Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মীরসরাইয়ে অর্থনৈতিক জোন পাল্টাচ্ছে ইছাখালি চরাঞ্চলের দৃশ্যপট

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : শীতের শুষ্ক মৌসুম কর্মযজ্ঞ পেরিয়ে বসন্তে এবার কদিন ধরে মেঘময় আকাশ হালকা বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে মীরসরাইয়ের অর্থনৈতিক জোনে পুরো উদ্যমে চলছে উন্নয়ন কার্যক্রম। শুরু হয়েছে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎসহ ১ হাজার একর জমিতে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, প্রকল্প এলাকার মাটি ভরাটসহ দৃশ্যমান নির্মাণ কাজ শেষের দিকে পৌঁছে সুপেয় পানি উত্তোলন, প্রকল্প এলাকা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ শুরুসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলছে দ্রæত গতিতে। আবার ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকায় সারি সারি বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন, বিভিন্ন প্রকার নির্মাণ কাজের ব্যস্ততা, বড়তাকিয়া থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত ফোরলেন সড়ক নির্মাণ কাজের অধিগ্রহণ অগ্রগতি ইত্যাদি দৃশ্যমান। প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, কাজের অগ্রগতির সাথে পাল্টাতে শুরু করেছে উপজেলার ইছাখালি চরাঞ্চলের দৃশ্যপট। নদীর জেগে ওঠা নিঝুম চর এখনি ব্যস্ত রুমঝুম শহরে রূপ নিতে শুরু করেছে। চিরচেনা জনপদ যেন বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন। জনপদের সাধারণ মানুষ, কৃষক, চাকরিজীবী, পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিরাও যেন পালাবদলের হাওয়ায় বদলে যাচ্ছে। শত শত শ্রমিক ও উৎসুক মানুষের কোলাহলে এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরাঞ্চল। রাতদিন শোনা যায় স্কেভেটর আর ট্রাকের আওয়াজ। শ্রমিকদেরও কর্মব্যস্ত সময় পর্যন্ত মুখরিত দেখা যাচ্ছে সেখানে। এক হাজার একর জমিতে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে সেখানে। তবে এর পূর্বে আগামী এক বছরের মধ্যে দেড়’শ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই কর্মযজ্ঞও শুরু হয়ে গেছে বলে আজাদীকে জানান বেজা চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্মাণ করা বিদ্যুৎ লাইন থেকে আশপাশের বিদ্যুৎ বিহীন গ্রাম, পরিবারগুলোকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের কোন পরিবার বিদ্যুৎ বিহীন থাকবে না। গত ৯ মার্চ মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রশাসনিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। সমাবেশে উপস্থিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, ইতোমধ্যে অগণিত দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিদ্যুৎ। আর তাই কার্যক্রম শুরু করা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ১ বছরের মধ্যেই উৎপাদন শুরু করায় যেতে পারবো আশা করছি। আর এর লক্ষ্য ১ বছরের মধ্যেই এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই এখানকার শিল্প কলকারখানার ব্যস্ততা শুরু হবে। জানা যায়, আগামী ১৫ বছরে যেখানে কর্মসংস্থান হবে ৩০ লাখ মানুষের। বর্তমান সরকারের নেয়া পদক্ষেপে সাগর পাড়ের ধু ধু চর এখন পরিণত হতে যাচ্ছে দেশের বৃহৎ শিল্প নগরীতে। সম্প্রতি চীনা কোম্পানি জিনডোন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) কর্তৃপক্ষের সাথে (এমওইউ) চুক্তি হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগ ও উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী সদস্য আবদুস সামাদ ও চীনা কোম্পানির চেয়ারম্যান জিয়ানচেন জু। চুক্তিতে চীনা কোম্পানির ২.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে। এখন জিনডোন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পরিবেশসহ প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিয়ে দ্রæত কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে। এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০৫৫ একর জমি চেয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে। জানা গেছে, তাদের সেখানে জমি দেয়ার বিষয়টি প্রায় চ‚ড়ান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলে এ নিয়ে চুক্তি হতে পারে। গত ২০ নভেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয়। চিঠি বেজাকে পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ২২ জানুয়ারি ভারত একটি চিঠিতে মিরসরাইতে সম্ভাব্য জমিও চিহ্নিত করেছে বলে জানায়। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশীয় বড় বড় কোম্পানি আশপাশে জমি কিনছে। ইতোমধ্যে চরের আশপাশের জমির দামও বেড়েছে শতগুণ প্রায়। সব মিলিয়ে ইছাখালী চরে নদীর পাড়ে চরাঞ্চলে এখন চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে শত শত শ্রমিক। এস্কেবেটর দিয়ে মাটির কাজ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৫৫০ একর জমিতে এখন চলছে ভ‚মি উন্নয়ন, এলাকায় যাওয়ার জন্য সড়ক নির্মাণ, সুপেয় পানির সরবরাহ ও বাঁধ নির্মাণের কাজ। বাঁধ নির্মাণের কাজে ১৫ থেকে ২০টি স্কেভেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মঘাদিয়া থেকে প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার জন্য ৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের দিকে। চারলেন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজও এগিয়ে চলছে। এছাড়া চর জেগে ওঠার কারণে সেখানকার জমি অনেক নিচু। তাই ভ‚মি উঁচু করতে এখন সেখানে ফেলা হচ্ছে মাটি। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ছুটে যাচ্ছে। অবহেলিত সমুদ্র চরে যেন স্বপ্নদুয়ার খুলে গেছে। ভবিষ্যতে যাতে পানির কারণে ইকোনমিক জোন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য চলছে বাঁধ নির্মাণের কাজ। বাঁধে থাকছে ¯øুইসগেট কাম সেতু। এই কাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২২ কোটি ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩শ ১টাকা। ২২ কোটি ৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ওই মাটি ফেলা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, ডিএফআইডি ও সরকারি অর্থায়নে এসব কাজ করছে মেসার্স আতাউর রহমান খান নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মীরসরাই এর এই অর্থনৈতিক জোনে ১৫ হাজার একর খাস জমিতে ৫০টি উপ-অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বেজার। ইতোমধ্যে ৬ হাজার ৩৯০ একর বেজার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি নয় হাজার একর জমি আগামী ২ বছরের মধ্যে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। হস্তান্তর করা ৬ হাজার ৩৯০ একর জমির মধ্যে পীরের চরের ১৩৯০ দশমিক ৩১৬ একর, সাধুর চরের ১৬৪৪ দশমিক ১০৩৯ একর, শিল্প চরের ১৮৫২ দশমিক ৫৩৮৫ একর এবং চর মোশারফের ১৫০৪ দশমিক ২৯৩০ একর জমি সর্বমোট ছয় হাজার ৩৯০ একর জমি প্রথম ধাপের কর্মপরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে মিরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ৩০ হাজার একর জায়গাকে অর্থনৈতিক জোনে মিলিত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান জানান, ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কারণে দেশের অর্থনীতিতে মীরসরাই অঞ্চল অবদান রাখবে পাশাপাশি এখানকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ