Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তরাঞ্চলে সবজি থেকে আয় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : শাকসবজি বিক্রি করে দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া, সার ও কীটনাশকের সহজ লভ্যতা এবার সিরাজগঞ্জে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। সবজি বাজারে আসার আগেই এ অঞ্চলে চলতি খরিপ-১, খরিপ-২ এবং রবি মৌসুমে দেড় লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়েছে। এ পরিমাণ জমি থেকে উৎপাদিত শাকসবজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার ওপর। তথ্য কৃষি বিভাগের।
অনুকূল আবহাওয়া, সার-কীটনাশকের সহজ লভ্যতা এবং ভালো দামের কারণে উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার ক্ষুদ্র, বর্গা ও প্রান্তিক চাষী শাকসবজির চাষ করে এ বছর প্রচুর লাভবান হয়েছেন। ফলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে, অদূর ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা। সুতরাং এদিকে সরকারের দৃষ্টি রাখা জরুরি বলে মতবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষিবিদগণ।
এ অঞ্চলের চাষীরা জানায়, এক সময় তাদের সংসার চলতো ধার-দেনা করে। কিন্তু সবজি চাষের ফলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। তারা এখন সকলেই স্বাবলম্বী। তারা জানান, এখন তাদের শাকসবজি বিক্রির জন্য হাট-বাজারে যেতে হয় না। ব্যাপারীরা ক্ষেত থেকে শাকসবজি ক্রয় করে নিয়ে যান। এসব ব্যাপারীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করে। এছাড়াও খরিপ-১ মৌসুমে ঢেড়স, পটল, চিচিংগা, পুঁইশাক, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পানি-কুমড়া, চাল-কুমড়া ইত্যাদি রবি মৌসুমে মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাকসহ অন্যান্য সবজি আবাদ করে প্রায় একই ধরনের লাভ পাচ্ছেন উত্তরে ১৬ জেলার কৃষক। ফলে অনেকেই এখন শাকসবজির আবাদের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। এখন উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোর পাশে দাঁড়ালে দেখা যায়, বিভিন্ন হাট-বাজারের পাশে ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে সবজি ক্রয়ের জন্য। রাত থেকে ভোর হতে হতে এসব ট্রাক সবজি নিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে চলে যাচ্ছে। বেশ ক’বছর থেকে এ অঞ্চলে সবজি চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বেশি করে সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রবি ও খরিপ মৌসুমে দেড় লাখ হেক্টর জমি থেকে ২৮ লাখ ৫০০ মেট্রিক টন করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁইশাক, মুলা, টমেটো, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজি কৃষকদের ঘরে উঠেছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে ১৯ মেট্রিক টন। এ পরিমাণ উৎপাদিত পণ্যের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৪ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার উপরে। প্রতি কেজি শাকসবজির সর্বনিম্ন দর ১২ টাকা হলে প্রতি মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে দু’মৌসুমে সাড়ে ২৮ লাখ মেট্রিক টন শাকসবজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩শ’ ৪০ কোটি টাকা। শাকসবজি বিক্রি করে এ অঞ্চলে দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের উৎপাদিত শাকসবজি এ অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের অভাব মোচনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ খন্দকার মেজবাহ উল ইসলাম জানান, অনুকূল আবহাওয়া, সার-কীটনাশকের সহজ লভ্যতা ও কৃষি বিভাগের সুষ্ঠু মনিটরিং-এর ফলে বিগত কয়েক বছরে তুলনামূলকভাবে এ অঞ্চলে শাকসবজির আবাদ ভালো হচ্ছে। ভাল দামের কারণে কৃষক প্রচুর লাভ পাচ্ছেন। এর ফলে শাকসবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকেরা।
সরেজমিন জানা গেছে, সদর উপজেলার করলা চাষী ইয়াকুব আলী জানান, তিনি ১ একর জমিতে করলা আবাদ করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেছেন দেড় লাখ টাকা। একই উপজেলার করলা চাষী আলী মিয়া ৫০ শতক জমিতে করলা আবাদ করে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তারা বলেন, সময় মত ন্যায্যমূল্যে সার-কীটনাশক পেয়েছি। আবহাওয়া ভাল ছিল, দামও পেয়েছি ভাল। আবার গরমের সবজির জন্য জমি প্রস্তুত করছি।
সিরাজগঞ্জ এলাকার আকবর আলী, আব্দুস সাত্তার, আনিছুর রহমান, এরশাদ আলী, সদরের আমিনুল ইসলাম, ফজলুর রহমান, আব্দুল খালেক, আব্দুস ছাত্তার, আব্দুল খালেক, ইউসুফ আলী, নজরুল হক, আব্দুল হামিদ, আবু তাহের, ওসান আলী, আব্দুল মতিন, আব্দুল হাকিম, ভ্যানচালক মেনাজুল, মোতালেব, মোক্তার হোসেন, আমিনুল লোকমান আলী ও জাকারিয়াসহ উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার ক্ষুদ্র চাষি সবজি আবাদ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টাকা

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ