Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানিতে ভাসল ‘বিএনএস নিশান’ ও ‘বিএনটি পশুর’

| প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত বড় মাপের যুদ্ধজাহাজ ‘বিএনএস নিশান’ ও সাবমেরিন টাগ ‘বিএনটি পশুর’ গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে রূপসা নদীতে ভাসিয়ে বলেছেন, সততা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এ নৌ-নির্মাণ প্রতিষ্ঠান।
খুলনা শিপইয়ার্ড আজ দেশ ও জাতির গর্ব বলে উল্লেখ করে নৌবাহিনী প্রধান বলেন, এ অর্জন যেন কোনোভাবেই মøান না হয়, সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, অত্যাধুনিক এ যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন টাগ নির্মাণ খুলনা শিপইয়ার্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকেও বিশ্বমানে পৌঁছে দিতে সহায়ক হবে। গতকাল সকালে খুলনা শিপইয়ার্ডের সবুজ চত্বরে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর জন্য নির্মিত দু’টি লার্জ পেট্রোল ক্রাফটের দ্বিতীয়টি এবং সাবমেরিন টাগ আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চিং অনুষ্ঠানে এমপি তালুকদার মো. আবদুল খালেক বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও স্থানীয় এমপি মিজানুর রহমান ও কেসিসি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি এবং প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজারবৃন্দসহ উচ্চ পর্যায়ের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর ‘কিল-লে’র মাধ্যমে যে দু’টি এলপিসির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছিলেন, গতকাল লঞ্চিং করা বিএনএস নিশান তার দ্বিতীয়। গত ডিসেম্বরে নির্মিত প্রথম বড় মাপের যুদ্ধজাহাজ ‘বিএনএস দুর্গম’এর লঞ্চিং সম্পন্ন হয়। দেশে এ পর্যন্ত নির্মিত সমর নৌযানগুলোর মধ্যে এসব ‘লার্জ পেট্রোল ক্রাফট’ই সর্ববৃহৎ। এর আগে খুলনা শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীর জন্য আরো পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণ কাজ সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করে। জাপানের নৌ-জরিপ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাস এনকেকে’র তত্ত¡াবধানে চীনা সিএসওসির কারগরি সহযোগিতায় দেশে প্রথমবারের মতো এত বড় মাপের দু’টি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছে খুলনা শিপইয়ার্ড। প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ড সমর শিল্পে উপমহাদেশে এক বিশেষ স্থান করে নিতে যাচ্ছে।
খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর কে কামরুল হাসান (এল), এনজিপি, এনডিসি, পিএসসি-বিএন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রুগ্ন ও ধ্বংসপ্রায় খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন, তারই সুফল আজ এ যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন টাগ নির্মাণ। তিনি বলেন, এখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকবৃন্দ সততা ও আন্তরিকতার যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য গোটা জাতী আজ গর্বিত ও কৃতজ্ঞ। তিনি স্বাধিনতার মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য দু’টি সমর নৌযান লঞ্চিং অনুষ্ঠানে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কথাও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করনে। নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন বলেন, এসব আধুনিক সমর সরঞ্জাম প্রস্তুতের মাধ্যমে খুলনা শিপাইয়ার্ড নৌ-নির্মাণ শিল্পে এক বিশষ যোগ্যতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠানটি যাতে আরো বড় বাণিজ্যিক নৌযানসহ সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। নৌ-প্রধান বলেন, শিপইয়ার্ডের ভাটিতে রূপসা সেতু নির্মিত হওয়ায় মংলার অদূরে জয়মনি গোলে একটি ফরোয়ার্ড ইয়ার্ড এবং পায়রা বন্দরের কাছে তালতলীতে আরো একটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে। এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। কৌশলগত অংশীদারদের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা খুব শিঘ্রই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ও চট্টগ্রাম ড্রাইডককে নিয়ে একটি সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কমোডর কে কামরুল হাসান বলেন, আমরা পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাছে আরেকটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছি। এ লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি। শিঘ্রই চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হলে কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, প্রায় ৯৪ কোটি টাকার দায়ভারসহ বিপুল লোকসানের বোঝা নিয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ১৬ বছরে সব দেনা শোধ করে আমরা ২৭৭ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। যা সম্ভব হয়েছে এখানে কর্মরতদের সততা, অন্তরিকতা ও কাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে। তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ অমরা ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যাবো।
নবনির্মিত এসব যুদ্ধজাহাজে একটি করে ৭৬.২০ মিলিমিটার ও ৩০ মিলিমিটারের দু’টি করে কামান সংযোজন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও তিনটি ট্রিপল টিউব টর্পোডো ল্যাঞ্চার, একটি আকাশ ও ভ‚মিতে সার্চ রাডার, একটি ট্র্যাকিং রাডার ও একটি হাল মাউন্টেড সোনার সংযোজন করা হচ্ছে। এসব যুদ্ধজাহাজ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র থেকে আকাশে ও ভ‚মিতে শত্রæর লক্ষস্থলে আঘাত হানার সক্ষমতা থাকছে।
যুদ্ধজাহাজগুলোতে চীনে তৈরি সাত হাজার ৬৪০ অশ্বশক্তির দু’টি করে মূল ইঞ্জিনের পাশাপাশি অমেরিকার ‘কটার পিলার’ কোম্পানির ১৬৫ কিলোওয়াটের দু’টি করে জেনারেটর ইঞ্জিনও থাকছে। অত্যাধুনিক এসব সমর নৌযান ৬৭৮ মেট্রিক টন পানি অপসারণ করে ঘণ্টায় প্রায় ৪৭ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলতে সক্ষম। প্রতিটি যুদ্ধজাহাজে ৭০ জন করে নৌসেনা ও নাবিক থাকছে।
গতকাল লঞ্চিং করা সাবমেরিন টাগ ‘বিএনটি পশুরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ ফুট। এসব টাগ ৮৫২ টন পানি অপসারণ, ১২ নটিক্যাল মাইল গতিবেগে চলতে সক্ষম। আড়াই হাজার অশ্বশক্তির আমেরিকান কামিন্স ইঞ্জিনসমৃদ্ধ টাগটিতে ১৩৬ কিলোওয়াটের জেনারেটর ইঞ্জিনও সংযোজন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নৌ-জরিপ প্রতিষ্ঠান ব্যুরো অব ভ্যারিটাসের তত্ত¡াবধানে দেশে প্রথমবারের মতো এ দু’টি সাবমেরিন টাগ নির্মাণের গৌরব অর্জন করছে খুলনা শিপইয়ার্ড।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ