Inqilab Logo

বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চলনবিলাঞ্চলের ১৬ নদী ও ৩২ খালের অস্তিত্ব বিলীনের পথে

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আফতাব হোসেন, চাটমোহর (পাবনা) থেকে : পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিলের ৪৮ নদী-খাল প্রায় মৃত। অপরিকল্পিত স্লইস গেট ও ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে শুকিয়ে গেছে পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিলের খাল, নদী। পাবনার চাটমোহর উপজেলার কাছিকাটা এলাকার আত্রাই নদীর উজানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার, নদী অভিমুখে অপরিকল্পিত স্লইসইসগেট নির্মাণ, বাঁধ দেওয়া, কালভার্ট নির্মাণ, ড্রেজিং না করা এবং প্রভাবশালীদের দখলের কারণে চলনবিলাঞ্চলের ১৬টি নদী ও ৩২টি খালের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এক সময়ে বছরজুড়ে পানিতে থৈ থৈ করত, মাঝি মাল্লাদের ভাটিয়ালী সুরে এলাকা মুগ্ধ হয়ে যেত। সওদাগারেরা ব্যবসা-বাণিজ্যে সফলতা হয়ে ফিরতো। কিন্তু বর্তমানে বর্ষা শেষ হতে না হতেই পানি থাকে না। নদীগুলো মরে যাওয়ায় এলাকার ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। যার ফলে সেচকার্যে কৃষকদের মারাত্মক সেচ সংকটে পড়তে হয়। চলনবিলাঞ্চলের মধ্যে বড়াল, গুমানী, আত্রাই, গুড় নদী, করতোয়া, তুলশি, চেচুয়া, ভাদাই, চিকনাই, বানগঙ্গা ও খুবজীপুর তেলকুপি নদী রয়েছে। ৩২টি খালের মধ্যে নবীর হাজরা জোলা, হক সাহেবের খাল, নিমাইচরা বেশানী খাল, বেশানী গুমানী খাল, উলিপুর, সাঙ্গুয়া খাল, দোবিলা, কিশোরকলি খাল, বেহুলার খাড়া, বাঁকাই খাড়া, গোহালানদী, গাড়াবাড়ি দারুখালী খাল, বিলসূর‌্য নদী, কুমারডাঙ্গা নদী, জানি গাছার জোলা, সাত্তার সাহেবের খাল, কিনু সরকারের ধর, পানা উল্লাহর খাল উল্লেখযোগ্য। নদীগুলোর গড় প্রস্থ ছিল ১ হাজার ৫শ ফুট থেকে ২ হাজার ফুট। জানা যায়, প্রতি বছর নদী দিয়ে এ বিলে ৬৩ লাখ ঘনমিটার পলিবাহিত হয়ে থাকে। তার মধ্যে ১৫ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারিত হয়। দীর্ঘ দিন ধরে ড্রেজিং না করায় নদ-নদী, খালগুলোর প্রস্থ ও গভীরতা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে চলনবিলের বিভিন্ন স্থানের গভীরতা কমবেশি ১ দশমিক ৫৩ মিটার থেকে ১ দশমিক ৮৩ মিটার। চলনবিল মৎস্য প্রকল্পের সমীক্ষা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালে মোট ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬১ জন জেলে এসব নদ-নদী, খাল থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কমতে কমতে ২০০৬ সালে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালযের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. রেদওয়ানুর রহমানের প্রবন্ধে জানা গেছে ২০-২৫ বছর আগেও চলনবিলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোতে সারা বছর ধরেই ৬-৭ ফুট পানি থাকত, ফলে বছরজুড়েই নৌচলাচল রত। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তন, ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব, বিরের মধ্য যত্রতত্র রাস্তা, ¯øুইসগেট, ব্রিজ-কালভার্ট, নদী দখল করে বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরির ফলে নদীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। অন্য সূত্রে জানা যায় পদ্মা, যমুনা ও বৃহত্তম বিল চলনবিলের প্রধান সংযোগকারী নদী বড়াল যেটি রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মার শাখা হিসাবে উৎপন্ন হয়ে ২২০ কিলোমিটার পথ বেরিয়ে চলনবিলের ভিতর দিয়ে মুসা খা, নন্দকুজা, চিকনাইসহ বেশ কয়েকটি নদীর জন্ম দিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির হুরাসাগর হয়ে যমুনায় মিশেছে। কিন্তু ১৯৮০ সালে উৎসমুখে ও ৪৬ কিলোমিটার ভাটিতে বড়াইগ্রামের আটঘরিয়ায় মাত্র এক গেটের একটি ¯øুইসগেট নির্মাণ, পাবনার চাটমোহরে ৩টি ক্রসবাঁধ ও ¯øুইসগেট নির্মাণের কারণে প্রমত্তা বড়াল বর্তমানে মড়াখালে পরিণত হয়েছে। বড়ালসহ চলনবিলের নদী রক্ষায় এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। নদী বিষয়ক টাস্কফোর্স ও ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় বড়াল নদীর সব বাধা কাগজ-কলমে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি। নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আযাদ জানান, দখল-দূষণ, ভরাট হয়ে গিয়ে পানি না থাকায় বর্ষা শেষ হতে না হতেই চলনবিলের প্রধান নদী বড়াল, গুমানী, আত্রাই, নন্দকুঁজাসহ ১৬টি নদীতে নৌচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নদী নির্ভর মানুষের জীবিকা অর্জনের পথও বন্ধ হয়ে যায়। নদী তীরবর্তী এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসে। অপরদিকে পরিবেশের উপর মারাত্মক বিপর্যয়ের প্রভাব পড়তে থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ