পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে : একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফেনীর ছাগলনাইয়ার নিজকুঞ্জরা শিল্পনগরীর বিভিন্ন শিল্পকারখানা। গত আড়াই যুগে নিজকুঞ্জরা শিল্পনগরীর প্রায় ১৫টি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যার কারণে ২৯ বছরেও পূর্ণতা পায়নি নিজকুঞ্জরা শিল্পনগরী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সমিতি বাজার এলাকায় গড়ে উঠায় এ শিল্পনগরী নিয়ে সরকারের অবহেলার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তরা। লোকসানের মুখে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিল্পকারখানা। নিজকুঞ্জরা বিসিক শিল্পনগরী এলাকা পরিদর্শন করে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কঘেঁষা ছাগলনাইয়ার নিজকুঞ্জরা গ্রামে ১৭ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় বিসিক শিল্পনগরী। এ জায়গার ওপর তৈরি করা হয় ৪৪টি শিল্প ইউনিট। কিন্তু গ্যাসের অভাবে এখন পর্যন্ত ১৮টি শিল্প ইউনিটে কোনো কারখানা চালু করা যায়নি। গ্যাস সংযোগ হবে হচ্ছে বলে বছরের পর বছর ঘুরেও তা হয়ে ওঠেনি।
এতে লাখ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তরা। উপায় না দেখে অনেকে ব্যবসার ধরন পাল্টানোরও উদ্যোগ নিচ্ছেন। বিসিক অফিস জানায়, বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ব্যাংক লোনসহ নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় কার্ডিনাল সল্ট লিঃ, এবি ফুড লিঃ, চায়না বাংলা ইন্ডাস্ট্রি লিঃ, রাজমাতা নেইল ইন্ডাস্ট্রি লিঃ, পিবি ফুডস্ লিঃ, ফেনী বৌনস লিঃ, সৈকত ফুডস লিঃ, মাওলা আয়োডাইস, বেলা ফুডস্ লিঃ, বাংলাদেশ সোপসসহ প্রায় ১৫টি ইন্ডাস্ট্রি। বর্তমানে যে কয়টি শিল্প কারখানা চালু আছে সেগুলোও চলছে জোড়াতালি দিয়ে। উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা কমে যাওয়ার কারণে দিন দিন বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। প্রতিষ্ঠার পর নানা অনিয়ম, বিশৃঙ্খলাসহ নানা কারণে এসব কারখানায় সমস্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে লাভজনক এসব প্রতিষ্ঠান পরিণত হয় লোকসানে। একের পর এক গড়ে ওঠা শিল্প কারখানা বন্ধ হতে থাকে। এসব শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেয়ার পর বছরের পর বছর ধরে অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকা লাখ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। নিজকুঞ্জরা শিল্পনগরীর বিভিন্ন কলকারখানা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু শ্রমিক-কর্মচারীও বেকার হয়ে পড়েন। বর্তমানে যে কয়টি শিল্পকারখানা চালু রয়েছে সেগুলোও নানা সমস্যার বেড়াজালে হুমকির মুখে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, দিনে-রাতে থাকে লোডশেডিং। কারখানায় পর্যাপ্ত উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিসিকের নিজস্ব কোনো লাইটিং নেই। পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থাও নেই। ফোর লেনের কারণে বিসিকের দু’টি সড়কের মধ্যে একটি বন্ধ হয়ে গেছে, অপরটির অবস্থাও ভালো নয়। এ অ্যাপ্রোচ সড়কটি ফোর লেন কর্তৃপক্ষের মেরামতের কথা থাকলেও তারা তা করেন নি। ফলে বিসিকের ভেতর ভারী কোনো যানবাহন ঢুকতে পারেনা। গ্যাস না থাকায় জ্বালানি খরচেও ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফেনীর ছাগলনাইয়া ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নোম্যান্স ল্যান্ডের মধ্যে পড়ায় এক সময়ের শিল্প এলাকায় প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি ছিল না। বিগত দুইবছর পূর্বে ফেনীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির খন্দকার সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যার কথা শোনেন এর থেকে প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিসিকের পাশেই ধুমঘাট বালু মহলে প্রায় মাদকসেবী ও সন্ত্রাসীদের আড্ডা জমে। ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে। বিসিকের চারপাশে সীমানা প্রাচীর না থাকায়; প্রায়ই চুরি-ছিনতাই ও চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। এবং সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আনাগোনাও বেড়ে যায়। শিল্প এলাকায় একটি পাম্প হাউজ থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত সেটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ওই এলাকায় ২ হাজার ফুট নিচে গেলেও পানি পাওয়া যায় না। আয়রনের সমস্যাও প্রকট। শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল বারী মহসীন বলেন, শুধু বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কারণে শিল্প কারখানাগুলো চালু করতে পারছেন না মালিকরা। বিদ্যুত ও গ্যাসের জন্য যদি ৪০-৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয় তাহলে কিভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তরা শিল্প গড়ে তুলবেন। আমরা যারা বিসিকে প্রথম থেকে আছি; তারা না পারছি থাকতে, না পারছি চলে যেতে। ৪৪টি কারখানার মাত্র ৭টিতে গ্যাসসংযোগ দেয়া হয়েছে। বাকি কারখানাগুলোতে আদৌ গ্যাসসংযোগ দেবে কিনা বলতে পারছি না। আমরা বিষয়টি ফেনী জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি হুমায়ুন জানান, প্রতি বছর সরকার নির্ধারিত চার্জ পরিশোধ করার পরও বিসিক কর্তৃপক্ষের তাদের দিকে কেনো নজর নেই। নিজকুঞ্জরা বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, রাস্তাঘাটের কিছু সমস্যা রয়েছে, এক সময় লোডশেডিং ছিল, এখনো কিছু কিছু আছে। তবে আগের মতো নয়। বিসিক শিল্পনগরীর জন্য বিদ্যুতের একটি আলাদা লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। একের পর এক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে সেক্টরে শিল্পটি পরিচালনা করছে সেটি লাভজনক নয়। পরিচালনা অথবা যন্ত্রপাতি ত্রæটির কারণে অলাভজনক সে খাত পরিবর্তন করে অন্যখাতে ইন্ডাস্ট্রি প্রস্তুত করার সময়টিতে শিল্পটি বন্ধ থাকে। নতুন করে চালু করার মতো যাদের সামর্থ নেই তারা এই শিল্পটির ইজারা শর্ত হস্তান্তর তথা বিক্রয় করে দেয়। নতুন উদ্যোক্তার তার নিজের মতো করে চালু করতে অনেক সময় লেগে য়ায়। কিছু ইন্ডাস্ট্রি ব্যাংক ঋণ না পাওয়ার কারণে চালু করতে পারে না। অংশীদারদের মধ্যে কলহের কারণসহ নানা কারণে ইন্ডাস্ট্রিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। মালিকদের কাছে শুনেছি চুরি, ছিনতাই মাঝে মধ্যে হয়ে থাকে। তবে ঘোপাল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র হওয়ার পর চুরি, ছিনতাই অনেকটাই কমে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।