Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

পিনাকির লেখায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট এবং সেক্যুলারিস্টদের চরিত্র বিশ্লেষণ

উপ-সম্পাদকীয়

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোবায়েদুর রহমান : বাংলাদেশে কমিউনিস্টদের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। কলমের কালিও খরচ করতে হয় না, বকবক করে মুখ দিয়ে ফেনাও তুলতে হয় না। আমি-আপনি সকলেই এই কমিউনিস্টদের ক্যারেক্টার জানি। ওদের রাজনৈতিক ভেলকিবাজি দেখে অনেকে ওদেরকে  কমিউনিস্ট না বলে বলেন কম্যু। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়েছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভাগ হয়েছে। ওরা পাকিস্তানেও ছিল, বাংলাদেশেও আছে। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ মিলে ওদের বয়স ৬৯। এই ৬৯ বছরে ওদের সংখ্যা কি বেড়েছে? না কি কমেছে? সুনিশ্চিত উত্তর হলো, কমেছে। এ ছাড়া ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত হিসাব কিতাব করলে দেখা যায়, ওরা একের পর এক খন্ড-বিখন্ড হয়েছে। কত খন্ড হয়েছে সেটির হিসাব রাখা মুশকিল। এখন আবার ওদেরকে অনেকে কমিউনিস্টও বলে না, সোশ্যালিস্টও বলে না, এখন ভদ্র ভাষায় বলে ‘বাম’। ওরা কি লেফট রাইট করে নাকি যে, ওদেরকে বাম বলতে হবে? যাই হোক, পত্র-পত্রিকায় যেহেতু ওরা বাম তাই তত্ত¡ অনুযায়ী ওরা সেক্যুলার। এই বাম এবং সেক্যুলারদের সম্পর্কে আজ আমি নিজ থেকে কিছু বলব না। পিনাকি ভট্টাচার্য্য নামে পেশায় ডাক্তার একজন ব্লগার ফেসবুকে বামদেরকে নিয়মিত রাম ধোলাই দিয়ে যাচ্ছে। তার কিছু লেখা থেকেই আজকে আমার কলামে কিছুটা উদ্ধৃতি দেব।
তার আগে পিনাকির একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া দরকার। তার বর্তমান বয়স ৫০ বছর। ১৯ বছর বয়সে সে মস্কোপন্থি ছাত্র ইউনিয়নে জয়েন করে। তারপর থেকে ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি এসব দল করেছে। ৫০ ছোঁয়ার  আগে কম্যুদের ব্যাপারে তার মোহমুক্তি ঘটে। তার পরিবারে তার পিতা শ্যামলরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, চাচারা যথা- চিত্তরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, সত্যরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, রবিরঞ্জন ভট্টাচার্য্যসহ  সকলেই বামপন্থি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তার পিতা শ্যামলরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, আমার বন্ধু। আগেই বলেছি, পিনাকি ৩১ বছর ধরে বাম রাজনীতি করেছে। সেই পিনাকির মুখে বামদের সম্পর্কে অমৃত বাণী শুনুন। তার যেসব উদ্ধৃতি আমি দিচ্ছি সেগুলোতে কোনো দাঁড়ি, কমা বা সেমিকোলন বদল করা হয়নি।
পিনাকি লিখছে, ‘যারা মনে করতেছেন বামপন্থীরা আপনার সাথে আসবে, এবং এদের শক্তি কাজে লাগবে; তাদের একটা হিসাব দেই সারা বাংলাদেশের বাম শক্তির। হিসাব মিলায়ে দেখবেন। সারাদেশে ১০০০ বাম কর্মী আছে। আর তাদের কমবেশি ১০ হাজার নেতা আছে, তাদের ৫০০ সমর্থক আছে, ১ লাখের মতো শুভানুধ্যায়ী আছে যারা সবাই আওয়ামী লীগ করে, হাজার দুয়েক তাত্তি¡ক আছে। এর সাথে আছে ১ হাজার টন রাজনৈতিক দলিল। যা ছাপা হওয়ার পরে কেউ পড়ে দেখে না। এদের বুক ভরা আছে ঘৃণা আর মাথা ভরা আছে গোবর।
এখন বুঝে দেখেন, এদের ব্যাগেজ কাঁধে নিবেন কি না। আমি এদের পিছনে সময় নষ্ট করার ঘোর বিরোধী।”
এরপর পিনাকি লিখছে, ‘বামশক্তি বলে প্রধানত যারা মাঠ গরম করতেছেন এখনো তাঁদের নাম ধরে ধরে কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। ভারতের কমিউনিস্টরা জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ চাইতেন না। তাঁদের দলিল এটার সাক্ষী। জমিদারি রাখা আর জমিদারির উচ্ছেদ এটার মধ্যে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদের লড়াই যে তুল্যমুল্যে প্রগতিশীল এটা বুঝতে হলে তো কার্ল মার্ক্স হওয়ার দরকার নেই। ভারতের কমিউনিস্টরা যে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ চায়নি তার পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা আমি দিয়েছি। কমিউনিস্টদের ফ্যাকড়ার শেষ নাই। কমিউনিস্টদের জমিদারি সমর্থন মানে কী সেই নেতাদের “শ্রেণিগত দুর্বলতা” নয়? ভারত ভাগকে আমি দুর্ভাগ্য মনে করি না, বামেরা করে, সে কথাই উদাহরণে এনেছি। ভারত এবং বাংলা ভাগের প্রস্তাব কমিউনিস্টরা দিয়েছিল, একজন কমিউনিস্ট লিখেছে, “পার্টিভুক্ত কেউ কেউ সমাধান আকারে ভারত বিভাগের প্রস্তাব তুলে থাকলে তার দায় সকলের ঘাড়ে চাপানোর কিছু নেই।” পিনাকি লিখছে, ‘আমি সত্যিই হতাশ, যারা কমিউনিস্ট পার্টি করেছে তারা জানে, আপনি পার্টির অনুমতি ছাড়া বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেন না, নিজের বক্তৃতা আর প্রেসনোটের যেখানে অনুমোদন নিতে হয় সেখানে ভারত ভাগের মতো এত বড় একটা সেন্সেটিভ ইস্যুতে ম্যাপ এঁকে প্রস্তাব দেয়াটা পার্টির অনুমোদনের বাইরে হয়েছিল!!! এভাবে ব্যক্তির ওপরে দায় চাপিয়ে কীভাবে পার্টির দায়মুক্তি হতে পারে?
সামরিক অভ্যুত্থান করে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলের চেষ্টাকে দোষের বলে তারা মনে করেন না- এ কথাটা বলতে গিয়ে তারা একটা কঠিন সত্য স্বীকার করে ফেলেছেন। তারা স্বীকার করে নিয়েছেন এখানকার পার্টি যা করত সেটা সোভিয়েত পার্টির মতো নিয়েই করত, আর এই যোগাযোগ এত জীবন্ত যে সোভিয়েত পার্টির দলিলেও তার উল্লেখ থাকত এমনকি সেটা সামরিক ক্যু হলেও। আর সোভিয়েত পার্টির অনুমোদনে সামরিক ক্যু হলে সেটা পার্টি দলিলে থাকবে, যে আমরা ক্যু করতে পাকিস্তানের পার্টিকে নির্দেশ দিয়েছিলাম?!!!
কমিউনিস্ট পার্টির ক্যু করতে যাওয়া খারাপ না ভালো কাজ তা নিয়ে কিছু বলার বাইরেও আরেকটা পয়েন্ট আছে। সেটা হচ্ছে, পার্টি ক্যু এর ঘটনা লুকাতে চেয়েছিল, আর এই ফ্যাক্টস লুকাতে গিয়ে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিল। মিথ্যা করে বলেছিল যে, তারা কমিউনিস্ট, এ জন্যই নাকি তারা পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ছিল। এটুকু সৎ সাহস তো থাকা উচিত ছিল যে তারা বলবে যে, অ্যাডভেঞ্চার করতে গেছিলাম পারি নাই, ধরা খাইছি।
সোভিয়েত ইউনিয়ন যতদিন টিকে ছিল ততদিন এর সাথে বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর সম্পর্ক ছিল মতামত নির্দেশদাতার। অন্য ভাষায় বললে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তো আসলেই সার কথায় একটা রাষ্ট্রই ছিল আর সিপিবিসহ বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলা ছিল আসলে ওই রাষ্ট্রের বিদেশনীতির এজেন্ট। চীনা ধারার কমিউনিস্ট পার্টি ষাটের দশকে আলাদা ফ্যাকড়ায় হাজির হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশেরসহ অন্য সব দেশে স্থানীয় চীনা পার্টিগুলোও ছিল চীন-রাষ্ট্রের বিদেশনীতির এজেন্ট। এই “বিদেশনীতির এজেন্ট” কমিউনিস্ট পার্টি লইয়া আমাদের জনগণ কী করিবে!! কার ভোগে তাঁরা লাগিবে!!
বড়ই অবাক করার বিষয়, “ডোন্ট ডিস্টার্ব আইয়ুব খান” এই নীতির প্রসঙ্গে ফিরোজ বলেছেন (এই) “নীতির কোনো সূত্র কিংবা বরাত কখনো পাইনি”। আমার আর কী বলার থাকতে পারে এখানে?
কমিউনিস্টদের মতে, “বাকশালে সিপিবির অংশগ্রহণ আসলে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি, কমিউনিস্ট শক্তির তারা গৌণ অংশ ছিল তার আগে থেকেই।” কিসের উপরে প্রভাব ফেলেনি? মানে সিপিবির বাকশালে যাওয়া না যাওয়া কোন বিষয় ছিল না? এটার কোন প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাই?
তারপর পিনাকি লিখছে, “বাংলাদেশের বামেরা নিজেদের অতীত লুকাতে ওস্তাদ।  তাঁদের নিজের দলিল দেখালে আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। এদের অতীত এত কলঙ্কময়। ব্যতিক্রম নিশ্চয় আছে। কিন্তু বামশক্তি বলে প্রধাণত যারা মাঠ গরম করতেছেন এখনো তাঁদের নাম ধরে ধরে কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।
কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য জ্ঞান চক্রবর্তী ‘ঢাকা জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের অতীত যুগ’ বইয়ে লিখেছেন, “সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে পার্টি এখানকার আপোষবাদী বুর্জোয়া নেতৃত্বের উপরে নির্ভর করিয়াছে, শ্রমিকশ্রেণীকে স্বাধীনভাবে ক্ষমতা দখল করিতে আহ্বান জানায় নাই এবং পার্টি সংগঠন ও তাহার নেতৃত্বে একটি কঠোর শৃঙ্খলা সম্পন্ন বিপ্লবী পার্টিতে পরিণত না হইয়া একটি শৌখিন পেটিবুর্জোয়া পার্টিতে পরিণত হইয়াছে।” তাছাড়া তিনি নেতাদের সম্পর্কে বলেছেন, “চ‚ড়ান্ত হঠকারিতা ও বালসুলভ চাপল্যের পরিচালক।”
আসুন এইবার দেখি এই শৌখিন পেটি বুর্জোয়া পার্টির হঠকারিতা ও বালসুলভ চাপল্যের নেতারা কী কী সর্বনাশ করেছেন।
বৃটিশ আমলে যখন কৃষক প্রজা পার্টি এবং পরবর্তীতে মুসলিম লীগ জমিদারি উচ্ছেদের লড়াই করছে তখন এই কমিউনিস্টরা জমিদারি প্রথা বহাল রেখেই তেভাগার আন্দোলন করেছে। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ যে একটা প্রগতিশীল পদক্ষেপ এবং প্রত্যক্ষ শ্রেণী সংগ্রাম সেই হুঁশ তাঁদের হয়নি।
ভারত ভাগ হওয়ার জন্য এরা জিন্নারে দোষ দেয়। অথচ সেই কমিউনিস্ট পার্টির ১৯৪০-৪১ সালের মুখপত্রে “পিপলস ওয়ার” (জনযুদ্ধ) জানা যায়, কংগ্রেস ভারত বিভাগে সম্মতি দেওয়ার ঢের আগে, যখন রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয় নাই, তখন তারা ভারতবর্ষ যে বিভক্ত হওয়া উচিত সে বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করে। এবং ভারতবর্ষের কোন অংশ কোথায় যাবে, তাও এঁকে দেন। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। অতুল ঘোষ আরও লিখেছেন, “তাদের প্রস্তাবিত ম্যাপে শুধু ভারত ভাগ নয়, বাঙ্গালা ও পাঞ্জাবকে বিভক্তির ফর্মুলাও দিয়েছিল ওই কমিউনিস্টরাই।” (সূত্র : হায় কমিউনিস্ট পার্টি হায় বিপ্লব, আবির হাসান ডাকঘর প্রকাশনা পৃষ্ঠা : ১২)
এই কমিউনিস্টরা ১৯৫১ সালে মেজর জেনারেল আকবর আলী খানকে দিয়ে পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। যা রাওয়ালপিন্ডি কন্সপিরেসি নামে পরিচিত। এই সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে অস্থিরতা, ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে; যার ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্বে অনাস্থা তৈরি হয় এবং এই ঘটনা দীর্ঘমেয়াদে সামরিক শাসনের পথ খুলে দেয়। এই কারণেই পুরো পাকিস্তানের কালপর্বে সিপিবির পূর্বসূরি পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল।
এরা বলে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল শাসকেরা কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও বলে না তারা ক্যু করতে গেছিল।
তারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন বলে দাবি করে, অথচ মুক্তিযুদ্ধের এক মাস আগে মাত্র ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ তারা ৫ দফা দাবি পেশ করে। সেই দাবিনামার তৃতীয় দফায় তারা স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা করে লেখে।
“কিছু উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী তথাকথিত স্বাধীন পূর্ববাংলার নামে অবাঙালিবিরোধী জিগির তুলিয়া এবং মওলানা ভাসানী স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের আওয়াজ তুলিয়া জনগণের মনে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ বিরোধী মনোভাব গড়িয়া তুলিয়া অবস্থাকে আরও জটিল ও ঘোরালো করিয়া তুলিতেছে।”
(সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খন্ড) পৃষ্ঠা ৬৫৭)
মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানি শাসকদের সাথে তারা কোনো সংঘাতে যায়নি। মার্কিন-চীন সমঝোতা গড়ে তোলার জন্য তখন আইয়ুব খান দূতিয়ালীর ভূমিকা নিয়েছে। এ অবস্থায় পিকিং পন্থিরা বেশির ভাগই ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব আইয়ুব’ লাইন নিয়ে চলছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও কিছু বামদল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে। পাকিস্তান আমলে আমরা বিনিয়োগ বৈষম্যের কথা বলেছি। বলেছি এই পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বৃত্ত পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এরপরে স্বাধীন দেশে পুঁজির বিকাশের পথ এই বামেরাই রুদ্ধ করেছে। সমাজতন্ত্র নামে এক অস্পষ্ট ভুতুড়ে কথাবার্তা তুলেছে। সমাজতন্ত্র নামে এই ভুতুড়ে ধারণার আসল অর্থ যাই হোক বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজটাকেই অর্থনৈতিক এজেন্ডার বাইরে নিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের পুঁজির বিকাশ কীভাবে হবে সে প্রশ্নটাকে হারিয়ে ফেলেছে। এরপরে আসেন বাকশালে। বাকশাল মূলত ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা রিপাবলিকের ভিত্তিকে তছনছ করে দেয়। আরো স্পষ্ট করে বললে বাংলাদেশ নামের যেই রাষ্ট্র ১৯৭১ এ তৈরি হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রটাকেই কার্যত ধ্বংস করে দেয়। বাকশাল কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গঠিত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছিল?
সংক্ষুব্ধ কোনো নাগরিকের আদালতে যাবার যে মৌলিক অধিকার ৪৪ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত ছিল বাকশাল সংশোধনীতে মৌলিক অধিকারের খোদ সেই ৪৪ অনুচ্ছেদকেই বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। একই সাথে ১০২ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টকেও ৪৪ অনুচ্ছেদে দেয়া রিট করার অধিকার শোনার ও আমলে নেয়ার অধিকার দেয়া ছিল। অর্থাৎ সংক্ষুব্ধ কোনো নাগরিকের আবেদন শুনতে এবং প্রতিকার দিতে সুপ্রিম কোর্টের যে অধিকার ছিল এবং প্রতিকার হিসেবে নির্বাহী বিভাগকে আদেশ দেয়ার আদালতের ক্ষমতাকেও একই সঙ্গে বাতিল করা হয়।
সোজা কথায়, চতুর্থ সংশোধনী আইন রাষ্ট্রের নাগরিকের সংক্ষুব্ধ হওয়ার মৌলিক অধিকার রদ করেছিল এবং রাষ্ট্রকে লাগামহীন ক্ষমতা দিয়েছিল। এমন লাগামহীন ক্ষমতা পেলে তা আর রিপাবলিক থাকে না, রাষ্ট্রই থাকে না। জনগণও আর নাগরিক থাকে না। এটা হয়ে যায় এক মনার্কির রাজত্ব আর জনগণ হয়ে যায় প্রজা। বাকশাল বাংলাদেশের মানুষকে নাগরিক থেকে প্রজাতে রিডিউস করেছিল, আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে রিপাবলিক থেকে কার্যত রাজতন্ত্রে রিডিউস করেছিল। এই বাকশালের দায় কি বামদের নেই? সিপিবি তো দলের অস্তিত্ব বিলীন করে বাকশালে যোগ দিয়েছিল।
তামাশা হলো, “আজ বামেরা কারো কারো “মরাল কম্পাস” বলে বিবেচিত হয়। যারা ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে কখনো একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারল না, যাদের বাংলাদেশের বড় বড় রাজনৈতিক মোড় বদলের সময় গণআকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তারা যদি দেশের মরাল কম্পাস হয় তাহলে দেশের সামনে আরো দুর্গতি ছাড়া আর কী থাকবে? বাংলাদেশের বামদের সম্পর্কে বন্ধুদের মোহমুক্তি ঘটুক, এই কামনা করি।”
এক প্রাক্তন বাম পলিটিশিয়ানের মুখে বাম বিচ্যুতির এত উদাহরণের পর বামদের পদস্খলন সম্পর্কে আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে কি?
[email protected]



 

Show all comments
  • Salim ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১১:২৩ এএম says : 0
    ader bepare kotha bole kono lav ase ki ?
    Total Reply(1) Reply
    • Nannu chowhan ১৫ মার্চ, ২০১৭, ৪:৪২ পিএম says : 4
      Of course there is need to know the country man about them.they are always enty religion.They always interfare of our religious activity.
  • সৌরভ ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১১:২৪ এএম says : 0
    এরা আসলে দেশ ও জাতির কোন কাজে আসে কিনা সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • ফজলুল হক ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১১:২৬ এএম says : 0
    মোবায়েদুর রহমান সাহেবের কাছে অনুরোধ, দেশে হাজারো সমস্যা আছে, সেগুলো নিয়ে লিখেন। এসব লিখে সময় ও পত্রিকার পাতা নষ্ট করা ছাড়া আর কোন লাভ আছে কি ?
    Total Reply(0) Reply
  • Fahad ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১১:২৭ এএম says : 0
    It's a beautiful writing. You present the real character of those people.
    Total Reply(0) Reply
  • আমিনুল ইসলাম ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১১:২৮ এএম says : 0
    লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। লেখককে অসংখ্য মোবারকবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ১৫ মার্চ, ২০১৭, ৩:০১ পিএম says : 0
    Very well,sub editorial thanks.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ