Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হতদরিদ্রদের চাল খোলাবাজারে বিক্রি করছেন ফুড এসআই

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : রূপগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি সরকারি চাল বিক্রির অনিয়মের হোতা নারায়ণগঞ্জ জেলায় কর্মরত এক উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাড়িয়া ছনি ও ইছাপুরা এলাকায় একজন ডিলারের গোডাউন থেকে চাল বিক্রি করছেন উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক আজিজুল হক দুলাল নিজেই। এ সময় তার পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে এসআই (ফুড) বলে পরিচয় দেন। আর এসআই (ফুড) আতঙ্কে ডিলার লাকী বেগম তাকে বাধ্য হয়ে ডিলারশিপের (অলিখিত) পার্টনার হিসেবে নিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, আজিজুল হক দুলাল নারায়ণগঞ্জ জেলার খাদ্য অধিদপ্তরের একজন উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তবে নিয়মিত অফিস না করে নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন বলে রয়েছে অভিযোগ। সূত্র জানায়, দুলাল রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাগবের এলাকার ২নং ওয়ার্ড (১নং ইউনিটের) সাবেক মহিলা মেম্বার সামসুন্নাহারের ছেলে। রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নে দীর্ঘ সময় নির্বাচন না হওয়ায় তার মা বিগত ১২ বছর যাবৎ মহিলা মেম্বার হিসেবে থাকায় নানা অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে অর্থ। বয়স্ক ভাতা পেতে দুস্থদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া ও নানা অনিয়ম করায় গত নির্বাচনে স্থানীয়রা তাকে ভোট দেয়নি। ফলে নির্বাচিত হননি তার মা সামসুন্নাহার। অবৈধ পথে আয় করা এসব অর্থ তার মা সামসুন্নাহার অনিয়মের মাধ্যমে উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে তার ছেলেকে নিয়োগ পাইয়ে দেয়। ফলে উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় ভিজিএফ কার্ড, দুস্থ ভাতা, বয়স্ক ভাতা এমনকি সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিক ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য নির্ধারিত চাল নিয়েও রয়েছে তার বেপরোয়া অনিয়ম। সরকারী চাল হতদরিদ্রদের মাঝে বিক্রি করার কথা থাকলেও অনিয়মের মাধ্যমে দুস্থদের বঞ্চিত করে ধনী ও নেতাকর্মীর নাম হতদরিদ্র তালিকায় লেখা হয়েছে। এতে বঞ্চিত হয় সদর ইউনিয়নের দেড় হাজার দুস্থ ও হতদরিদ্রজনেরা। স্থানীয়রা আরো জানায়, আজিজুল হক দুলাল উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে পড়ে। সরকারি গোডাউন থেকে চাল এনে বিভিন্ন চালের আড়তে পাচার করে থাকেন বলেও রয়েছে নানা গুঞ্জন। তাকে সহযোগিতা করেন কথিত মহিলা লীগ নেত্রী লাকী বেগম। লাকী বেগমের নামে রয়েছে একটি ডিলারশিপ। সেই ডিলারশিপের নাম ভাঙিয়ে উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক দুলাল উপস্থিত থেকে উপজেলার বিভিন্ন পাইকারি চালের আড়তে ও মুদি দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিশেষ নজরদারি থাকায় তা না করতে পারলেও ইউপি সদস্যদের সাথে গোপন আঁতাত করার চেষ্টা করে এসব কুকর্ম করে গরিবদের ঠকিয়ে যাচ্ছে এই অসাধু কর্মচারী। এদিকে সরকারি চাল আত্মসাতের সাথে রয়েছে তার সরাসরি হাত। তার কু-বুদ্ধিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও নেতাকর্মীরা হতদরিদ্রের তালিকায় ভুয়া নাম ব্যবহার করেছে। এসব ভুয়া নাম থাকায় নিজেরাই জাল স্বাক্ষর করে চাল অবিক্রিত দেখিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে বাড়তি টাকা। একই কায়দায় গোয়াল পারা এলাকার আজান মিয়ার ও রিটনের মুদি দোকানে ২ বস্তা করে ৪ বস্তা, বাড়িয়া ছনির শাহীনের মুদি দোকানে ৪ বস্তা, ভক্তবাড়ির মনায়েমের মুদি দোকানে ২ বস্তা, হাবিব নগরের রহমতউল্লার দোকানে ও বেলদির হেলালের চালের দোকানেসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা চালের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি করেছে সরকারি চাল। তারা কিনতে না চাইলেও বিক্রি করে টাকা দেয়ার শর্তে সরকারি সিলযুক্ত বস্তা বদলিয়ে বিক্রি করা হয়েছে এসব চাল। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় দরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছে বলে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে স্থানীয় দুস্থ ও হতদরিদ্রদের ক্ষোভের শেষ নেই। নবগ্রাম এলাকার হেলেনা বলেন, আমি রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাই তবু আমার নাম নেই তালিকায়। তাই আমি পাইনি সরকারি সুবিধা। সুরিয়াব এলাকার রতন মিয়া বলেন, আমি নির্মাণ শ্রমিক, দিনে আনি দিনে খাই, তবু আমার নামে কার্ড হয়নি। আমি কষ্ট করে জীবন চালাই। অভিযুক্ত খাদ্য পরিদর্শক আজিজুল হক দুলালের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ফুড এসআই হিসেবে কাজ করলেও কোনো অনিয়ম করিনি। ডিলার লাকী বেগম আমার কাছে সহযোগিতা চাইলে একটু শ্রম দিয়েছি। এ সময় তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান তারেক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রিতে যারা অনিয়ম করছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভুইয়া রানু বলেন, ইউপি সদস্যরা এ চাল বিক্রির সাথে জড়িত নয়। উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক দুলাল তার নিজ এলাকায় কী করে কাজ করে তা আমার জানা নেই। এ সময় তিনি আরো বলেন, হতদরিদ্র সংখ্যার তুলনায় কার্ড সংখ্যা কম থাকায় অনেকে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ইসলাম বলেন, হতদরিদ্রদের চাল বিক্রিতে অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। তাছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ডিলারদের ডিলারশিপ বাতিল ও জেল-জরিমানা করার মাধ্যমে এসব অনিয়ম বন্ধে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ