Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ’লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ’১৪ সালের নির্বাচনে ‘র’-এর ভ‚মিকা ছিল মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গ্যাস রফতানিতে তিনি রাজি হননি বলে ২০০১ সালে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ও যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশে আওয়ামী লীগকে ভোটে হারিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে ‘দায়িত্ব জ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতেই বরং ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ‘র’ এর ভ‚মিকা ছিল।
এ সময় বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বিভিন্ন নদীর পানি চুক্তি ছাড়া দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিরোধী কোনো চুক্তি হলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
গতকাল সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি নির্ধারণে দলের এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা হতবাক হয়েছি। এত বড় একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন, এটা আমাদের চিন্তার মধ্যেই আসে না। তিনি বলেন, এই উক্তির মধ্য দিয়ে তিনি এটা প্রকাশ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এদেশে বিদেশিরা কাজ করছে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরকম সরকার পরিবর্তনে বা ইন্টারফেয়ারেন্সের মধ্য দিয়ে আছে। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে বিদেশিরা ভ‚মিকা রাখলে আওয়ামী লীগ বিদেশিদের কাছে কী মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বলে তা জানতে চান মির্জা ফখরুল।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকায় সফরের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এখানে আসলেন, সব জায়গায়  দৌড়ালেন এবং এরশাদ সাহেবের কাছেও গেলেন, তাকে নির্বাচনে নিয়ে গেলেন। আমরা কি এটাই ধারণা করব বা দেশের মানুষ এটাই মনে করবে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ‘র’ সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা পালন করেছে, ভারত সরকার বড় ভ‚মিকা পালন করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘দায়িত্বহীন’ দাবি করে ফখরুল বলেন, তার রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি অবলীলায় মিথ্যাচার করেন। এই মিথ্যাচারগুলো করার ফলে যেটা হয়, জাতি আরো বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে ‘হাওয়া ভবন’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, এমন সব কথাবার্তা, যাতে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই, মিথ্যাচার সম্পূর্ণভাবে। এখন তো পাবলিক পারসেপশন হচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেই নাকি বাইরের লোকজন বসে থাকে। কারা বসে থাকে আমরা জানি না, লোকজন বলে তাই।
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারত সফরের গিয়ে পানির কথা বলতে ভুলে গেছেন বলে শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয় দাবি করে তার সপক্ষে তখনকার বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহার তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
‘ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার আলাপের প্রত্যেকটা  যৌথ ইশতেহারে এসেছে। যখনই বেগম খালেদা জিয়া ভারতে গেছেন, তখন এই পানি সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। বর্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন, মেরিটিয়াম বাউন্ডারি নিয়ে কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হবে বলে ভারতীয় গণ্যমাধ্যমের খবরের বরাত দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ছাড়া দেশের স্বার্থবিরোধী অন্য কোনো চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না। তিনি বলেন, আশঙ্কাটা শুধু আমাদের না, আশঙ্কাটা ভারতের পত্র-পত্রিকায় বেশি বেরিয়ে এসেছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, ভারতের পত্র-পত্রিকায় বেশি এসেছে যে, ২৫ বছরের চুক্তি আবার একটা হতে যাচ্ছে, এই ধরনের একটা খবর। আমরা জানি না। আমরা সেই জন্য চাচ্ছি, ‘গভর্নমেন্ট শুড কাম আউট উইথ দ্য কনটেন্ট’। সেখানে কী আলোচনা হতে যাচ্ছেÑ এটা বলা উচিত।
দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে যায় অর্থাৎ তার স্বার্থের সঙ্গে সংঘাত ঘটে এই ধরনের কোনো চুক্তি বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব সময় আশাবাদী। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আশা করে আছি যে, আওয়ামী লীগ সরকার এসেছে, যেহেতু তাদের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে তিস্তার পানিটা অন্তত পাবো। আজ পর্যন্ত এক ফোঁটা পানি আমরা পাইনি। শুধু তাই না, ভারতের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে বলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশকে পানি দেয়া সম্ভব না। আমাদের ৫৪টা অভিন্ন নদীর পানি আমরা পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে অনেক সুবিধা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো সুবিধা পায়নি। আমাদের দিক থেকে যা দেয়ার দিয়ে দিয়েছে। ট্রানজিট দিয়ে দেয়া হয়েছে, নদী পথে নৌ ও স্থল পথে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে, বন্দরগুলো ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের বন্দর ব্যবহার করছে। অথচ আমরা কিছুই পাইনি।
সীমান্তে বাংলাদেশিদের বেআইনিভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে আলোচনা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রস্তাব নেয়া হয়েছে, এটা আইনে আসুক। আমরা গণহত্যার বিরুদ্ধে, আমরা কনডেম করেছি।
নৌ বাহিনীর জন্য চীন থেকে আনা দুটি সাবমেরিনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবমেরিন যদি ডুবে ঠিকমতো এবং আর যদি শত্রæ পক্ষের জাহাজকে মারতে পারে, তাহলে ওয়েলকাম জানাই।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়াই বাংলা ভাষায় প্রথম বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
সরকার উন্নয়নের ‘ভ্রান্ত পরিসংখ্যান’ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
গতকাল রোববার রাতে ঢাকার মালিবাগে ফ্লাইওভারের গার্ডার দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই প্রকল্পটি জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের পর দিন প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হচ্ছে, ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে এবং এই ঘটনাগুলো ঘটছে। ওই রাস্তায় যারা যাতায়াত করেন, তারা জানেন যে কী ভোগান্তিতে পড়তে হয়।   
রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।



 

Show all comments
  • রেজবুল হক ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩৩ এএম says : 0
    জনগণ নিস্ক্রিয় হয়ে গেলে যা হয় !
    Total Reply(0) Reply
  • সুলতান আহমেদ ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩৫ এএম says : 0
    আপনারা দেশের জনগণকে জাগ্রত করার চেষ্টা করুন । তাহলে আর কোন অপশক্তিই দেশের কিছু করতে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ১৪ মার্চ, ২০১৭, ৬:১১ পিএম says : 0
    প্রধানমন্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, র আর যুক্ত রাষ্ট্র আমাদের ক্ষমতা নিয়ন্রন করে। ২০০১ সালে হেরে যাওয়ার পর কি তিনি এটা উপলব্দি করছেন? জয়ের জন্য ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে কি আঃ লীগ এই পলিসি নিয়েছেন? ফখরুল সাহেব, তা হলে জনগণের কাছে যাওয়ার কি দরকার। আপনারা ও ঐ পথে হাঁটেন। প্রভুদের খুঁশি করতে পরলে হয়ত ক্ষমতা পেতে পারেন। তবে "না" আমি এটা বিশ্বাস করি না। মাননীয় প্রধানমন্রীর এটা কটূনীতি কথা। যেমন-- ১৪ এর নির্বাচনে আপনারা শেখ হাসিনার কূটনীতির কাছে হেরে, নির্বাচনে গেলেন না। আঃলীগ একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা ভোগ করছে। এবার ও আপনারা যদি শেখ হাসিনার কূটনীতির কথা না বুঝে বিদেশীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেন, জনগণের কাছে না যান, তা হলে পরাজয় নিশ্চয় মনে রাখিয়েন। তবে বিরুধ নয়, বিদেশীদের সাথে সৎভাব রেখে, সামনে আগান। জনগণের মনজয় করেন। তা হলে হয়তো ক্ষমতা পাবেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ