হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোহাম্মদ আবদুল গফুর : আগামী এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত ভারত সফরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বেশ বহুদিন ধরেই তাঁর ভারত সফরে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা বারবার পিছিয়ে যায়। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রীর এ ভারত সফরে দু’দেশের মধ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা বা সমঝোতা হবার কথা সেসব বিষয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে সমঝোতা না হবার কারণেই সফর এত বিলম্বিত হচ্ছে। তাই স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠবে, যেসব বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে এতদিন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়নি তা শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, না, কোন বিশেষ পক্ষের অতিরিক্ত চাপের ফলে এ বিষয়ে তাড়াহুড়া করতে হচ্ছে?
এ প্রশ্নের সঠিক জবাব পেতে হলে আমাদের দেশের অতীত ইতিহাসের দিকে সূ² পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে তাকানোর কোন বিকল্প নেই। ইতিহাসের পাঠক মাত্রই জানেন, ১৭৫৭ সালে পলাশী বিপর্যয়ের মাধ্যমে সাম্রজ্যবাদী ব্রিটেন আমাদের এ উপমহাদেশ দখল করে নেয়ার পর স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত একশ বছর ধরে যে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম চলে তাতে প্রধানত উপমহাদেশের মুসলমানরা অংশগ্রহণ করে। এসব সংগ্রামের মধ্যে মজনু সাহের নেতৃত্বে ফকীর আন্দোলন, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা খ্যাত সংগ্রাম, হাজী শরীয়তুল্লাহ-দুদু মিয়া প্রমুখের ফরায়েজী আন্দোলন, মহীশূরের হায়দার আলী টিপু সুলতানদের সংগ্রাম, সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর নেতৃত্বাধীন মুজাহিদ আন্দোলন এবং সর্বশেষ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ এ প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখের দাবিদার।
স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার এসব সশস্ত্র সংগ্রামের অধিকাংশই ব্যর্থ হয় প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের ইংরেজ-প্রীতি ও এসব সংগ্রামে অসহযোগিতার কারণে। সর্বশেষ সিপাহী বিদ্রোহও ব্যর্থ হওয়ার পর হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ‘সংবাদ ভাস্কর’-এ লিখলেন ‘পাঠক সকলে উদ্বাহু হইয়া পরম ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়া জয়ধ্বনি করিতে করিতে নৃত্য কর, হিন্দু প্রজাসকল দেবালয়ে সকলের পূজা দেও, আমাদের রাজ্যেশ্বর শত্রুজয়ী হইলেন।’
আর কবি ঈশ্বরগুপ্ত লিখলেন :
‘চিরকাল হয় যেন ব্রিটিশের জয়।
ব্রিটিশের রাজল²ী স্থির যেন রয়।।
এমন সুখের রাজ্য আর নাহি হয়।
শাস্ত্র মতে এই রাজ্য রামরাজ্য হয়।।’
ইতিহাসের পাঠক মাত্রই জানেন, সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পর মুসলমানদের উপর ইংরেজ সরকারের নির্যাতনের স্টিমরোলার নতুনভাবে নেমে আসে। সেই পরিস্থিতিতে মুসলমানদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে উত্তর ভারতের স্যার সৈয়দ আহমদ খান এবং বাংলার নবাব আবদুল লতিফ প্রমুখ তদানীন্তন মুসলিম নেতৃবৃন্দ সাময়িকভাবে হলেও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও উন্নত করে তোলার চেষ্টা করেন। এই সহযোগিতা যুগের অন্যতম নেতা নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে ১৯০৬ সালে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামে মুসলমানদের একটি স্বতন্ত্র নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, এর আগেই ব্রিটিশ পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দুদের উদ্যোগে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানকালে ১৯৪৭ সালে এই দুটি প্রতিষ্ঠানই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল। ইতিহাস-পাঠকদের স্মরণ থাকার কথা, কংগ্রেসের দাবি ছিল সমগ্র উপমহাদেশকে অবিভক্ত ভাবে স্বাধীন হতে হবে। অন্যদিকে মুসলিম লীগের দাবি ছিল উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই দাবি প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয় মুসলিম লীগের ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই মুসলিম লীগ তাঁর স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনা করে এবং সে আন্দোলন পরিচিতি লাভ করে পাকিস্তান আন্দোলন হিসাবে। ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচন এই দাবির ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হয়। উপমহাদেশের মুসলিম জনগণ এই দাবির প্রতি বিপুল সমর্থন জানায়।
১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের বিজয়ী প্রার্থীরা দিল্লীতে যে সম্মেলনে মিলিত হন তাতে লাহোর প্রস্তাবের আংশিক সংশোধন করে আপাতত একাধিকের বদলে একটি (পাকিস্তান) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গৃহীত হয়। তবে এই প্রস্তাবের উত্থাপক জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর প্রস্তাব উত্থাপনকালীন ভাষণে এক পর্যায়ে বলেন, অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন, পাকিস্তানই আমার শেষ দাবি কিনা। এ প্রশ্নের কোন জবাব আমি দেব না। তবে একথা আমি অবশ্যই বলব, এ মুহূর্তে পাকিস্তানই আমার প্রধান দাবি। অর্থাৎ তিনিও ভবিষ্যতে লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণ বাস্তবায়ন হিসাবে উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র (বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বাতিল করে দিলেন না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় সেদিনের মুসলিম লীগের দাবির ভিত্তিতেই অখন্ড ভারতের পরিবর্তে ১৯৪৭ সালে পার্টিশনের মাধ্যমে লাহোর প্রস্তাবের আংশিক বাস্তবায়ন হিসাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতবর্ষ অখন্ড হিসেবে স্বাধীন হলে মুসলমানদের যে কি দুর্দশা হতো সে ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে”ও তাঁর সুস্পষ্ট মতামত জানতে পাওয়া যায়।
উপরের আলোচনা থেকে এ বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ভারতের নেতৃবৃন্দ তাদের দেশের বিশালত্বের সুযোগে বাংলাদেশের মত ক্ষুদ্র প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সব সময়ই অবমূল্যায়নের চেষ্টা করে এসেছে। ১৯৭১ সালে লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিচালিত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের সাহায্যদানের নামে তৎকালীন মুজিবনগর সরকারকে তাদের জমিনে পেয়ে ভারত ঐ সরকারকে এমন এক সাত-দফা চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করে যার মধ্যে ছিল:
(এক) মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কম্যান্ডের, অধীনে থাকবে।
(দুই) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনী অবস্থান করবে। (কতদিনের জন্য তার কোন উল্লেখ ছিল না।)
(তিন) বাংলাদেশের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী থাকবে না।
(চার) বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে একটি বাহিনী গঠন করা হবে।
(পাঁচ) ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উন্মুক্ত সীমান্ত বাণিজ্য চলবে।
(ছয়) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি, এমন সকল সরকারী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হবে। প্রয়োজনে ভারতীয় কর্মকর্তাদের দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা হবে।
(সাত) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়নের সময় ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে।
এই অসম চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হবার পরই মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন।
[দ্রষ্টব্য ঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে’র এবং সিআইএর ভূমিকা : মাসুদুল হক, মে ১৯৯০]
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে আটক ছিলেন। ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সম্ভবত ধারণা ছিল, তিনি আর কখনো দেশে জীবিত ফিরে আসবেন না। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে জীবিত মুক্তি পান। মুক্তি পেয়ে তিনি প্রথম লন্ডন যান। লন্ডনে গিয়ে তিনি মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে ভারতের সাত দফা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি অবহিত হন এবং সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর করণীয় সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত ঠিক করে ফেলেন। লন্ডন থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের পথে দিল্লীতে স্বল্পকালীন যাত্রাবিরতিকালে প্রথম সুযোগেই তিনি তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সরাসরি প্রশ্ন করে বসেন, ম্যাডাম, আপনি কখন বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বাহিনী ফিরিয়ে আনবেন?
উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, আপনি যখন বলবেন, তখনই। ফলে বাংলাদেশ থকে সর্বানি¤œ সময়ের মধ্যেই ভারতীয় বাহিনী প্রত্যাহারের পথ সুগম হয়। বলা বাহুল্য সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে গগণচুম্বী জনপ্রিয়তা, তাতে ইদিরা গান্ধীর পক্ষে অন্য কোন জবাব দেয়া সম্ভব ছিল না।
বলা হয়ে থাকে, প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের মিত্র রাষ্ট্র। কারণ তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সাহায্য দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল একথা সত্য কিন্তু এ সাহায্যদানের ব্যাপারে তাদের জাতীয় স্বার্থ চেতনাও যে সক্রিয় ছিল তাও ভুলে যাবার নয়। বিশেষত আমাদের মুজিবনগর সরকারকে ভারতের জমিনে পেয়ে সেই সরকারকে যে সাত দফা চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করে, কোনভাবেই তা প্রকৃত বন্ধুসুলভ হওয়ার প্রমাণ বহন করে না। বরং একটি বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ভেঙ্গে দুই টুকরা করে দুর্বল করে ফেলার আত্মতৃপ্তিই তার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর বাস্তবে, এ সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর এক ভাষণে তাঁর এ মনোভাবের উৎকট প্রতিফলনও ঘটেছিল যেখানে তিনি বলেছিলেন ‘হাজার সালকা বদলা লিয়া’ অর্থাৎ হাজার বছরের প্রতিশোধ নিয়েছি।
প্রশ্ন ওঠে এ কিসের প্রতিশোধ? ইতিহাসের দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, হাজার বছর আগে মুসলমানরা বিজয়ীর বেশে উপমহাদেশে আসার পর এটাই ছিল এদেশের কোন অমুসলিম বাহিনীর কাছে একটি মুসলিম বাহিনীর আত্মসমর্পণে বাধ্য হওয়ার ঘটনা। এটাকেই তিনি ‘হাজার সালকা বদলা লিয়া’ বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।
এতে আরেকটি সত্য বড় উৎকটভাবে ধরা পড়ে। উপমহাদেশের কোন মুসলিম নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রই ভারতীয় নেতৃত্বের প্রকৃত বন্ধুত্ব লাভে ধন্য হতে পারেনি। পাকিস্তান তো আজন্ম ভারতের শত্রু হয়েই রয়েছে। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভারতের ভ‚মিকা রয়েছে বলে যে ভারতীয় নেতৃত্বের দাবী তারাও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারকে তাদের জমিনের মধ্যে পেয়ে ঐ সরকারকে যে সাত দফা চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করে তা বাংলাদেশের প্রতি তাদের প্রকৃত বন্ধুত্বের প্রমাণ বহন করে না। শুধু একাত্তরে নয়, এর পরও অসংখ্য ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতি তাদের বৈরী দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ আমরা পাই।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্যে অবস্থিত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের উপর এখনও ভারতীয় দখলদারী কায়েম রয়েছে। দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ থেকে ভাটির দেশ বাংলাদেশেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ এবং ফারাক্কা প্রশ্নে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তিতে গ্যারান্টি ক্লজ রাখতে রাজি না হওয়া, তিস্তা নদীর উজানে গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে ঐ নদীর প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার পাকা ব্যবস্থা করা, ফেনী নদীর উজানে অবৈধভাবে পানি প্রত্যাহার করা, ব্রহ্মপুত্রের উজানে ঐ একই ধরনের প্রবন্ধকতা সৃষ্টি প্রভৃতি নানা উপায়ে প্রাকৃতিক প্রবাহ থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক শ্রেণীর অধিবাসীদের সশস্ত্র বিদ্রোহে মদদ দিয়ে দেশের এক-দশমাংশ অঞ্চলে আমাদের অখন্ড সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তোলার পাশাপাশি সীমান্ত অঞ্চলে বিএসএফ এর মাধ্যমে নিরীহ বাংলাদেশী নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করে তোলার কাজ বন্ধুত্বের দাবীদার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিয়মিত কার্যক্রম হয়ে উঠেছে।
এতসবের পরও ভারতীয় নেতৃত্ব যদি মনে করেন তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করে তুলতে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে, তাতে আমাদের ঐ আশঙ্কাই প্রমাণিত হবে যে, ভারতের নেতৃবৃন্দ মূলত বাংলাদেশকে তাদের একটি আশ্রিত রাষ্ট্র হিসাব দেখতেই ভালবাসে। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারকে তাদের জমিনের মধ্যে পেয়ে তাদের যে অসম চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করে তার মধ্যেই তার প্রমাণ স্পষ্ট। বাংলাদেশ ভারতসহ সকল প্রতিবেশী দেশের সাথে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। তবে রক্ত দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতাকে আমরা কোন মতলবী বন্ধুর বন্ধুত্বের যুপকান্ঠে বলি দিতে রাজি নই একথাও সকলের কাছে সুস্পষ্ট করে উচ্চারণের সময় এসেছে।
সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা দ্ব্যর্থহীনকণ্ঠে জানিয়ে দিতে চাই ভারতের সাথে বাংলাদেশের যেসব সমস্যা রয়েছে যেমন তিস্তা, ফেনী নদীর পানি, গঙ্গার পানি সহ যেসব সমস্যা রয়েছে সেসবের সমাধানের আমরা তাঁর তৎপরতা কামনা করি। তথাকথিত প্রতিরক্ষা চুক্তির ফাঁদে পা দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, সেটুকুও যেন বিসর্জন না দেন এ বিষয়ে তাঁকে সাবধান থাকতে হবে। নইলে তাঁর মহান পিতার শ্রেষ্ঠ অর্জনকে বিপন্ন করার দায়ে তিনি ইতিহাসের কাছে দায়ী থাকবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।