করে ঘরাবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে অনেকে। এছাড়াও সেতুর উভয় পাশের ডান-বামে নদীর নাম, সেতুর নাম, নির্মাণের সন, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত দু’টি করে সাইনবোর্ড থাকলেও বর্তমানে সেগুলো দখল করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে এ সেতু ও নদী সম্পর্কে উল্লেখিত তথ্যসমূহ জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্মের স্থানীয় ছেলেমেয়েসহ এ পথে চলাচলকারী দূর-দূরান্ত আসা মানুষেরা। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির উপর সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন নজরদারি না থাকায় এমন অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বর্তমানে এ সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন মুজিবনগর থেকে ছেড়ে আসা ৫-৬টি পরিবহন সংস্থার প্রায় অর্ধশতাধিক ঢাকাগামী কোচ, আঞ্চলিক রুটের বাস, পণ্যাবহী ট্রাক, মোটরসাইকেল, সাইকেলসহ শত শত যানবাহন ও পথচারীরা চলাচল করে থাকে। যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ জেলার মানুষ বিভিন্ন যানবাহনযোগে এ সড়ক দিয়েই যাতায়াত করে থাকে ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরিক্ষা শেষ হলে মুজিবনগরে বনভোজন ও শিক্ষাসফর করার জন্য প্রতিদিন কয়েক শত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনযোগে হাজার হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করে থাকে। এ অবস্থা চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। আবার এ সময়ের মধ্যে দর্শনা কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে আখবোঝাই শত শত পাওয়ারট্রলি, ট্রাক্টর ইত্যাদি যাতায়াত করে। এছাড়াও এই দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের ধারে অবস্থিত ডজনখানেক হাটবাজার থেকে কৃষিপণ্যসহ নানারকম মালামাল ভর্তি ট্রাক এ সেতুটির উপর দিয়েই ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনার ঘটার আগেই সেতুটি মেরামত করে এ পথে যাতায়াতকারী যানবাহন ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরামতের ব্যবস্থা করবেন এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামতের জন্য এস্টিমেট করতে বলেছি। খুব শীঘ্রই সেতুটি মেরামত করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।