Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবি’র মাস্টার’দা সূর্য সেন হল

| প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. সাইফুল ইসলাম বাবুল : গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার’দা সূর্য সেন হলের সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান। ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সভাপতিত্ব করেন সূর্য সেন হল সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সভাপতি ও হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সূর্য সেন হল অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুম মুনীর। সঞ্চলানা করেন হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। ভিসি বলেন, প্রাক্তনদের স্মৃতি রোমন্থনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবেন। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এই ধরনের উদ্যোগ আপনাদের নেটওয়ার্কিং আরও স¤প্রসারিত করবে। শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় আপনাদের অবদান কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ থাকবে। অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা হৃদয়ের টানে ফিরে এসেছেন। আমরা আপনাদের সাড়া পেয়ে অভিভূত। আশা করছি হলের উন্নয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে আপনারা এগিয়ে আসবেন।
সূর্যসেন হল ও শিক্ষার্থীদের কথা
তিন দিকে অট্রালিকা এক দিকে খোলা। সামনে সবুজের মাঠ। বন্ধুদের সাথে বিকেলে আড্ডা ও গ্রæপ স্টাডি। ক্যাফেটেরিয়ার খাবার আর বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতা নিয়ে হলে বসবাস। যেখানে মা-বাবার শাসন নেই কিন্তু নিজেকে সকলের সাথে মানিয়ে নিয়ে এক সাথে থাকতে হয়। সময়ের মূল্য দেয়ার শিক্ষাটায় হল থেকেই পেয়ে থাকি আমরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলে অবস্থানকারী আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ কায়সার এই ভাবে কথাগুলো বলছিলেন। বাংলা বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র আরাফাত তুর্জ্য হল সর্ম্পকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হল জীবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হলে থাকলে বিভিন্ন জায়গায় পড়ার সুযোগ থাকে। আমরা হল লাইব্রেরী, সেমিনার রুম ও সেন্টাল লাইব্রেরীতে পড়তে পারি। যা হলের বাহিরে থাকলে সুযোগ থাকলেও পড়া হয় না। হলে থাকলে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের মধ্যে অন্যতম হলো সূর্যসেন হল। এটি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন তার নাম ছিলো ”জিন্নাহ” হল। কিন্তু স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তার নাম পরিবর্তন করা হয়। তখন ‘সূর্যসেন’ নাম রাখা হয়।
যে কারণে এই নাম রাখা হয়- ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন সূর্যসেন। তাঁর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি করে আবাসিক হলের সূর্যসেন নামকরণ করা হয়। এছাড়াও কলকাতা সূর্যসেনে স্মরণে বাশঁদ্রোণী মেট্রো স্টেশনটির নামকরণ করছে “মাস্টারদা সূর্য সেন মেট্রো ষ্টেশন”। সূর্যসেন হলের মধ্যে ২টিন ক্যান্টিন। কিন্তু ক্যান্টিনের খাবারের মান নিয়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রশ্ন। খাবারের দাম বেশি রাখা হয়। ক্যান্টিনগুলো অপরিস্কার থাকে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদের সাথে বাজে ব্যবহার করে থাকেন ক্যান্টিনের মালিক পক্ষ। সূর্যসেন হল ক্যান্টিনে যেসব খাবার পাওয়া যায় তা অন্যান্য ক্যান্টিনের দামের তুলনা খুব বেশি। এখানে দুপুর ও রাতে যেসব খাবার পাওয়া যায় তা হলো-একটি ডিম, ডাল আর ভাত-২৫ টাকা, পাঙ্গাস মাছ, ডাল, ভাত- ২৮ টাকা, রুই মাছ, ভাত, ডাল- ৩৫ টাকা, মুরগী (নরমাল), ভাত, ডাল- ৩০ টাকা, মুরগী (স্পেশাল), ভাত, ডাল- ৪৫ টাকা, গরু, ভাত ডাল- ৫০টাকা। সকালে নাস্তাতে যা পাওয়া যায় এবং দাম। ৩টা পরটা, সবজি বা হালুয়া-১৩ টাকা, ভাত, ডাল, আলু ভর্তা- ১৫টাকা, খিচুরী, ডিম-২৫ টাকা।
বাংলা বিভাগের ২ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যান্টিনে খাওয়ার ব্যবস্থা ভালো না। সূর্যসেন হলের ক্যান্টিন হলেও দেখা যায় দুপুরের খাবার সময় বহিরাগতরা এসে অনেক ভিড় জমায়। যেসব খাবার দেয়া হয় তার গুনাগত মান ভালো নেই। কিন্তু বড় ভাইদের পরিচালিত ডাইনিং চালু হওয়া এখন আর কোন সমস্যা নেই। সূর্যসেন হলের মধ্যে রেসিডেন্ট ৫শত ৭৭টি আছে তাছাড়া আছে ননরেসিডেন্ট রুম। প্রতিটি রেসিডেন্ট রুমে ৪ জন শিক্ষার্থী থাকেন। আর প্রতি ননরেসিডেন্ট বা গনরুমে ১৮ থেকে ২০জন শিক্ষার্থী থাকেন। আসনের চেয়ে দ্বিগুন মানুষ অবস্থান করে। যার ফলে হলের মধ্যে লেখাপড়ার কোন সুযোগ নেই। পড়ার কক্ষটি আকারে ছোট হওয়া শিক্ষার্থীরা পেপার পড়ার রুমে গিয়ে পড়তে হয়। তাছাড়া এখনো যারা অবস্থান করছে তাদের মধ্যে অর্নাস বা মাষ্টাস পাশ করেছে। তারা হলে থেকেই এখন চাকুরী করেন। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে এখনো তারা অবস্থান করছেন। ঢাবি’র শিক্ষার্থী ছাড়াও বহিরাগত শিক্ষার্থীরা এই হলে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ার মাধ্যমে হলে সিট পেয়েছি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে থাকি। কিন্তু যারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের না তারা শুধু হলের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা সিনিয়র বড় ভাইয়ের আত্মীয় বা ছোট ভাই হয়। সিনিয়র ভাইয়েরা থাকার কারনে ১ম ও ২য় বর্ষের ছাত্ররা হল পেতে অনেক কষ্ট হয়। হল পেলেও তারা গনরুমে উঠতে হয়।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন,গন রুমে আমরা যারা থাকি। তাদের অনেক সমস্যা পোহাতে হয়। দেখা যায় ক্লাস না করেও বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে হয়। কিন্তু সকল শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ ভালো ভাবে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র্সূযসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, হলের উন্নয়ন কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ