Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুলবাড়িয়ায় পরিত্যক্ত স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে সরকারি জমি দখলের অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা : ফুলবাড়িয়া উপজেলার পৌর সদরের অন্তর সিনেমা হল সংলগ্ন সরকারি জমির ওপর উপজেলা কৃষি অফিসের দীর্ঘ দিনের পরিত্যক্ত স্থাপনা দখলে নিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ঋষি পরিবার। উপজেলা কৃষি অফিসকে সরকার কর্তৃক হস্তান্তরিত ফুলবাড়িযা মৌজার ২৫১৮নং দাগের ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে পশ্চিমাংশের ১৩ শতাংশ জমির ওপর পশ্চিমাংশের ভূমিতে প্ল্যান্ট প্রটেকশন স্টোর কাম ওয়ার্কশপ স্থাপনা স্থানীয় জয় মহন ঋষিগং দখল করে বেআইনীভাবে স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছে কৃষি বিভাগ। গত মঙ্গলবার সকালে সরকারি স্থাপনা ভাঙার খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড.নাসরিন আক্তার বানুসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে দখলদারদের সাথে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া থানায় এস আই নবী নূর বলেন, স্থাপনা ভাঙাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ভানু গং এবং কৃষি বিভাগের মধ্যে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তবে স্থানীয়রা জানায়, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ফিরে আসার পরপরই পুনরায় স্থানীয় প্রভাবশালী জয় মহন ঋষি গংরা কৃষি বিভাগের সরকারি স্থাপনা দখলকারীদের শতাধিক লোকজন দিনরাত ভাঙতে শুরু করে। এদিকে গত ৮ মার্চ কৃষি সম্প্রসারণ অফিস খামার বাড়ির উপপরিচালক মো. আলতাবুর রহমানের সাথে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, কৃষি অফিসের ৩৩ শতাংশ সরকারি জমি দখল নিতে অবৈধভাবে সরকারি স্থাপনা ভেঙে ইট রড লুটপাট করে। আমি দোষি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার জন্য কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দোষ দিয়েছি। এ নিয়ে ফুলবাড়িয়া থানায় একটি অভিযোগ দিলে পুলিশ তা আমলে নেয়নি বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসার। এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া কৃষি অফিসার ড.নাসরিন আক্তার বানু জানান, স্যারকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরেই আমরা থানায় অভিযোগ দিলে সেই অভিযোগপত্রটি ফুলবাড়িয়া থানা পুলিশ আমলে না নিয়ে আমাদের আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। ফুলবাড়িয়া কৃষি অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, উপজেলার কৃষি বিভাগের জন্য ফুলবাড়িয়া মৌজার মন মহন ঋষির কাছ থেকে ১৫/৭৩-৭৪ নং এল এ কেইস বলে ৩৩ শতাংশ জমি উপযুক্ত মূল্যে ডেপুটি কমিশনার ময়মনসিংহ কর্তৃক ৪ নভেম্বর ১৯৭৪ সালে উপজেলা কৃষি বিভাগ প্ল্যান্ট প্রটেকশন স্টোর কাম ওয়ার্কশপ স্থাপনা নির্মাণে কৃষি বিভাগের নামে একুয়ার করা হয় (ঢাকা গেজেট ১৪ জুন ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত)। জমির জে এল নং ৪৭, আর ও আর খতিয়ান নং- ৬৬২, দাগ নং-২৫১৮-এর মোট জমি ৬৩ শতাংশের কাতে ৩৩ শতাংশ জমি রয়েছে। সেই জমির ৩৩ শতাংশ ভূমি দাতা মৃত মন মহন ঋষির ৫ ওয়ারিশের মধ্যে তার দুই পুত্র জয়মহন ঋষি ও ভানু মহন ঋষি বাদি হিসেবে ১৪ আগস্ট ২০০২ সালে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৯/০২)। মামলার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ময়মনসিংহ, উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি, উপজেলা নিবার্হী অফিসার ফুলবাড়িয়া, ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা ময়মনসিংহসহ ফুলবাড়িয়া কৃষি অফিসার বিজ্ঞ আদালতে ৪ নভেম্বর ২০০২ সালে মোকাদ্দমা দায়ের করেন। বাদী কর্তৃক অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বাতিলের জন্য আদালতে আবেদন করেন। ১ ডিসেম্বর ০২ সালে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে স্বাক্ষরিত পত্রে জানা যায়, ২৪ নভেম্বর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদনটি বাতিল এবং মোকাদ্দমাটি খারিজ করা হয়েছে। ভানু ঋষি বলেন, কৃষি অফিসের দখলকৃত জমি আদালত আমাদেরকে রায় দিয়েছে। আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতেই ভবনটি ভাঙা হয়েছে। আদালত জমির রায় দিয়েছেন কিন্তু আপনাকে সরকারি স্থাপনা (ভবন) ভাঙার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে, তিনি কোন উত্তর দেননি। আদলতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করতে ভানু ঋষিগংরা ১৩ শতাংশ জমির ওপর একতলা ভবন ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। সরকারি স্থাপনা ভেঙে লুটপাটের ঘটনায় ভানু ঋষি, জয় মহন ঋষিসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ